পঞ্চাশেই চলে গেলেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

অকালেই চলে গেলেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান দাবাড়ু গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। খেলতে খেলতেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। গতকাল বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনে জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতার ১২তম রাউন্ডে দেশের আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবের বিপক্ষে খেলা চলার সময় বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে লুটিয়ে পড়েন জিয়াউর। পরে হাসপাতালে নেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি তাকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা গেছেন জিয়া।

জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়সহ সেখান থাকা আরো অনেকেই এগিয়ে এসে তাকে তুলে ধরেন। খুব দ্রুতই তাকে শাহবাগের ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দাবা ফেডারেশন থেকে হাসপাতালে পৌঁছাতে ৯-১০ মিনিট সময় লাগে। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা দ্রুতই তাঁর চিকিৎসা শুরু করেন। তবে কোনো লাভ হলো না। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তার পালস খুঁজে পাননি। 

বাবা পয়গাম উদ্দিন আহমেদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জিয়াও দাবায় আসেন। ১৯৭৪ সালের ১ মে জন্ম নেয়া জিয়ার দাবার সঙ্গে সখ্য ছোটবেলা থেকেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃ-বিজ্ঞানে পড়াশোনা করা জিয়া ক্যারিয়ার হিসেবে দাবাকেই বেছে নেন। ১৯৮৭ সালে আন্তর্জাতিক রেটিং লাভ করার পর ১৯৯০ সালে ফিদে মাস্টার, ১৯৯৩ সালে আন্তর্জাতিক মাস্টার ও ২০০২ সালে গ্র্যান্ডমাস্টার হন। 

ছেলে তাহসিন তাজওয়ারকেও দাবাড়ু বানিয়েছেন জিয়া। তাহসিন এখন ফিদে মাস্টার। দাবাড়ু পরিবারের সন্তান জিয়া দাবা খেলতে খেলতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন। যদিও তার চলে যাওয়া বড় অসময়ে। কারণ জিয়ার বয়স মাত্র ৫০ বছর। 

চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করলেও জিয়ার স্ত্রী তাসমিন সুলতানা লাবণ্য তা কিছুতেই মানতে পারছিলেন না। তিনি অন্য হাসপাতালে নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করছিলেন। তখন ফেডারেশন ও অন্য দাবাড়ুরা তাকে কয়েক দফা বোঝান। ১ ঘণ্টা পর তিনি ও তার পরিবার আশ্বস্ত হলে ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়।

গ্র্যান্ড মাস্টার জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাতে সরকারপ্রধানের দপ্তর থেকে জানানো হয়, কৃতী এ দাবাড়ুর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

গ্র্যান্ড মাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবসহ বাংলাদেশের শীর্ষ দাবাড়ুরা জিয়ার মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ। যার বিপক্ষে খেলছিলেন সেই রাজীব সংবাদমাধ্যমকে বলছিলেন, ‘আমি কিছু বুঝতে পারছি না, কিছু বলতে পারছি না। জিয়া ভাইয়ের সঙ্গে কেন যেন আজ কোনো কথাই হলো না আমার। জিয়া ভাই খেলা শুরুর আগে হাত মেলালেন, এর পরই খেলা শুরু হয়ে যায়। আমরা খেলায় মন দিই। আড়াই ঘণ্টা চলার পর হঠাৎ খেয়াল করি, জিয়া ভাই একটু নিচু হয়ে গেছেন। কী হয়েছে, দেখার জন্য আমি চেয়ার থেকে উঠতেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। অবিশ্বাস্য লাগছে। আমাকে খুব স্নেহ করতেন তিনি। গ্র্যান্ড মাস্টার হওয়ার সময় তার অনেক সহযোগিতা পেয়েছিলাম। গত বছর হাংজু এশিয়ান গেমসেও একসঙ্গে গিয়েছিলাম। তিনি আমার রুমমেট ছিলেন। সেসব এখন শুধুই স্মৃতি।’

বাংলাদেশের প্রথম গ্র্যান্ড মাস্টার নিয়াজ মোরশেদ কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘আমার খুব স্নেহের এক ছোট ভাইকে হারালাম। জিয়ার মৃত্যু এ দেশের দাবারই শুধু নয়, ক্রীড়াঙ্গনেরই বিরাট ক্ষতি। বড় অসময়ে চলে গেল জিয়া।’


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন