সিঙ্গাপুর জাপান যুক্তরাষ্ট্র শ্রীলংকা যুক্তরাজ্য চীন থেকে বেশি সাড়া পাচ্ছি

ছবি : বণিক বার্তা

অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট নিয়ে আমরা নন-রেসিডেন্ট ডিমান্ড ডিপোজিট, নন-রেসিডেন্ট টার্ম ডিপোজিট এবং ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের অধীনে ডিমান্ড ও টার্ম ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট চালু করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী আমরা সর্বোচ্চ মুনাফার হার প্রদান করছি। যেমন: ছয় মাসে ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ হারে মুনাফা দিচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা প্রবাসীদের থেকে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। প্রায় প্রতিদিনই অনেক নিবাসী এবং অনিবাসী গ্রাহক অফশোর ব্যাংকিং প্রডাক্ট সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। এ পর্যন্ত আমরা ২ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছি এ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। আশা করছি, শিগগিরই আরো ১০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে পারব। একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে আমাদের সঙ্গে হিসাব চালু করেছে এবং আরো বেশকিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সিঙ্গাপুর, জাপান, ইউএসএ, শ্রীলংকা, যুক্তরাজ্য ও চায়না থেকে এখন পর্যন্ত বেশি সাড়া পাচ্ছি।

প্রবাসীদের কাছে অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট জনপ্রিয় করে তুলতে এবং বিদেশী ও প্রবাসীরা যেন দেশের বাইরে থেকে সহজে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন, সেজন্য মেঘনা ব্যাংকের ওয়েবসাইটে এডিটেবল অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফরম আপলোড করা হয়েছে। সেটি পূরণ করে নির্ধারিত ই-মেইল অ্যাড্রেসে পাঠিয়ে দিলে আমরা অ্যাকাউন্ট খুলে দেব। গ্রাহকরা তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও ই-মেইল অ্যাড্রেসে পাঠিয়ে দিতে পারবেন। আমরা অ্যাকাউন্ট খুলে, অ্যাকাউন্ট নম্বর গ্রাহকের ই-মেইল অ্যাড্রেসে পাঠিয়ে দেব। পাশাপাশি আমাদের ওয়েবসাইটে অফশোর ব্যাংকিং সংক্রান্ত Frequently Asked Questions আপলোড করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত সেবা দেয়ার জন্য আমাদের হেড অফিসে ডেডিকেটেড টিমও গঠন করা হয়েছে। এছাড়া আমরা গ্রাহকদের অবগত করার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেব। গ্রাহকদের এসএমএস ও ই-মেইলের মাধ্যমে অফশোর ব্যাংকিং প্রডাক্ট সম্পর্কে জানানো হবে। ভবিষ্যতে দেশে-বিদেশে অফশোর ব্যাংকিং-সংক্রান্ত রোড শো করার প্ল্যানও আমাদের আছে। প্রাথমিকভাবে আমরা দুই মাসের মধ্যে ২০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।

গত ১০ বছরে আমাদের জিডিপি ২০০ বিলিয়নের ওপরে বেড়ে তা এখন ৪৬০ বিলিয়ন প্লাস ইকোনমি। ব্যাংকিং সেক্টর এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। কভিড মহামারীর মতো সময়ে ব্যাংকিং লেনদেন চালু ছিল, যখন সবকিছু বন্ধ ছিল। শুধু তাই না, প্রণোদনার মাধ্যমে ছোট-বড় ব্যবসাকে চালু রাখতে ব্যাংকগুলোর অবদান ভুলে যাওয়ার নয়। কোনো বিদেশী ব্যাংক গত ৫০ বছরের ইতিহাসে বলতে পারবে না বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক পেমেন্ট ফেইল করেছে। শুধু মেঘনা ব্যাংকের কথা যদি বলি, আমাদের এক দশকের পথচলায় কোনো ডিপোজিটরকে চেক উপস্থাপনের পর পেমেন্ট করিনি তার রেকর্ড নেই। এলসি সেটলমেন্টে একদিন দেরি করেছি, আমাদের বিদেশী পার্টনার ব্যাংকগুলো বলতে পারবে না। গত পাঁচ বছরে আমরা যা নতুন লোন দিয়েছি এক টাকাও খেলাপি হয়নি। 

বর্তমানে আমাদের ব্যাংকের আরএফসিডি হিসাবে প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলার জমা আছে। গ্রাহকদের আরএফসিডি অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে অবহিত করার জন্য আমরা আমাদের প্রতিটি শাখার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি, যেন গ্রাহকদের মাঝে আরএফসিডি অ্যাকাউন্টে তাদের সংগৃহীত ফরেইন কারেন্সি জমা করার প্রতি সচেতনতা বাড়াতে পারেন। এছাড়া আমরা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ নিয়ে বিজ্ঞাপন দিচ্ছি।

ডলার সংগ্রহের ক্ষেত্রে অফশোর ব্যাংকিং শুরুতে কম হলেও সময়ের সঙ্গে এর সম্ভাবনা অপার। পাকিস্তানে এক্ষেত্রে তাদের রোশান ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট বেশ ভূমিকা রাখছে। স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের এ প্রজেক্টে দেশটির কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো অংশগ্রহণ করছে। এ অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে পাকিস্তানের একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা অ্যাকাউন্ট ওপেন থেকে শুরু করে পাকিস্তান ও এর বাইরে ফান্ড ট্রান্সফার, এমনকি পুঁজিবাজারে ইনভেস্টমেন্ট পর্যন্ত করতে সক্ষম। রোশান ডিজিটাল অ্যাকাউন্টটি মূলত ক্লাউড বেজড টেকনোলজি, যা অনলাইনে যেকোনো দেশ থেকে কার্যকর। এর সিকিউরিটি ফিচারগুলোর মধ্যে টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ও এনক্রিপশন উল্লেখযোগ্য। 

রেমিট্যান্স ও অফশোর আমানত বাড়াতে বাংলাদেশেও এ ধরনের অ্যাপের বিকল্প নেই। তবে অ্যাপের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর প্রায়োগিক দিক, সেফটি ও সিকিউরিটি ফিচার—কীভাবে একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধাকে আমরা এ অ্যাপের আওতায় নিয়ে আসব বা কেন তিনি এ অ্যাপ ব্যবহার করবেন, সেটি নিশ্চিত করা। 

দেশে ডলার সংকটের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এখন তা অনেক ভালো অবস্থানে আছে। সরকারের বিভিন্ন ফলপ্রসূ পদক্ষেপের ফলে আশা করা যাচ্ছে, এ বছরের শেষে আমরা এ সংকট পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন