কৃত্রিম সূর্য তৈরির উদ্যোগ কি থেমে গেল

বণিক বার্তা ডেস্ক

থমকে যেতে পারে কৃত্রিম সূর্য তৈরির এ প্রকল্প ছবি: আইটিইআর

কৃত্রিম সূর্য তৈরির প্রক্রিয়া ১০ বছর পিছিয়ে গেছে। ১৯৮৫ সালে ফ্রান্সে ইন্টারন্যাশনাল থার্মোনিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর বা আইটিইআর নামক কৃত্রিম সূর্য নির্মাণের কাজ নিয়ে আলোচনা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০৬ সালে তা শুরু হয়। এর প্লাজমা তৈরির জন্য ২০২০ সাল নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সে সময়েই নির্মাণ খরচ ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০ বিলিয়ন ইউরো ছাড়িয়ে যায়। এ কারণে আইটিআর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের আগে প্রথম প্লাজমা তৈরি সম্ভব হবে না। আগামী ৩ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ বিলম্বের কারণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করবে।

ফ্রান্সের এ রিঅ্যাক্টর নিউক্লিয়ার ফিউশনের একটি আন্তর্জাতিক বৃহৎ প্রকল্প, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, রাশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশ যুক্ত রয়েছে।  

দেশগুলোর আশা, সূর্যের শক্তি উৎপন্নের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব বিপুল শক্তি উৎপাদন সম্ভব। বিজ্ঞানী ও গবেষকরা মূলত নিউক্লিয়ার ফিউশন ব্যবহার করে এ কাজ করছেন। এ প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয় বিক্রিয়া ঘটিয়ে একাধিক হালকা নিউক্লিয়াই সংযোজন করে তুলনামূলক ভারী নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পাশাপাশি এ প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় বিপুল শক্তি। মূলত সূর্যের নিউক্লিয়ার ফিউশনের প্রক্রিয়া অনুকরণ করছেন ওই বিজ্ঞানীরা।

তবে বিপুল ব্যয়ের পর এ রকম বিলম্ব এ প্রকল্পকে বাণিজ্যিক ফিউশন প্রকল্পে পরিণত করতে পারে। ফলে  প্রশ্ন উঠেছে প্রকল্প এখানেই শেষ হয়ে যাবে?

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর জুয়ান ম্যাথিউস বলেছেন, ‘আইটিআর এখন রুমের ভেতর হাতির অস্তিত্ব অনুভব করছে’। তার মতে, ‘এ প্রকল্পের নকশা সস্তা ও ক্ষুদ্রকায় রিঅ্যাক্টরে রূপান্তরিত হতে পারে। এমনকি এগুলো ক্ষুদ্র বাণিজ্যিক গোষ্ঠীর হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা ফিউশন শক্তির জন্য পূর্ব অনুমান ছাড়াই প্রতিশ্রুতিশীল গতিপথ তৈরি করতে পারে।‘

তিনি বলেন, ‘আপনি যদি ফ্রান্সে এ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকেন, সম্ভবত এটিই বলবেন যে আমরা অনেক দূর এসেছি। আশা করি এটি ভালোভাবেই শেষ করতে পারব। কিন্তু একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে আমি বলব, অতীতের খরচের বিষয়টি তুলবেন না। আইটিআর সাইটে থাকা জনবল এবং অর্জিত দক্ষতা অন্য কিছু তৈরি করতে ব্যবহার করা যাবে না এমন কোনো কারণ নেই।’

যুক্তরাজ্যের স্টার্টআপ কোম্পানি টোকামাক এনার্জি এসব নতুন রিঅ্যাক্টরের একটি নির্মাণ করছে। যেটি যুক্তরাজ্যের অ্যাটমিক এনার্জি কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতায় হচ্ছে। এছাড়া বিশ্বজুড়ে ভিন্ন ভিন্ন নকশা নিয়ে এ রকম ডজনখানেক কোম্পানি কাজ করছে। তাই স্ফেরিক্যাল টোকামাক ফর এনার্জি প্রোডাকশন আশা করছে ২০৩৫ সালের মধ্যে প্লাজমা তৈরি ও নেট এনার্জি অর্জন করতে পারবে। ফলে অন্তর্ভুক্তির তুলনায় পাঁচ বছর পর অধিক শক্তি উৎপাদন করা যাবে। তাহলে কৃত্রিম সূর্য তৈরির প্রকল্প এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, আশাবাদ রয়ে যাচ্ছে। খবর নিউ সায়েন্টিস্ট।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন