অফশোর ব্যাংকিংয়ে আমানত সংগ্রহ ডলার সংকট কাটাতে সাহায্য করবে

ছবি : বণিক বার্তা

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানান চ্যালেঞ্জে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নেই। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় স্থায়ী আমানত সংগ্রহ ও দেশে স্বজনের মাধ্যমে হিসাব পরিচালনার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। যা চলমান ডলার সংকট কাটাতে সাহায্য করবে। 

চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে এসবিএসি ব্যাংক ২০২১ সালে অফশোর ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম শুরু করে। অফশোর ব্যাংকিংয়ের আয় করমুক্ত হওয়ায় এ পরিষেবার প্রতি ব্যাংকগুলোর বাড়তি আকর্ষণ ছিল। আর চলতি বছরের ৫ মার্চ জাতীয় সংসদে অফশোর ব্যাংকিং বিল ২০২৪ পাস হওয়ায় এর পরিধির ব্যাপক প্রসার ঘটছে। আমাদের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে বৈদেশিক বাণিজ্যে লেনদেন এবং আমানত, বৈদেশিক মুদ্রা (এনএফসিডি, আরএফসিডি ও এফসি) হিসাব চালু রয়েছে। গ্রাহকদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্থায়ন, ইপিজেড ও হাইটেক পার্কে অবস্থিত টাইপ-এ শিল্প ইউনিটগুলোয় আমদানি-রফতানি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে মেয়াদভেদে মুনাফার হার ৬ দশমিক ৮৮ থেকে ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ দেয়া হচ্ছে।

ব্যাংকিং পরিষেবা কোনো নির্দিষ্ট দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক বাণিজ্য সংঘটিত হচ্ছে। এ সুযোগে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ব্যাংকিং সেবার অপব্যবহার করছে। অর্থ পাচারের মাধ্যম হিসেবে অফশোর ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে, যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কোনো সেবার অপব্যবহার রোধ করতে পারলে তা থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ থাকে। সুতরাং অফশোর ব্যাংকিং আইন যথাযথ পরিপালনে এর সুবিধা অনেক বেশি। এ পরিষেবা বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। কেননা এ সেবার মাধ্যমে যাবতীয় লেনদেন হয় বৈদেশিক মুদ্রায়।

অফশোর ব্যাংকিং আইনে এর সেবার বিষয়ে অত্যন্ত সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যাতে একজন প্রবাসীর ঝামেলামুক্ত ও ঝুঁকিহীনভাবে হিসাব খোলা থেকে শুরু করে অর্থ স্থানান্তরের যাবতীয় বিষয় সন্নিবেশ করা হয়েছে। এ সেবায় মার্কিন ডলার ও ইউরো অ্যাকাউন্ট খুব সহজে খোলা যায়। মুনাফাসহ বিনিয়োগকৃত অর্থ যেকোনো সময়ে ট্রান্সফার করার সুযোগ রয়েছে। অর্জিত আয়ের ওপর কোনো ট্যাক্স প্রদান করতে হয় না। প্রবাসীদের দ্রুত সেবা দেয়ার লক্ষ্যে অনলাইনে অ্যাকাউন্ট খোলা, সঞ্চয়ী হিসাবে মুনাফার হার বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছি।

আমরা প্রবাসীদের সবার্ধিক গুরুত্ব দিয়ে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে থাকি। রেমিট্যান্স আহরণসহ বৈদেশিক বাণিজ্যে এসবিএসি ব্যাংক অবদান রেখে চলেছে। প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ গ্রাহকের হাতের মুঠোয় পৌঁছাতে আমরা বদ্ধপরিকর। রেমিট্যান্সের ওপর সরকারের নগদ ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা রয়েছে; সেটাকে ৫ শতাংশে উন্নীত করলে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে আরো টাকা পাঠাবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রবাসীদের দেশে অবস্থানরত যেকোনো স্বজন ব্যাংকে গিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যাংক হিসাব খুলতে পারেন। প্রবাসী বাংলাদেশী ওই ব্যাংক হিসাবে ডলার পাঠাবেন এবং দেশে থাকা স্বজন ব্যাংক হিসাবটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়া প্রবাসীরা অফশোর ব্যাংকিংয়ে ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। যেকোনো প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যাংকের ওয়েবসাইটে অনলাইনে স্থায়ী আমানত হিসাব খুলতে পারেন। হিসাব খোলার পর যেকোনো মেয়াদে প্রবাসীরা বিদেশী মুদ্রায় আমানত রাখতে পারেন এবং যেকোনো সময় জমাকৃত আমানত মুনাফাসহ যেকোনো দেশে স্থানান্তর করতে পারেন। এ সেবায় ব্যাংক হিসাবে জমাকৃত আমানতের মুনাফার ওপর বাংলাদেশে কোনো কর পরিশোধ করতে হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন