সিএমএসএমই খাতে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দিয়েছে সোনালী ব্যাংক

ছবি : বণিক বার্তা

দেশের উত্তরোত্তর উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য উন্নয়নকে টেকসই করা অত্যন্ত জরুরি। দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে অধিক পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিকল্প নেই এবং এ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরি করা প্রয়োজন, যা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি সোনালী ব্যাংক পিএলসি সিএমএসএমই সেক্টরে উল্লেখজনক পরিমাণে বিনিয়োগ বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। সোনালী ব্যাংক সিএমএসএমইর আওতায় ট্রেডিং খাতে ৫ কোটি টাকা, সেবা খাতে ৫০ কোটি টাকা এবং উৎপাদন খাতে ৭৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ/অগ্রিম বিতরণ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিএমএসএমই মাস্টার সার্কুলার অনুসারে যেকোনো খাতের ঋণ কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে ঋণ/অগ্রিম বিতরণ করা হয়। 

সিএমএসএমই খাতে ২০২২ সালে ২ হাজার ৭৩৮ কোটি ৯৫ লাখ, ২০২৩ সালে ৩ হাজার ৬৩৬ কোটি ৬৩ লাখ এবং ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত ১ হাজার ৪৬৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকার ঋণ/অগ্রিম বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকের মোট ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ১ লাখ ৬২৯ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সিএমএসএমই ঋণ/অগ্রিম স্থিতি ১৫ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। সোনালী ব্যাংকের এ অর্জনের বিষয়ে ব্যাংকটির প্রধান ‍নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আফজাল করিম বলেন, ‘‌দেশের ব্যাংক খাত আমাদের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে। সোনালী ব্যাংক সিএমএসএমই খাতে ঋণের পরিমাণ ২০২১ সালের তুলনায় বর্তমানে দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে সিএমএসএমই খাতে ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা উল্লেখযোগ্য অর্জন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২৪ সাল শেষে ব্যাংকের মোট ঋণ/অগ্রিমের শতকরা ২৫ ভাগ সিএমএসএমই খাতে উন্নীত করতে হবে, যা ব্যাংক ব্যবস্থাপনার নিবিড় তদারকিতে বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকই নারী যাদের উন্নয়ন ব্যতীত দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন অসম্ভব। দেশের নারীদের উন্নয়নে সরকার কর্তৃক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যার অন্যতম দেশব্যাপী নারী উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২৪ সাল শেষে ব্যাংকের সিএমএসএমই ঋণ/অগ্রিমের মধ্যে শতকরা ১৫ ভাগ নারী উদ্যোক্তার মাঝে বিতরণের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বৃদ্ধিতে সোনালী ব্যাংক পিএলসি কাজ করে যাচ্ছে। ব্যাংকের বর্তমান মোট সিএমএসএমই ঋণ/অগ্রিম স্থিতি ১৫ হাজার ৩৪২ কোটি টাকার মধ্যে ২ হাজার ১৯৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা ১২ হাজার ৮৭৪ জন নারী উদ্যোক্তার মাঝে বিতরণ করা হয়েছে, যা এ খাতের মোট ঋণ স্থিতির ১৪ দশমিক ৩২ শতাংশ।

বর্তমানে ঋণ/অগ্রিমের সুদের হার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী বিধায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্ভবনাময়ী ছোট ছোট উদ্যোক্তার জন্য ঋণ/অগ্রিম গ্রহণ করে ব্যবসা পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। তবে এ বাধা দূরীকরণে মাত্র ৪ থেকে ৭ শতাংশ স্বল্প সুদে অর্থাৎ ঋণ/অগ্রিম সুবিধা প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালু করেছে। এসব পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় নিয়মিতভাবে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোগে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় সোনালি ব্যাংক ঋণ বিতরণ করে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সিএমএসএমই সেক্টরের আওতায় দেশব্যাপী বিভিন্ন ক্লাস্টার-ভিত্তিক অর্থায়নের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সে আলোকে সোনালী ব্যাংক পিএলসি কর্তৃক সিএমএসএমইর আওতায় বিশেষ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিয়ে ক্লাস্টার ঋণ/অগ্রিম বিতরণ করে যাচ্ছে।

এছাড়া সম্ভাবনাময়ী উদ্যোক্তারা যাতে জামানতের অভাবে ঋণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাক-অর্থায়ন ও পুনঃঅর্থায়নের বিপরীতে ক্রেডিট গ্যারান্টি সুবিধা প্রদানে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় এরই মধ্যে ২৫ জন নারী উদ্যোক্তাসহ মোট ৭১ জন উদ্যোক্তাকে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় ঋণ প্রদান করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন