হিসাব খোলা নিয়ে প্রতিনিয়ত ফোন ও ই-মেইল পাচ্ছি

ছবি : বণিক বার্তা

অফশোর ব্যাংকিং হলো ব্যাংকের ভেতরে পৃথক আইনকানুন দ্বারা বৈদেশিক মুদ্রায় পরিচালিত আলাদা এক ব্যাংকিং ব্যবস্থা। বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম বর্তমানে অনেক গুরুত্ব বহন করে বিধায় চলতি বছরের ৫ মার্চ জাতীয় সংসদে ‘অফশোর ব্যাংকিং আইন ২০২৪’ পাস হয়। 

আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৯৮৫ সালের সার্কুলারের ভিত্তিতে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোয় অফশোর ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠিত হয়। বৈদেশিক মুদ্রার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার এবং নিবাসী-অনিবাসীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন সেবা প্রদানের লক্ষ্যে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসি ২০১০ সালের ৪ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মতিপত্র গ্রহণ করে। 

বর্তমানে আমরা অফশোর ব্যাংকিং আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সময়ে সময়ে জারীকৃত নির্দেশনার ভিত্তিতে প্রধান কার্যালয়ের অফশোর ব্যাংকিং ডিভিশনের আওতায় ঢাকায় প্রিন্সিপাল অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট এবং চট্টগ্রামে আগ্রাবাদ অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে অফশোর ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে আসছি।

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চালুকৃত অফশোর ব্যাংকিং প্রডাক্টগুলো হলো এক. ডিপোজিট প্রডাক্ট: সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, স্থায়ী আমানত হিসাব এবং ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিং (আইবি) হিসাব। আমরা মেয়াদ ও প্রকারভেদে আমানতের ওপর সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা প্রদান করি। দুই. লোন প্রডাক্ট: টার্ম লোন, টাইম লোন, ইমপোর্ট বিল ডিসকাউন্টিং, এক্সপোর্ট বিল ডিসকাউন্টিং, ওভারড্রাফট ফ্যাসিলিটিজ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গ্যারান্টি প্রদানসহ প্রয়োজনীয় ঋণসহায়তা।

প্রবাসীদের কাছে অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট জনপ্রিয় করে তুলতে আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ‘অফশোর ব্যাংকিং আইন ২০২৪’-এ প্রদত্ত সুবিধাগুলো বিবৃত করে লিফলেট ছাপিয়ে তা বিভিন্ন দেশে অবস্থিত আমাদের এক্সচেঞ্জ হাউজ ও লন্ডনে অবস্থিত মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে প্রবাসীদের কাছে পৌঁছার ব্যবস্থা করেছি। অফশোর ব্যাংকিং সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য ব্যাংকের ওয়েবসাইট ও সময়ে সময়ে বাংলা ও ইংরেজিতে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছি। 

মার্কেন্টাইল ব্যাংকে কর্মরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সব কর্মকর্তাকে অফশোর ব্যাংকিং আইন এবং এ সম্পর্কিত সব সুবিধা বা অসুবিধা অবহিত করার লক্ষ্যে অফশোর ব্যাংকিং বিভাগ ও আন্তর্জাতিক বিভাগের সমন্বয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মাধ্যমে প্রবাসে তাদের নিকটজনদের কাছে অফশোর ব্যাংকিংয়ের সুবিধাগুলো পৌঁছে দিয়ে আমানত আকৃষ্ট করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। 

বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজারগুলোয় এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে প্রবাসীদের কাছে অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট জনপ্রিয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোয় অন্তর্মুখী বা বহির্মুখী যাত্রীদের অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়ার জন্য অফশোর ব্যাংকিং সুবিধা সম্পর্কিত প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

আইবি হিসাব চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রবাসীদের সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিনই আমরা প্রবাসীদের হিসাব খোলাসংক্রান্ত ফোন ও ই-মেইল পাচ্ছি এবং হিসাব খোলাসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য শেয়ার করছি। এখন পর্যন্ত এ হিসাবে ৫ লাখ ডলার জমা পড়েছে। কিছু হিসাব খোলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রবাসী ছাড়াও এখন পর্যন্ত ১০ জন বিদেশী নাগরিকের হিসাব আমরা খুলতে পেরেছি। 

কানাডা, ইউএসএ, ইংল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই ও কাতার থেকে এখন পর্যন্ত বেশি সাড়া পাচ্ছি। প্রাথমিকভাবে ২০ মিলিয়ন ডলার বা সমমূল্যের অন্য বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।

ভালো পর্ষদ, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও করপোরেট সুশাসনের দিক থেকে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বেশ সুনাম রয়েছে। অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহে আমরা এ সুনামকে কাজে লাগাতে চাই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটির বেশি বাংলাদেশী বসবাস করছে। অভিবাসী অনেক বাংলাদেশীর দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্ম এখন ইউরোপ-আমেরিকায় স্থায়ী হয়ে গেছে। অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত আনার ক্ষেত্রে আমরা সেসব বাংলাদেশীর দেশপ্রেমকে কাজে লাগাতে চাই।

সরকারের পক্ষ থেকে অফশোর ব্যাংকিং আমানতের মুনাফাকে শতভাগ করমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গ্রাহক চাইলে যেকোনো সময় আমানতকৃত অর্থ ডলার কিংবা যেকোনো মুদ্রায় প্রত্যাহার করতে পারবেন। আকর্ষণীয় মুনাফার কারণে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাশাপাশি বিদেশীদের জন্য এটি বিনিয়োগের ভালো সুযোগ। 

বর্তমানে দেশের ৪০টি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং লাইসেন্স রয়েছে। এসব ব্যাংকের মাধ্যমে অফশোর ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনিবাসী বাংলাদেশী ও বিদেশী নাগরিকদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলতে পারলে আগামী দুই বছরে অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার আমানত হিসাবে সংগ্রহ করা অসম্ভব হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন