বিদেশীদের আমানত পেতে হলে ‌‘কান্ট্রি রেটিং’ নিয়ে কাজ করতে হবে

ছবি : বণিক বার্তা

আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো সীমিত পরিসরে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিস্তৃতি হয়েছে গত এক দশকে। তবে ডলার সংকটের প্রভাবে গত দুই বছরে অফশোর ব্যাংকিংয়ের সম্পদের আকার সংকুচিত হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ দেশের ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিংয়ের সম্পদের আকার প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার ছিল। এখন তা ৭-৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এতদিন অফশোর ব্যাংকিংয়ের তহবিল আনার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের ওপর নির্ভর করতাম। বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত বেশি সুদ পাওয়ায় ওই প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের তহবিল দিত। কিন্তু গত দুই বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে সুদহার বেশ চড়া। এ কারণে আমরা চাইলেও অফশোর ব্যাংকিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল সংগ্রহ করতে পারিনি। এক্ষেত্রে ‘কান্ট্রি রেটিং’-এর ভূমিকাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মুডি’স, পিচ, এসঅ্যান্ডপির মতো আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের রেটিং অবনমন করেছে। বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো তহবিল দেয়ার ক্ষেত্রে কান্ট্রি রেটিং দেখে। এজন্য অফশোর ব্যাংকিংকে জনপ্রিয় করতে হলে অবশ্যই কান্ট্রি রেটিংয়ে উন্নতি ঘটাতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাই মুখ্য। 

অফশোর ব্যাংকিং আইন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অফশোর ব্যাংকিংয়ের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। এখন দেশের ব্যাংকগুলো প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাশাপাশি বিদেশী ব্যক্তির কাছ থেকে মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। নতুন এ প্রডাক্টকে আকর্ষণীয় করতে সাড়ে ৮ শতাংশের কাছাকাছি সুদহার ঘোষণা করা হয়েছে। এ সুদও পাওয়া যাবে বৈদেশিক মুদ্রায়। আমানতের সুদকে সরকার সম্পূর্ণ করমুক্ত আয় ঘোষণা করেছে। বিশ্ববাজারের সুদহারের তুলনায় এসব ঘোষণা বেশ আকর্ষণীয়। বিশ্বের যেকোনো স্থানে বসেই অফশোরের ব্যাংক হিসাব খোলার পাশাপাশি পরিচালনা করা যাবে। আশা করছি, প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাশাপাশি বিদেশীরাও এ সুযোগ গ্রহণ করবেন।

প্রডাক্টটির প্রচারণায় এখন পর্যন্ত প্রবাসীদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্ন এসেছে, সেটি হলো ‘সময়মতো ডলার ফেরত পাব কিনা’। এ প্রশ্নের উত্তর দেয়াই আমাদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের ব্যাংক খাত নিয়ে যেকোনো নেতিবাচক সংবাদ প্রবাসীদের মনে সংশয় তৈরি করে। বিদেশীরা এসব সংবাদের চেয়ে কান্ট্রি রেটিং বড় করে দেখে। অফশোর ব্যাংকিংকে জনপ্রিয় করে তুলতে হলে প্রবাসীদের মনে থাকা সংশয় দূর করার পাশাপাশি কান্ট্রি রেটিং বাড়ানোয় মনোযোগ দিতে হবে। বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল না হলে ডলার আসবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা আমলে নিয়ে আমরা এরই মধ্যে মেয়াদি, চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাব চালু করেছি। এর মধ্যে মেয়াদি আমানতের জন্য চালু করা হয়েছে ‘এমটিবি অফশোর ব্যাংকিং আইবি অ্যাকাউন্ট’, সঞ্চয়ী হিসাবের জন্য ‘এমটিবি অফশোর ব্যাংকিং সেভিংস অ্যাকাউন্ট’ এবং চলতি হিসাবের জন্য ‘এমটিবি অফশোর ব্যাংকিং কারেন্ট অ্যাকাউন্ট’। এর মধ্যে সঞ্চয়ী হিসাব ও চলতি হিসাবের বিপরীতে কোনো মুনাফা পাওয়া যাবে না। মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা দেয়া হবে।

প্রবাসী বাংলাদেশী ও বিদেশীদের অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হিসাব খোলার জন্য আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের তথ্য সংগ্রহ করছি। অফশোর ব্যাংকিংকে জনপ্রিয় করে তুলতে হলে বাংলাদেশী দূতাবাস ও হাই কমিশনগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।   

অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত রাখতে প্রবাসী ও বিদেশীদের নিজ উদ্যোগে ভালো ব্যাংক খুঁজে নিতে হবে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের রয়েছে দেশসেরা পরিচালনা পর্ষদ। এ ব্যাংকের করপোরেট গভর্ন্যান্স খুবই ভালো। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দিক থেকেও আমরা সর্বোত্তম চর্চা করছি। আমাদের ব্যাংকের রয়েছে সর্বোচ্চ ক্রেডিট রেটিং। গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় এমটিবির রয়েছে দীর্ঘদিনের সুনাম। গ্রাহক আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে আমরা ব্যাংকের এসব সুনাম-সুখ্যাতি কাজে লাগাতে চাই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন