ফ্রান্সে আগাম নির্বাচন

ইতিহাস গড়ার পথে কট্টর ডানপন্থীরা?

বণিক বার্তা ডেস্ক

ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের একটি কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন মেরিন লে পেন ছবি: এপি

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথম দফার ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোট গ্রহণ। ছোট শহরগুলোয় ভোট গ্রহণ শেষ হয় বিকাল ৪টায়, বড় শহরগুলোয় সন্ধ্যা ৬টায়। নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৯০ লাখ। এর মধ্যে যেসব নাগরিক দেশের বাইরে অবস্থান করছেন তাদের ভোট আগেই হয়ে গেছে। 

ভোটের আগে বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, এবার অভিবাসনবিরোধী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমালোচনাকারী কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিবিদ মেরিন লে পেন এবং জর্ডান বারডেলার দল ন্যাশনাল র‍্যালি (আরএন) এগিয়ে। দলটি জিতলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো ফ্রান্সে অতি ডানপন্থীরা ক্ষমতায় আসবে।

ফ্রান্সে পার্লামেন্টের জাতীয় পরিষদের ৫৭৭টি আসনের জন্য দুই দফায় ভোট হয়ে থাকে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য একটি দলের প্রয়োজন হয় ২৮৯টি আসন। আগামী ৭ জুলাই দ্বিতীয় দফার ভোট অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত ফল জানা যাবে না।

আরএনের নেতারা চরমপন্থী ভাবমূর্তি কাটিয়ে ওঠার দিকে কয়েক বছর ধরে নজর দিয়েছেন। চাকরি ও আবাসনের জন্য অভিবাসীদের বদলে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এমনকি জ্বালানি খাত ও ৩০ বছরের কম বয়সীদের আয়করমুক্ত রাখার প্রতিশ্রতি দিয়েছে আরএন।

তবে জনমত জরিপগুলো বলছে, আরএন এগিয়ে থাকলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। ভোটে ৩৩ থেকে ৩৬ শতাংশ ভোট পাবে আরএন। বামপন্থী জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট পাবে ২৮ থেকে ২৯ শতাংশ আর মাখোঁর মধ্যপন্থী জোট পাবে ২০ থেকে ২৩ শতাংশ ভোট।

জরিপের ফল মিলে গেলে ফ্রান্সে এবার ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

রাজনৈতিক দল আরএন ১৯৭২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় ফ্রন্ট বা এনএফ নামে পরিচিত ছিল। দলটি ফ্রান্সের বর্তমান জাতীয় পরিষদের বৃহত্তম একক সংসদীয় বিরোধী দল। দলটি ২০০২, ২০১৭ ও ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় রাউন্ডে পরাজিত হয়েছিল।

রাজনৈতিক দল আরএনের প্রধান ৫৫ বছর বয়সী মেরিন লে পেন প্রেসিডেন্ট হতে পারলে এটাই হবে তার জন্য প্রথমবার ক্ষমতাসীন হওয়ার ঘটনা। 

সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচনে খারাপ ফলের জেরে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন মাখোঁ। একই সঙ্গে দেশটিতে আগাম নির্বাচনের ঘোষণাও দেন। তার এ ঘোষণায় দেশটির অনেকেই হতবাক! এছাড়া ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।

সিএনএন জানায়, দুই সপ্তাহের মধ্যে ফ্রান্সে একটি কট্টর-বাম বা কট্টর-ডানপন্থী সরকার গঠিত হতে পারে অথবা কোনো ব্লক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে। এতে দেশে ও দেশের বাইরে নানা সমস্যায় পড়বে ফ্রান্স।

আগাম এ নির্বাচন নিয়ে ক্ষুব্ধ মাখোঁর মিত্ররা। কারণ স্বাভাবিক নিয়মে ২০২৭ সালের আগে পার্লামেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে ডানপন্থীদের অগ্রগতিতে শঙ্কিত হয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব রক্ষা করতেই আগাম নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন মাখোঁ।

আগের নির্বাচনগুলোয় ফ্রান্সের ভোটাররা কট্টর ডানপন্থী দলগুলোকে সামনে আসতে দেয়নি। কিন্তু এবার জ্বালানির দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ডানপন্থীদের দিকে ঝুঁকেছে দেশটির সাধারণ মানুষ। কারণ ডানপন্থীরা জ্বালানির ওপর ভ্যাট কমাতে এবং ৩০ বছরের কম বয়সীদের আয়কর থেকে মুক্তির আশ্বাস দিয়েছে। খবর বিবিসি ও আল জাজিরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন