অফশোর ব্যাংকিং জনপ্রিয় করে তুলতে বিদেশে রোড শো করব

ছবি : বণিক বার্তা

অফশোর ব্যাংকিং আইন ২০২৪ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনের আলোকে আমাদের ব্যাংকে এরই মধ্যে প্রডাক্ট চালু করেছি। বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ডিপোজিট সংগ্রহে দুই ধরনের প্রডাক্ট আছে। একটি হচ্ছে অনিবাসী এফসি হিসাব, যেকোনো অনিবাসী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আমাদের ওবিইউতে এ হিসাব খুলতে পারবেন। আরেকটি হচ্ছে নিবাসী ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিং হিসাব, যা যেকোনো নিবাসী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ফরেন রেমিট্যান্স আনয়নের মাধ্যমে সহায়তাকারী (Facilitator) হিসেবে এ হিসাব খুলতে এবং পরিচালনা করতে পারবেন। মার্কিন ডলার, ব্রিটিশ পাউন্ড, ইউরো, চায়নিজ ইউয়ান, জাপানি ইয়েনে হিসাব খোলা যাবে। মেয়াদি আমানত হিসাবের মেয়াদ ৩, ৬, ১২, ২৪, ৩৬, ৪৮ ও ৬০ মাস। এছাড়া গ্রাহকরা আল-ওয়াদিয়া কারেন্ট হিসাব খুলতে পারবেন, যা মুনাফাবিহীন। স্থায়ী আমানতে, মেয়াদ ও মুদ্রাভেদে আকর্ষণীয় মুনাফা দেয়া হবে। মুনাফার হার মার্কিন ডলারের বিপরীতে মুদারাবা নীতিতে আনুমানিক সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।  

অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসীদের পাশাপাশি যেকোনো অনিবাসী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তথা বিদেশী নাগরিক বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খুলতে পারেন। তাদের সুবিধার জন্য বিদেশে বসেই অনলাইন পোর্টালে নিজেদের তথ্য বা ডকুমেন্ট প্রদান করে এ হিসাব খোলা যাবে। আশা করি, এ সুবিধা গ্রহণ করে বিদেশীরাও সহজে হিসাব খুলতে পারবেন এবং আমাদের বৈদেশিক মুদ্রায় ডিপোজিট বাড়বে।

ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ হিসাবের সুবিধাগুলো সম্পর্কে প্রচারণা চালাচ্ছি। অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে হিসাব খোলার বিষয়টি কীভাবে আরো সহজলভ্য করা যায় সে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামীতে সম্ভাবনাময় কিছু দেশে রোড শোর মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি, অফশোর ব্যাংকিং সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি এবং এফসি হিসাব খোলা তথা ডিপোজিট সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিদেশ থেকে অফশোর অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত এর পরিমাণ উল্লেখযোগ্য না হলেও দিন দিন বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও আমেরিকা থেকে বেশি সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে আমরা এ হিসাবে ২৫ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।

প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাংকিং খাত তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সফলতার খবরগুলো প্রচার করা প্রয়োজন। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সংকটময় সময়ে দেশের ব্যাংক খাতসহ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করে এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আমরা এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের সঙ্গে ব্যাংকিং সেবা নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছি এবং ভবিষ্যতে এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখব। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অফশোর ব্যাংকিং-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। দেশের অন্য ব্যাংকগুলোও প্রডাক্টটিকে জনপ্রিয় করে তুলতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এক একটি ব্যাংক ২৫০ থেকে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে পারলে অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৫-২০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ সম্ভব। এর মাধ্যমে দেশের সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়নে অফশোর ব্যাংকিংয়ের অংশগ্রহণ আরো বাড়বে। দেশের ডলার সংকট কেটে যাওয়ার পাশাপাশি রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় উন্নীত হবে।

দেশে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে আরএফসিডি নামে বহু আগে থেকে একটি প্রডাক্ট চালু আছে। এ হিসাব খোলা এখন হাতের নাগালে। বিদেশ ভ্রমণ শেষে হাতে থাকা ডলার দিয়ে হিসাব খুলে মুনাফা অর্জন সম্ভব। তাছাড়া ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড জমা দিয়েও এ হিসাব খোলা যায়। জমাকৃত অর্থ ভ্রমণ, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি কারণে বিদেশে স্থানান্তরকরণ, বিদেশে ভ্রমণের জন্য সহজে পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্ট, নিজের জন্য একটি ও দুজন নির্ভরশীলের জন্য আন্তর্জাতিক কার্ড (ডেবিট বা ক্রেডিট কিংবা প্রিপেইড) ইস্যুর সুযোগ রয়েছে। আরএফসিডি  হিসাবের সুযোগ-সুবিধাগুলো নতুনভাবে শাখা পর্যায়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বিদেশফেরত অব্যবহৃত ডলার ব্যাংকের আরএফসিডি হিসাবে জমা হওয়া শুরু হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ব্যাংক খাতে ডলারের জোগান বাড়বে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন