কেবল দেশপ্রেম দিয়ে ডলার আসবে না, সেবা নিশ্চিত করতে হবে

ছবি : বণিক বার্তা

সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিং বিষয়ে আইন ও নীতিমালা তৈরি করে দিয়েছে। এ ধারার ব্যাংকিং জনপ্রিয় করে তুলতে জারীকৃত আইন ও নীতিমালা যথেষ্ট। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে যথেষ্ট স্বাধীনতাও দেয়া হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকদের কাছে নিজেদের আস্থা বাড়াতে হবে। দেশের বাইরে বসবাসকারী বাংলাদেশী, অনেক আগে অভিবাসী হওয়া বাংলাদেশীদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের কাছে পৌঁছাতে হবে। একই সঙ্গে বিদেশীদের কাছে প্রডাক্টটিকে জনপ্রিয় করে তোলার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এতদিন আমাদের দেশে শুধু ডলার প্রবেশ বাধাহীন ছিল। এখান থেকে বৈধ পন্থায় ডলার নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া ছিল বেশ জটিল ও শর্তসাপেক্ষ। অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ডলার প্রত্যাবাসনের শর্ত তুলে নেয়া হয়েছে। 

প্রবাসীদের মধ্যে দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংক খাত নিয়ে আতঙ্ক আছে। ডলার পাঠালে সেটি প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হবে কিনা, সেটি নিয়েও প্রবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ কাজ করছে। তাদের এ উদ্বেগ দূর করতে হবে। এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগও আছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আয়োজিত সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতও অংশ নেন। এ ধরনের উপস্থিতি প্রবাসীদের মধ্যে আস্থা ফেরাতে সহায়তা করে। অফশোর ব্যাংকিং জনপ্রিয় করে তুলতে হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।

গ্রাহক যখন আসবে, তখন আমাদের দিক থেকে সে অফশোর। কিন্তু তার দিক থেকে সেটি মূলত ডিজিটাল ব্যাংক। যদি ডিজিটাল ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ সেবা ও সুবিধা পান, তবেই গ্রাহকের আস্থা আসবে। অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ডলার আনতে হলে প্রতিটি ব্যাংকের সব ধরনের অ্যাপস থাকতে হবে। সেটি এনরয়েড হোক কিংবা আইএসও। অ্যাপসের মাধ্যমে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবার নিষ্পত্তি হতে হবে। কোনো গ্রাহক যখন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্য থেকে অফশোর অ্যাকাউন্টে ডলার পাঠাবেন, সেটি সঙ্গে সঙ্গে অ্যাপসের ব্যালান্সে দেখাতে হবে। এটি এমন না যে সুইফটের মাধ্যমে ডলার পাঠালাম, আর দুইদিন পরে অ্যাকাউন্টে জমা হবে।

অ্যাকাউন্টে ডলার জমা হওয়ার পর গ্রাহক চাইলে তৎক্ষণাৎ অ্যাপসের মাধ্যমে মেয়াদি আমানত করার সুযোগ থাকতে হবে। অ্যাপসের মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। গ্রাহক যখন দেখবেন, তার অ্যাকাউন্টের ডলার দিয়ে তিনি তৎক্ষণাৎ ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে শেয়ার কেনার সুযোগ পাচ্ছেন, তখন গ্রাহক অফশোর ব্যাংকিংয়ের প্রতি আগ্রহী হবেন।

এ ধরনের লেনদেনের জন্য অনেকগুলো প্রক্রিয়া আছে। অফশোর থেকে নিটা অ্যাকাউন্ট, নিটা থেকে সিকিউরিটিজ হাউজ, সেখানের ব্যালান্স তৎক্ষণাৎ আপডেট হওয়া, সে অর্থে শেয়ার কেনা, এ পুরো প্রক্রিয়াটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটতে হবে। আবার কোনো গ্রাহক যখন শেয়ার বিক্রি করে ডলার প্রত্যাহার করতে চাইবেন, সেটিও তৎক্ষণাৎ পরিশোধ হতে হবে। ডলারে বিনিয়োগ ও প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া যত বেশি সহজ হবে, এক্ষেত্রে গ্রাহক তত বেশি আকৃষ্ট হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, কেবল দেশপ্রেম দিয়ে ডলার আসবে না, এজন্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

সরকার এরই মধ্যে অফশোর ব্যাংকিংয়ের আমানতের মুনাফা ট্যাক্স ফ্রি করে দিয়েছে। তবে আকৃষ্ট করার জন্য আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া যায়। যেমন কেউ ৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি রাখলে তাকে সিআইপি ঘোষণা করা যায়। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের আগ্রহের ভিত্তিতে অফশোর অ্যাকাউন্টের ডলার দিয়ে ট্রেজারি বিল-বন্ড কিনতে পারে। এক্ষেত্রে গ্রাহক আরো বেশি মুনাফা পাওয়ার সুযোগ পাবে। শেয়ারবাজার, রিয়েল এস্টেটের মতো খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়া যেতে পারে। এসব সুযোগ-সুবিধা ব্যাংকগুলোকেই নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্যাংক নিজের উদ্যোগে একটি অ্যাডভাইজরি গ্রুপ তৈরি করতে পারে, যারা বিনিয়োগকারীদের বিনা ফিতে উপদেশ কিংবা পরামর্শ দিতে পারবে। যেমন দেশের অনেকগুলো রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সঙ্গে আমাদের চুক্তি আছে। আমরা জানি, তাদের কী কী ধরনের ফ্ল্যাট খালি আছে। সেগুলোর তথ্য অফশোরের বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরা। সব ধরনের সেবার সন্নিবেশ ঘটিয়ে ব্যাংক খাতে অফশোর ব্যাংকিং উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

পূবালী ব্যাংকের ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপস ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। সে ক্ষেত্রে গ্রাহককে কেবল নিজের আইডি কার্ডের কপি আপলোড করতে হবে। গ্রাহক নিজের যেকোনো অ্যাকাউন্ট থেকে অফশোর অ্যাকাউন্টে ডলার স্থানান্তর করতে পারবে। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, ট্রান্সফার্স্ট, মানিগ্রামের মতো যেকোনো এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমেও অ্যাকাউন্টে ডলার জমা করা যাবে।

পূবালী ব্যাংকের ‘পাই’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপস আছে। রিটেইল ব্যাংকিংয়ের জন্য ‘পাই রিটেইল’, করপোরেটের জন্য ‘পাই করপোরেট’ চালু আছে। এখন আমরা ‘পাই অফশোর’ নামে একটি অ্যাপস ও ওয়েবসাইট তৈরির কাজ করছি। শিগগিরই গুগুল, এনরয়েড, আইএসও সব ভার্সনে অ্যাপসটি পাওয়া যাবে। অ্যাপসের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলে সব ধরনের লেনদেন ও সেবা উপভোগ করা যাবে।

অফশোর অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শুধু মেয়াদি আমানত আনলে কস্ট অব ফান্ড অনেক বেড়ে যাবে। এজন্য চলতি হিসাবসহ অন্যান্য সব ধরনের ব্যাংকিং প্রডাক্টে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তহবিল এলে কস্ট অব ফান্ড কম হবে। তখন আমরা আমদানিকারকদের কম সুদে তহবিলের জোগান দিতে পারব। আমরা এখন পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি হিসাব খুলেছি। এটি পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। পূবালী ব্যাংকের দুটি অফশোর ইউনিট আছে। কোনো গ্রাহক চাইলে এসব ইউনিটে এসে হিসাব খুলতে পারবে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন