কুড়িগ্রামে চরম দুর্ভোগে চরাঞ্চলের বন্যাকবলিত মানুষ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম

ছবি: বণিক বার্তা

চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে কুড়িগ্রামের বন্যাকবলিত চরাঞ্চলের মানুষের। নতুন চরে বসত গড়া পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা ও ঘরের মাচান উঁচু করে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তারা। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে দুরবর্তী উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন।

সরেজমিনে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চর বালাডোবা ও মুসার চর ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার প্রায় শতাধিক পরিবার বন্যাকবলিত। এসব পরিবারের কেউ নৌকায় আবার কেউ ঘরের ভেতর উঁচু করা মাচানে বসবাস করছেন। তাদের পালিত গরুসহ অন্যান্য গবাদি পশুগুলোকেও রাখা হয়েছে ঘরের ভেতর উঁচু জায়গায়। অনেক পরিবার তাদের গবাদিপশু নৌকায় করে উঁচু জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন।

বেগমগঞ্জের পূর্ব বালাডোবার চরে ৫ দিন আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া কন্যা সন্তান নিয়ে নৌকায় অবস্থান করছেন মনছুর আলীর স্ত্রী মাজেদা বেগম। তিনি জানান, সন্তান জন্ম দেয়ার দুইদিন পর তার ঘরে পানি উঠেছে।

উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা চরের মনসুর আলী বলেন,পানি বাড়ছে। ঘরের ভেতর কোমর পানি। আর থাকা যাচ্ছে না। গরুসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নৌকায় করে উচু জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মতিয়ার রহমান জানা, যাওয়ার জায়গা নেই বলে কষ্ট হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী চর ভেঙে সেখানে এসেছেন তিনি। ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ায় তার ঘরে পানি ওঠেছে। পানি আর একটু বাড়লে থাকা যাবে না।

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নদ-নদীর অববাহিকার চর ও নিম্নাঞ্চল। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অন্তত ১৫ হাজারের বেশি পরিবার।

উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মতো তলিয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার মশালের চরসহ নতুন জেগে উঠা চরগুলো। এসব চরের মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে অবস্থান করছেন নৌকায় ঘরের উঁচু মাচানে।

বন্যাকবলিত এসব মানু জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে পানি বাড়ছে। গত তিনদিন ধরে তাদের ঘরে পানি ঢুকছে।  অনেকটা অনাহারেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন।

অন্যদিকে, নদ-নদীর অববাহিকার সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুড়িগ্রামের তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ১৭৬ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন