বিলিয়ন ডলার সংগ্রহের লক্ষ্যে কাজ করছি

ছবি : বণিক বার্তা

দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যক্রম সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত। দেশের সবচেয়ে বেশি রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স আসে আমাদের ব্যাংকের মাধ্যমে। প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের প্রথম পছন্দ ইসলামী ব্যাংক। অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রেও আমরা প্রবাসীদের সঙ্গে স্থাপিত এ সম্পর্ক কাজে লাগাতে চাই। এরই মধ্যে আমাদের চালু করা প্রডাক্ট প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বেশকিছু হিসাবও খোলা হয়েছে, আরো কিছু হিসাব খোলার আবেদন জমা আছে। চালু করা হিসাবগুলোর বিপরীতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা জমা হয়েছে। অচিরেই এর পরিমাণ বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে, যা বাংলাদেশের রিজার্ভ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকা প্রবাসীদের থেকে বেশি সাড়া পাচ্ছি আমরা। আশা করছি, এককভাবে বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করতে পারব অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সার্কুলারের মাধ্যমে ১৯৮৫ সালে দেশে অফশোর ব্যাংকিং চালু হয়। মূলত রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) অধিকতর অর্থায়নের সুযোগ তৈরির জন্যই এটি চালু করা হয়েছিল। ইসলামী ব্যাংক ২০১১ সাল থেকে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম করে আসছে। বর্তমানে আমাদের তিনটি শাখা থেকে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা বিবেচনায় আমরা তিন ধরনের অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে আসছি। যেমন: আল-ওয়াদিয়াহ ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, মুদারাবা ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট ও মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিপ্ট অ্যাকাউন্ট। বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিক, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিদেশী নাগরিক, বিদেশে নিবন্ধিত ও কার্যক্রম পরিচালনাকারী কোম্পানি কিংবা ফার্ম এসব অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।

সম্প্রতি অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম আরো প্রসারের লক্ষ্যে অফশোর ব্যাংকিং আইন ২০২৪ জারি করা হয়। এ আইনের আওতায় দেশে বসবাসরত বাংলাদেশী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, যাদের বিদেশী কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে তাদেরও অফশোর অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে মুদারাবা ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট চালু করেছি। এক্ষেত্রেও আমরা মুদারাবা সিস্টেমে প্রাক্কলিত মুনাফা দিয়ে থাকি। মুদ্রাভেদে আমানতের মেয়াদের ভিত্তিতে বেঞ্চমার্ক রেফারেন্স রেটের সঙ্গে ১ দশমিক ৫০ থেকে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রাক্কলিত মুনাফা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে মোট মুনাফার হার ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাশাপাশি বিদেশীদের কাছেও আমরা মুদারাবা ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাংক হিসাবে জমাকৃত আমানতে যে মুনাফা পাওয়া যাবে, সেটি বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। এরই মধ্যে জার্মানি, সাইপ্রাস, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশের নাগরিক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে আমরা তাদের তথ্য সরবরাহ করেছি। আশা করি, শিগগিরই বিদেশীদের হিসাব খোলার বিষয়েও ভালো সাড়া পাব।

অফশোর ব্যাংকিংয়ে হিসাব জনপ্রিয় করে তুলতে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা আমাদের ব্যাংকের নিয়োজিত প্রতিনিধিরা কাজ করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে আমিসহ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন নির্বাহীরা বিভিন্ন দেশ সফর করেছি। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অফশোর ব্যাংকিংয়ের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রধান কার্যালয়, অঞ্চল ও শাখা পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ গ্রাহকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে প্রডাক্টটি পরিচিত করার পাশাপাশি হিসাব খোলার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। গ্রাহকরা যাতে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে এবং ঘরে বসে ইসলামী ব্যাংকের নিজস্ব ওয়েবসাইট ব্যবহার করে স্বল্প সময়ে ঝামেলাহীনভাবে হিসাব খুলতে পারেন, সে ব্যবস্থাও করছি।

অপপ্রচার সত্ত্বেও ব্যাংক খাতের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত অর্থবছরে প্রবাসীরা ব্যাংক খাত ব্যবহার করে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মাধ্যমে। এটি ব্যাংক খাতের প্রতি প্রবাসীদের আস্থার বহিঃপ্রকাশ। আশা করছি, অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসীরা তাদের সঞ্চয় আমানত হিসেবে রাখতেও ইসলামী ব্যাংককেই বেছে নেবেন। 

বিদেশফেরত বাংলাদেশীদের জন্য ইসলামী ব্যাংকে আরএফসিডি হিসাব খোলার সুযোগ রয়েছে। প্রতিবার বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর এ হিসাবে ১০ হাজার ডলার জমা রাখা যায়। এ ধরনের জমাকৃত আমানতের বিপরীতেও আমরা আকর্ষণীয় হারে মুনাফা দিচ্ছি। তবে আরএফসিডি ব্যাংক হিসাবের বিষয়ে প্রবাসীদের মধ্যে প্রচারণা কম। অনেক প্রবাসী সঙ্গে করে নিয়ে আসা ডলার বা বিদেশী মুদ্রা নিজের ঘরে রাখেন। ডলার ঘরে রাখলে সেটি কোনো মুনাফা বয়ে আনে না। আবার দেশও সে ডলার থেকে কোনো উপকার পায় না। বাংলাদেশ ব্যাংক আরএফসিডি ব্যাংক হিসাবের নীতিমালা অনেক উদার করে দিয়েছে। প্রডাক্টটিকে জনপ্রিয় করে তুলতে ‘আপনার বৈদেশিক মুদ্রা ঘরে নয় ব্যাংকে রাখুন, মেয়াদান্তে আকর্ষণীয় মুনাফা ভোগ করুন’—এ স্লোগান নিয়ে আমরা কাজ করছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন