এমআইটিডি হিসাব নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী

ছবি : বণিক বার্তা

অফশোর ব্যাংকিং নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। কারণ প্রতিদিন আমাদের ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় আগ্রহীরা এ হিসাব খোলার ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছেন। অনেকে বিদেশ থেকে ই-মেইল কিংবা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে হিসাব খোলার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এসব হিসাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা জমাও হয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে আমরা গ্রাহকদের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় বিভিন্ন মেয়াদি হিসাব চালু করেছি, যেটি মুদারাবা ইন্টারন্যাশনাল টার্ম ডিপোজিট (এমআইটিডি) নামে পরিচিত। গ্রাহকরা এখন চাইলে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে আমাদের ব্যাংকে ডলার, ব্রিটিশ পাউন্ড ও ইউরোয় হিসাব খুলতে পারবেন। অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার, সুইস ফ্রাঁ, চায়নিজ ইউয়ান ও সিঙ্গাপুর ডলারে হিসাব খোলার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। হিসাবধারীরা বিভিন্ন মেয়াদে, যেমন তিন মাস থেকে শুরু করে এক বছর, দুই বছর, এমনকি সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করতে পারবেন। আর এসব গ্রাহক পাবেন সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ মুনাফা, যা হবে সম্পূর্ণ আয়করমুক্ত।

প্রবাসী ছাড়াও যেকোনো বিদেশী নাগরিকের এ হিসাব চালু করার সুযোগ রয়েছে। দেশ-বিদেশে নিবন্ধিত ও পরিচালিত প্রতিষ্ঠান, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, অনিবাসীর পক্ষে সুবিধাভোগী নিবাসী বাংলাদেশীর জন্যও এ সুযোগ রাখা হয়েছে। বেশকিছু বিদেশী নাগরিক ও প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। পাশাপাশি আমরা বিদেশে এবং আমাদের দেশে নিবন্ধিত বিদেশী প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, হাইটেক পার্ক, বিভিন্ন দেশের কনসুলেট ও দূতাবাসে এ হিসাব খোলার পক্ষে জোরালো প্রচার চালাচ্ছি। আশা করি শিগগিরই আমরা উল্লেখযোগ্য বিদেশী নাগরিকের হিসাব চালু করতে পারব। কারণ আমরা সৌদি আরব ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ভালো সাড়া পাচ্ছি। এরই মধ্যে সৌদি আবর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে এ বিষয়ে আমরা গ্রাহক সমাবেশ করেছি। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন ও মালয়েশিয়ায় গ্রাহক সমাবেশ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। 

অফশোর ব্যাংকিং হিসাব জনপ্রিয় করে তুলতে আমরা গ্রাহকদের বিভিন্ন মেয়াদে আকর্ষণীয় মুনাফা দিচ্ছি। একজন গ্রাহক চাইলে এ হিসাবের স্থিতি মুনাফাসহ বিদেশে নিয়ে যেতে পারবেন। আবার চাইলে দেশে অনশোরে গ্রাহকের ব্যাংকের শাখায় টাকায় স্থানান্তর করে নিজের মতো বিনিয়োগ ও ব্যয় করতে পারবেন। এছাড়া হিসাবধারী ব্যক্তিকে ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রায়োরিটি ব্যাংকিং সেবা এবং শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার ভেতরে পরিবহন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়া হবে।

তবে এ ধরনের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে কত ডলার সংগ্রহ করা যাবে, তা বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে। এর মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনীতি, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ, টেকসই প্রবৃদ্ধি ও প্রবাসীদের আর্থিক পরিস্থিতির মতো বিষয় রয়েছে। তবে আমার বিশ্বাস, ওই হিসাবে আমরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করতে পারব।

বাংলাদেশে বসবাসকারী নাগরিকদের জন্য আরএফসিডি নামে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব পরিচালনার সুযোগও রাখা হয়েছে। আমাদের ব্যাংকে এ হিসাবের স্থিতি সন্তোষজনক। তবে আমরা আরো ভালো করব বলে আশা রাখি।

বিদেশ থেকে আসার পর গ্রাহকরা তার হাতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা আরএফসিডি অ্যাকাউন্টে জমা রাখার সুবিধা পাচ্ছেন। আমাদের ব্যাংক এ হিসাবের স্থিতির ওপর গ্রাহকদের আকর্ষণীয় মুনাফা দিয়ে থাকে। এ হিসাবের অর্থ দিয়ে গ্রাহক নিজের এবং নির্ভরশীল সদস্যদের বিদেশ ভ্রমণ, শিক্ষা ও চিকিৎসা খরচসহ অন্যান্য অনুমোদিত ব্যয় নির্বাহের সুবিধা পাবেন। হিসাবধারী এবং তার ওপর নির্ভরশীল দুজন সদস্যের নামে আমরা আরএফসিডি কার্ডও প্রদান করছি। গ্রাহকরা প্রয়োজনে অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স নগদায়নেরও সুযোগ পাচ্ছেন।

এর বাইরে প্রবাসীদের জন্য ‘রোশান ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট’ নামে একটি অফশোর ব্যাংকিং হিসাব রয়েছে। পাকিস্তান ২০২১ সালে নন-রেসিডেন্ট পাকিস্তানিদের জন্য এ হিসাব চালু করে। আমরা যদি প্রবাসীদের মধ্যে আমাদের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিং (আইবি) হিসাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে পারি এবং এর সুযোগ-সুবিধা ব্যাপক পরিসরে প্রচার করতে পারি, তাহলে আমরা ভালো পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করতে পারব।

অনেকেই মনে করেন প্রবাসীদের মধ্যে দেশের ব্যাংক খাত নিয়ে আস্থার সংকট আছে। কিন্তু আমরা অতি সম্প্রতি সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যবসায়িক সফর করেছি। সেখানকার বাংলাদেশী কমিউনিটিগুলোয় গ্রাহক সমাবেশ করেছি। সমাবেশে ব্যবসায়িক নেতাদের পাশাপাশি সাধারণ গ্রাহকদের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। অনেকে আমাদের ব্যাংকের এসআইবিএল নাউ অ্যাপ ব্যবহার করে হিসাবও খুলেছেন। আমরা ব্যাংক খাত নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে কোথাও কোনো আস্থার সংকট দেখিনি। বরং আনন্দের খবর হলো প্রবাসীরা গত ছয় মাসে আমাদের ব্যাংকে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। প্রবাসীদের আরো বেশি রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছি। ফলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ আমরা ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আহরণ করতে পারব বলে আশা করছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন