যুগান্তকারী জলবায়ু মামলায় যেভাবে জিতল হাওয়াইয়ের শিশুরা

বণিক বার্তা ডেস্ক

দুই বছর আগে হওয়া মামলাটির বাদী ১৩ শিশু ও কিশোর ছবি: আর্থজাস্টিস

যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপরাজ্যের পরিবহন বিভাগের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে একটি মামলা করে সেখানকার কয়েক শিশু-কিশোর। যখন মামলাটি হয়, তখন বাদীদের সবার বয়স ছিল ১৮ বছরের নিচে। সরকারি সংস্থাটির বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ, পরিবহনসংশ্লিষ্ট যেসব নীতিমালা ও অবকাঠামো তৈরি হয়েছে, তা হাওয়াইয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। ২০৪৫ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামাতে চায় হাওয়াই—পরিবহন বিভাগের নীতিগুলো এ লক্ষ্যকেও বাধাগ্রস্ত করবে। সংবিধান অনুযায়ী পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নাগরিকের অধিকার। আর পরিবহন খাতের অপরিকল্পিত নীতিমালার ফলে নাগরিকের এ সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয় মামলায়।

শেষ পর্যন্ত মামলায় শিশুদের ওই দলটি জয়লাভ করেছে। হাওয়াইয়ের পরিবেশবিষয়ক আদালত এ জয়কে বলছে ‘যুগান্তকারী অর্জন’।

দুই বছর আগে হওয়া মামলাটির বাদী ১৩ শিশু ও কিশোর। মামলার সময় তাদের সবার বয়স ৯-১৮ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের মধ্যে একজনের নাম নাভাহাইন এফ। তিনি হাওয়াইয়ের ওহু দ্বীপের কেনোহেতে বেড়ে ওঠা ন্যাটিভ হাওয়াইয়ান। ‘নাভাহাইন বনাম হাওয়াই ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশন’ শিরোনামের ওই মামলায় বলা হয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি আদিবাসী চাষাবাদের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। যদি গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানো না যায়, তাহলে এর প্রভাবে হওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নাভাহাইনের পরিবারের চাষের জমি সমুদ্রে প্লাবিত হয়ে যাবে।

এ মামলার অন্য একজন বাদী কাউনোহি। মামলার সময় তার বয়স ছিল ১৩ বছর। অভিযোগে বলা হয়, কাউনোহি ভবিষ্যতে মেরিন বায়োলজি বা প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে ভবিষ্যতে এ খাতের কর্মসংস্থান প্রভাবিত হতে পারে বলে সে উদ্বিগ্ন।

আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, জলবায়ু মামলার এ ঐতিহাসিক নিষ্পত্তির ফলে হাওয়াইয়ের পরিবহন খাতকে ২০২৪ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। অবশ্য ২০৪৫ সালের মধ্যে নিজেদের কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে হাওয়াই। তবে পরিবহন বিভাগের বিরুদ্ধে রায়টি কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানোর লক্ষ্য অর্জনে হাওয়াইকে আরো সহায়তা করবে।

হাওয়াইয়ের পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী আইন সংস্থা আর্থজাস্টিস মামলাটির নিষ্পত্তি ঘোষণা করার পর বলেছে, এটিই বিশ্বে প্রথম শিশু ও তরুণদের নেতৃত্বে সাংবিধানিক জলবায়ু মামলা এবং এ জয় নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী বিপ্লব।

হাওয়াইয়ের ফার্স্ট সার্কিট কোর্টে মামলাটি দুই বছর চলার পর পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা ছিল আগামী সোমবার। তবে স্টেটের পরিবেশবিষয়ক আদালত ট্রায়াল শুরুর আগেই আর্থজাস্টিসের মীমাংসায় সম্মত হয়েছেন। ফলে মামলাটি আর না টানার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বাদীরা তাদের অভিযোগে বলেছেন, পরিবহন খাতের নীতিগুলো হাওয়াইয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদের সুরক্ষায় রাজ্যের সাংবিধানিক নীতির পরিপন্থী। পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে তারা হাওয়াইয়ের কার্বন নিঃসরণের ৬০ শতাংশের জন্য দায়ী হবে।

আদালতের সিদ্ধান্তে সম্মত হয়েছে পরিবহন বিভাগও। আদালতের রায় মেনে নিয়ে ২০৪৫ সালের মধ্যে সব ধরনের পরিবহন থেকে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যে নামানোর জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করবে বলে জানিয়েছে তারা। এছাড়া তারা এক বছরের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাস হ্রাসের জন্যও পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। গ্রিনহাউজ গ্যাস নিয়ন্ত্রণের জন্য নিজেদের একটি ইউনিট এবং পর্যটন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন