ঈদুল আজহায় দর্শক আগমনে হল মালিকদের সন্তোষ

মাহমুদুর রহমান

সাভার সেনা অডিটোরিয়ামে দর্শকের ভিড়। ছবি: এসকে ফিল্মস

ঈদের বিনোদনের বড় উপাদান সিনেমা। বছরের অন্য সময়ে দেশের প্রেক্ষাগৃহের অবস্থা যেমনই থাকুক না কেন, ঈদের সময় যেন তা পুরোপুরি পালটে যায়। প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করে দেখে, তাদের দর্শক কোন কোন ছবির প্রতি আগ্রহী। সেভাবেই হল মালিকরা ছবি চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। এবারের ঈদেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে পাঁচটি সিনেমা। এর মধ্যে ‘তুফান’-এর দর্শকই ছিল বেশি। কিন্তু তা হলেও মোটের ওপর দর্শক আগমন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন হল মালিকরা।

ঈদের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তুফানের আমেজ যেন থামছে না। এখনো দর্শক আসছেন সিনেমাটি দেখতে। ঢাকার হলগুলোয় কাটতে হচ্ছে অগ্রিম টিকিট। এমনকি কোনো কোনো হলে দর্শকের চাহিদার কথা ভেবে রাত ১২টার পর শো চালু করতে হয়েছে। ভিড়টা মূলত তুফানকে ঘিরেই। তবে কেউ কেউ অন্য সিনেমাও দেখেছেন।

বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্সে তুফান দেখতে আসা এক দর্শক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘তিনদিন আগে টিকিট কেটে তারপর সিনেমা দেখতে এসেছি। তুফান দেখে ভালো লেগেছে।’

 এর আগে রায়হান রাফি জানিয়েছিলেন, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দর্শক পেয়েছেন। স্টার সিনেপ্লেক্সে একই দিনে মোট ৪৮টা শো হয়েছিল। মাল্টিপ্লেক্সের পাশাপাশি সিঙ্গেল স্ক্রিনেও ভালো করেছে তুফান। নির্মাতা জানিয়েছিলেন, দেশের অন্য সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোও হাউজফুল গেছে। দর্শকের চাপে কিছু সিঙ্গেল স্ক্রিন রাত ১২টা-৩টা পর্যন্ত শো চালু রাখতে বাধ্য হয়েছে।

এতটা না হলেও দর্শক সত্যিই সিনেমা দেখতে হলে গেছেন, যার প্রমাণ পাওয়া গেছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের হলে। ঈদের দিন অর্থাৎ ১৭ জুন থেকে চট্টগ্রামের দুই প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন হয়েছে তুফান। সিনেমা প্যালেস ও সুগন্ধা সিনেমা হলে প্রতিদিন সিনেমাটির তিনটি করে শো চলেছে। চট্টগ্রামের সর্বশেষ এ দুই সিনেমা হলে দুপুর ১২টা, বেলা সাড়ে ৩টা ও সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে হয়েছে সিনেমাটির শো। হল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিদিনই তুফান দেখতে দর্শকের ভিড় রয়েছে। প্রতিটি শোতে ৮০-৯০ শতাংশ দর্শক থাকছে। 

এ নিয়ে জানতে চাইলে সুগন্ধা সিনেমা হলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাদাত হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বহুদিন পর একটি দর্শকপ্রিয় সিনেমা ঈদে মুক্তি পেয়েছে। এ সিনেমাকে ঘিরে দর্শকের আগ্রহ বেশি হওয়ায় অন্তত ৩ সপ্তাহ চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’ সব শ্রেণী ও পেশার মানুষ তুফান দেখতে পরিবার, বন্ধুবান্ধব নিয়ে হলে হাজির হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। 

সিনেমা হল ছাড়াও চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিন ও স্টার সিনেপ্লেক্সেও কোরবানির ঈদের দিন থেকে তুফান প্রদর্শন হচ্ছে। দর্শক চাহিদার কারণে এ সিনেমা দিয়ে ভালো ব্যবসা হবে বলে আশা করছেন সিলভার স্ক্রিন ও সিনেপ্লেক্সের দায়িত্বশীলরা। 

এদিকে বরিশালের একমাত্র সিনেমা হল অভিরুচিতে এবারের ঈদে দর্শক উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তুফান দেখতে প্রথম দুই দিনের প্রতিটি শো ছিল হাউজফুল। অন্য সময় অভিরুচি সিনেমা হলে দর্শক থাকে ৬০-৭০ জনের মতো। তাই ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমা দেখতে হলে দর্শকের উপচে পড়া ভিড় হল মালিকের মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। 

অভিরুচি সিনেমা হলের মালিক এবায়দুল হক চানের ম্যানেজার কবির হোসেন বলেন, ‘টিকিটের দাম কমিয়ে হলে দর্শকের উপস্থিতি বাড়ানো হচ্ছে। এখানে নিয়মিত তেমন দর্শক আসে না। ঈদের সময় নতুন এ তুফান সিনেমা দর্শক টানছে হলে। আর টিকিটের বিক্রিও ভালো। ব্যবসাসফল হবে সিনেমাটি।’ কবির আশা করছেন, এ ঈদে তাদের খরচ ওঠে ব্যবসাও হবে।

যশোরের একমাত্র সিনেমা হল মণিহারেও চলছে তুফান। এ সিনেমা ঘিরে মণিহারে দর্শক আগমন আগের তুলনায় সন্তোষজনক বলে জানিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ। মনিহার সিনেমা হলের ম্যানেজার তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘হাওয়া ও পরাণ সিনেমার পর এবার তুফানে সন্তোষজনক দর্শক পাওয়া যাচ্ছে। যদিও আমাদের সিট ফাঁকা থাকছে অনেক।’

মণিহারের স্বত্বাধিকারী জিয়াউল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘এর আগে হাওয়া ও পরাণ সিনেমা ছাড়া আর কোনো সিনেমায় আমরা ব্যবসা করতে পারিনি। অনেক দিন পর এবার তুফান সিনেমায় কিছুটা দর্শক মিলছে। তবে ভালো ব্যবসা হচ্ছে না। কোনো রকম খরচ উঠছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহেও তুফান চলবে।’

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন সুজিত সাহা (চট্টগ্রাম ব্যুরো), যশোর প্রতিনিধি আবদুল কাদের ও বরিশাল প্রতিনিধি মিরাজ হোসাইন।]

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন