তারেক রহমানসহ পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ১৫ সাজাপ্রাপ্ত আসামি পলাতক রয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিদেশে পলাতক আসামি মাওলানা তাজউদ্দীন, হারিছ চৌধুরী (প্রয়াত) ও রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবুদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা আছে।

আজ বুধবার (১২ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব তথ্য জানান। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ৫২ জনকে আসামি করে দুটো অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ওই মামলার রায় ঘোষণার আগে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে ৩ জন আসামির অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গত ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এ রায় ঘোষণা করেন। বিচারে ৪৯ জন আসামির সাজা হয়, যার মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। সাজাপ্রাপ্ত ৪৯ জন আসামির মধ্যে ৩৪ জন আসামিকে আটক করা হয়েছে।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হামিদুল হক খন্দকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীন সরকারের আর্থিক সহায়তার সমীক্ষা সম্পন্ন করে পিডিপিপি-এর বিষয়ে চীন সরকারের মূল্যায়ন প্রতিবেদন অর্থনেতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বড় আকারের ভূমি উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং নৌ-চলাচল ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে অধিকতর বিশ্লেষণ না থাকা এবং বড় আকারের বিনিয়োগের বিষয়গুলো উল্লেখ করা আছে। তিনি বলেন, চীন সরকার প্রকল্পটি পর্যায়ভিত্তিক বাস্তবায়নের জন্য আরো বিশদ সমীক্ষার বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করে। ‘পাওয়ার চায়না’ কর্তৃপক্ষ চীন সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক গত ২৭ আগস্ট সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন সংশোধনের প্রস্তাব বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রেরণ করেছে। এ প্রেক্ষিতে পরবর্তী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অধিক বজ্রপাতপ্রবণ ১৫ জেলায় বজ্রপাতের ফলে সৃষ্ট প্রাণহানি রোধে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলমান আছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার ৭৯৩টি বজ্রনিরোধক দণ্ড বা বজ্র নিরোধক ছাউনি স্থাপন প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগারের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মানবতা বিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রতিষ্ঠিত অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৫৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এবং ১৫৩ আসামির মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি লাঘবে সঠিক বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ধনী, গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সমতার ভিত্তিতে সুবিচার নিশ্চিত করা এবং বিচার ব্যবস্থায় দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধন করে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধ পরিকর।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য চয়ন ইসলামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর নারীবান্ধব বিভিন্ন নীতি-কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে নারী শিক্ষার্থীদের সুবিধা প্রভূত বেড়েছে। এতে নারী শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া হ্রাস পেয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষার্থী ও নারী শিক্ষকের সংখ্যা বেড়েছে। একইসঙ্গে প্রশিক্ষিত নারী শিক্ষকের সংখ্যাও বেড়েছে।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান নিখিলের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগ মেগা ডিজিস্টার মোকাবিলার লক্ষ্যে চীনের সহযোগিতায় ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় এক একর জমির ওপর একটি অত্যাধুনিক ন্যাশনাল ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৮ রিখটার স্কেলের অধিক ভূমিকম্প সহনীয় এ ভবনের জন্য প্রকল্প প্রণয়নের মাধ্যমে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।

একই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারনে দুর্যোগপ্রবণ দেশের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রেমালে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে। এজন্য ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার দীর্ঘমেয়াদী বিশদ পরিকল্পনা এবং কৌশল প্রণয়ন করেছে। তিনি বলেন, সরকার বন্যাসহ অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবেলায় সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে; যেমন- বন্যা ও আপদকালীন সময়ে দুঃস্থ ও অসহায় জনগণের আশ্রয়ের জন্য বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, মুজিব কেল্লা নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের জন্য উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন