উদ্যোক্তাদের প্রধান সমস্যা পর্যাপ্ত ও সময়মতো ঋণ না পাওয়া

ছবি : বণিক বার্তা

২০২৩ সালে নাজিম এ চৌধুরী প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে যোগ দেন। বিজনেস ডেভেলপমেন্ট, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ও কমিউনিকেশন্সে সুদীর্ঘ ২২ বছরের অধিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তিনি। এসএমই ক্লায়েন্টদের বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল সলিউশন বা ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস সরবরাহ করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য পরিষেবা নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে 

দেশের এমএসএমই খাতের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাই।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, উদ্ভাবন, চাকরির বাজার তৈরি, সামাজিক উন্নয়ন ও দ্রুত শিল্পায়নের জন্য কটেজ, মাইক্রো, স্মল ও মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজের (সিএমএসএমই) ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব ছোট ছোট ব্যবসাই আমাদের শক্তি, দৃঢ় সংকল্প ও উদ্যোক্তা হওয়ার প্রধান উৎস, যা আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নির্ধারণ করে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৮৯ লাখ সিএমএসএমই উদ্যোক্তা রয়েছে, যারা দেশের মোট জিডিপির ২৫ শতাংশ অবদান রাখছে এবং প্রাইভেট সেক্টরের চাকরির ৯০ শতাংশ পূরণ করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ হলো কটেজ, মাইক্রো, স্মল ও মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ (সিএমএসএমই) খাত, যা দেশের অর্থনীতিতে অবিশ্বাস্যভাবে অবদান রেখে চলেছে। পর্যাপ্ত ও সময়মতো ঋণ না পাওয়া এ খাতের উদ্যোক্তাদের প্রধান সমস্যা। তবে এ খাতের অন্যান্য সমস্যা হলো বৈধ স্বীকৃতি ও ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের অভাব, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঋণ পেতে প্রয়োজনীয় তথ্য/উপাত্ত/কাগজপত্র ইত্যাদির স্বল্পতা, ঋণপ্রবাহের বিকল্প ব্যবস্থার স্বল্পতা।

দক্ষতার ঘাটতি ও যথাযথ তথ্যের অভাবে এমএসএমই উদ্যোক্তারা পিছিয়ে পড়ছেন। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে করণীয় কী?

দক্ষতার ঘাটতি মোকাবেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা সম্পর্কে দক্ষতা করে গড়ে তুলতে এ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য দক্ষতা/ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি সম্পর্কে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। অন্যদিকে অর্থায়নসংক্রান্ত পণ্য ও সেবার পরিধি বাড়িয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ বাড়লে এবং ঋণপ্রবাহ বাড়লে এ খাতের উদ্যোক্তাদের কনফিডেন্স বাড়বে, ফলে সিএমএসএমই খাত এগিয়ে যাবে। ব্যবসায়ী সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোয় এসএমই হেল্প ডেস্ক স্থাপনের মাধ্যমে ডকুমেন্টেশন প্রক্রিয়া সহজতর করা যায়, যাতে এসএমই খাতের সহায়তা ও তাদের ব্যবসার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। 

ভবিষ্যতে এলডিসি-পরবর্তী সময়ে এমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, আর্থিক ও নীতিসহায়তা, যথাযথ অবকাঠামো ও দক্ষ মানবসম্পদের স্বল্পতার মুখোমুখি হবেন। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনাদের পরিকল্পনা কী?

ব্যাংকের ১৪৬টি ব্রাঞ্চ ও ব্যবসায়ী এলাকার বিভিন্ন এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন এসএমইকে সেবা দিয়ে আসছি। এ সময় আমরা বিভিন্ন ধরনের এসএমইর প্রয়োজনীয়তা ও চ্যালেঞ্জগুলো মূল্যায়ন করছি। এছাড়া আমরা মোবাইল ও ডেস্কটপে ব্যবহারযোগ্য সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এসএমইকে আরো সহায়তা করতে আমরা দেশব্যাপী এসএমই এক্সপার্টদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছি, বিশেষ করে রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ও ক্রেডিট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে প্রাধান্য দিয়ে যথাযথ জনবল নিয়োগের মাধ্যমে। এ সমন্বিত উদ্যোগের ফলে আমরা এসএমই উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কার্যকরভাবে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছি, যাতে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা যায়।

এমএসএমই খাতের ব্যবসায় তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা কতটুকু কাজে লাগাতে পারছেন উদ্যোক্তারা?

প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে ব্যাপক অগ্রগতি লক্ষ করা গেছে। অর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও ডিজিটালি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এবং এসএমই উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য দ্রুত এসব পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে। আমরা আমাদের এসএমই ক্লায়েন্টদের বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল সলিউশন বা ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস সরবরাহ করে আসছি, যার মধ্যে রয়েছে মাইপ্রাইম। মাইপ্রাইম মূলত ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা, যার মধ্যেমে আমাদের সিএমএসএমই কাস্টমাররা এমএসএমই-কেন্দ্রিক পণ্য ও সেবা উপভোগ করতে পারেন। এছাড়া ব্যালান্স চেক, ফান্ড ট্রান্সফার, বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, অ্যাকাউন্টের অ্যাক্টিভিটি ও ট্রান্সফার হিস্ট্রি পর্যবেক্ষণ, ম্যানেজ অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, ডিপোজিট ও লোন সম্পর্কে জানতে পারেন। প্রাইম প্লাস-ডিজিটাল চ্যানেল ব্যবহার করে এ সেবার মাধ্যমে কাস্টমাররা শাখায় না গিয়েও রিয়েল টাইমে অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে পারেন। প্রাইমপে সব ধরনের লেনদেন ও এমআইএসের জন্য ডিজিটাল ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট সলিউশন হলো ‘প্রাইমপে’। এ সেবার মাধ্যমে কাস্টমাররা অনেক সহজ, নিরাপদ ও সুবিধামতো তাদের লেনদেন সম্পন্ন করতে পারে। এছাড়া লেনদেনের সুবিধার্থে সিএমএসএমই কাস্টমারদের এমএসএমই ডেবিট কার্ড সুবিধা প্রদান, পেমেন্ট কালেকশনের ক্ষেত্রে আমরা কিউআর কোডভিত্তিক সুবিধা দিয়ে আসছি। পাশাপাশি এসএমই ডিজিটাইজেশন সম্পর্কিত বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা এরই মধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে এবং শিগগিরই বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। সেগুলো হলো কোনো প্রকার প্রচলিত হস্তক্ষেপ ছাড়াই ছোট আকারের এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ডিজিটাল ন্যানো ঋণ চালুর পরিকল্পনা। ক্রেডিট স্কোরের ওপর ভিত্তি করেই ঋণ অনুমোদন করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় ঋণ আবেদন, কাস্টমারের ক্রেডিট মূল্যায়ন ও ঋণ প্রদান সব ধাপই সম্পূর্ণ ডিজিটালি সম্পন্ন করা হবে। 

এমএসএমই খাতের উন্নয়নে সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন? 

সিএমএসএমইগুলোর রিস্ক কমাতে ও তাদের ব্যাংকিং বা আর্থিক চ্যানেলে যুক্ত করতে রিস্ক শেয়ারিং স্কিম, ফ্লেক্সিবল ক্রেডিট গ্যারান্টি ও আরো বেশি বেশি পুনঃঅর্থায়নের স্কিম গ্রহণ করতে হবে। উল্লিখিত প্যাকেজগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে সিএমএসএমই খাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠবে, যা প্রচলিত আর্থিক চ্যানেলে এ খাতকে আরো বেশি সম্পৃক্ত করবে। তাছাড়া সরকার কর্তৃক এ খাতের দক্ষতা বাড়াতে উপর্যুক্ত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা নিশ্চিত করা, এ ব্যাপারে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা এবং ব্যবসায়ী সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোয় এসএমই হেল্প ডেস্ক স্থাপনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করা। উচ্চ অগ্রাধিকার খাতভিত্তিক উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন প্রনদনা প্রদানের ব্যবস্থা করা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন