প্রবাসীদের ডলার প্রিমিয়ার ব্যাংকে শতভাগ নিরাপদ

ছবি : বণিক বার্তা

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার এরই মধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে অফশোর ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম ও সেবার বিস্তৃতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিদেশী বিনিয়োগ ও বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে এটি করা হয়েছে।

আশা করছি, প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাশাপাশি বিদেশী নাগরিকরা অফশোর ব্যাংকিংয়ের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বেছে নেবেন। এ-সংক্রান্ত আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনের আলোকে আমরা প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রডাক্টগুলো ঢেলে সাজিয়েছি। 

ওবিইউ এফসি অ্যাকাউন্ট, ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিং বা আইবি অ্যাকাউন্ট এবং এর জন্য বিভিন্ন মেয়াদের টার্ম ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট প্রডাক্ট চালু করেছি।

অফশোর ব্যাংকিং আমানতের ক্ষেত্রে যে সুদহার ঘোষণা করা হয়েছে সেটি অনেক বেশি আকর্ষণীয়। গ্রাহকের অর্জিত সুদহারকে সম্পূর্ণ ট্যাক্স ফ্রি করা হয়েছে। গ্রাহক যখন চাইবেন, তখনই আমানতকৃত অর্থ ডলার বা অন্য মুদ্রায় স্থানান্তর কিংবা অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগ করতে পারবেন। মেয়াদ অনুযায়ী আমাদের অফশোর আমানত প্রডাক্টগুলোর মুনাফার হার ভিন্ন ভিন্ন। এক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ হারে মুনাফা প্রদান করছি।

প্রবাসীদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি। এরই মধ্যে ওবিইউ এফসি অ্যাকাউন্টে এক মিলিয়ন ডলারের বেশি জমা হয়েছে। আমরা বিভিন্নভাবে অফশোর ব্যাংকিংয়ের সুবিধাগুলো প্রচারের পদক্ষেপ নিয়েছি। বিদেশী নাগরিকদেরও অফশোর ব্যাংকিং হিসাব বা এফসি হিসাব খোলার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিদেশীরা হিসাব না খুললেও বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন।

নেদারল্যান্ডস থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পেরেছি। অচিরেই মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাজ্য, স্পেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারব।

অফশোর ব্যাংকিং হিসাবকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আমাদের ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশের ব্যবস্থা করেছি। তা ছাড়া পত্রিকাসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে আমরা ১০০-১৫০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহের চেষ্টা করছি এবং ক্রমান্বয়ে এ লক্ষ্যমাত্রা বাড়বে।

যেকোনো দেশের ব্যাংক খাতের জন্য জনগণের আস্থা অতীব জরুরি। বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে যেসব চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো কভিড-১৯ সৃষ্ট দুর্যোগ, বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধসহ বৈশ্বিক অস্থিরতার ফল। এতসব সংকটের মধ্যেও প্রিমিয়ার ব্যাংক কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক উন্নতি করেছে। গ্রাহকদের আস্থা, পরিচালনা পর্ষদের দিকনির্দেশনা ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টায় এটি অর্জিত হয়েছে। 

আশা করছি, অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রেও আমরা সফল হব।

বহু আগে থেকেই দেশের ব্যাংকগুলোয় বিদেশফেরতদের জন্য আরএফসিডি হিসাব চালু রয়েছে, তবে প্রচারণার অভাবে প্রডাক্টটি খুব বেশি জনপ্রিয় ছিল না। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরএফসিডি হিসাবে বিদেশী মুদ্রা জমা ও প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আকর্ষণীয় মুনাফা ঘোষণা করেছে। 

ব্যাংকগুলোও এক্ষেত্রে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করায় আরএফসিডি হিসাবে ডলারের স্থিতি দ্রুত বাড়ছে। প্রিমিয়ার ব্যাংকে আরএফসিডি হিসাবের স্থিতি এখন ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি। 

আরএফসিডি হিসাবকে জনপ্রিয় ও উৎসাহ প্রদানের জন্য বিশেষ ইনসেনটিভ দেয়ার সুযোগ রয়েছে। যেমন নির্ধারিত কোনো অংকের ডিপোজিট করলে বিভিন্ন চার্জ মওকুফ, বিমানবন্দরে লাউঞ্জ ব্যবহার ও ফ্রি চার্জে ক্রেডিট কার্ড দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

সম্প্রতি দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশ ভালো। রফতানি খাতও প্রবৃদ্ধির ধারায় রয়েছে। এ কারণে দেশে ডলারের প্রবাহ বেড়েছে। প্রিমিয়ার ব্যাংকে এখন ডলার উদ্বৃত্ত আছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়তে থাকবে।

গত দুই বছরে দেশের অনেক ব্যাংক ডলার সংকটে ছিল। কিছু ব্যাংক নির্দিষ্ট সময়ে এলসি দায়ও পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু প্রিমিয়ার ব্যাংক সংকেটর সময়ও ডলার সংস্থানে ভালো অবস্থানে ছিল। আমরা যথা সময়ে সব এলসি দায় সমন্বয়ে সামর্থ্য হয়েছি। পাশাপাশি উদ্বৃত্ত ডলার দেশের আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে বিক্রিও করেছি। ডলার সংস্থান ও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পরিশোধের এ সুনাম আগামীতেও আমরা ধরে রাখতে চাই। আমরা প্রবাসী বাংলাদেশী ও বিদেশীদের কাছে এ বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে, আপনার ডলার আমাদের কাছে শতভাগ নিরাপদ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন