সামিটের এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকবে আরো ৩ সপ্তাহ

গ্যাস সংকট সমাধানে পেট্রোবাংলাকে শিল্প মালিকদের চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজারের মহেশখালীতে স্থাপিত সামিটের এলএনজি টার্মিনাল ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সামিটের ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটটি (এফএসআরইউ) সংস্কারের জন্য বিদেশে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। বিদেশী পরিদর্শকের মূল্যায়ন কমিটি এটিকে সিঙ্গাপুর কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো একটি ডকইয়ার্ডে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। সে অনুযায়ী সংস্কার শেষে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালটি দেশে ফিরিয়ে আনতে তিন সপ্তাহের মতো সময় লেগে যেতে পারে। ফলে প্রায় এক মাস সামিটের টার্মিনালটি থেকে এলএনজি সরবরাহ পাওয়া যাবে না। 

সাগরে ভাসতে থাকা ভাঙা একটি পন্টুনের আঘাতে গত ২৭ মে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সামিটের এফএসআরইউ। ব্যালাস্ট ট্যাংক ফেটে যাওয়ায় ওইদিন থেকেই টার্মিনালটি দিয়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এদিকে এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেশের বিদ্যুৎ, শিল্প ও আবাসিক এবং সিএনজি স্টেশনে তীব্রভাবে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাসের তীব্র সংকট এবং নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের অনুরোধ জানিয়ে ৪ জুন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারকে চিঠি দিয়েছে বস্ত্র খাতের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।

সামিট গ্রুপ থেকে গতকাল এক বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। তাতে জানানো হয়, রেমালের সময় কয়েকশ টন ওজনের একটি ইস্পাত কাঠামো সামিটের এলএনজি টার্মিনালকে আঘাত করে। তাতে জাহাজে থাকা ব্যালাস্ট ওয়াটার ট্যাংকটি ফেটে যায়। আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের মূল্যায়ন অনুসারে জাহাজটি মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুর কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো একটি ডকইয়ার্ডে নিতে হবে। এরই মধ্যে সেটিকে বিদেশে নেয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। মেরামত শেষে তিন সপ্তাহের মধ্যে জাহাজটি দেশে ফিরে আসবে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানায় সামিট।

শিল্প-কারখানায় অনেক আগে থেকেই গ্যাসের তীব্র সংকট। এর মধ্যে সামিটের সরবরাহ বন্ধ থাকায় তা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। একটি কারখানা চালু রাখতে গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআই প্রয়োজন। সেখানে গড় পিএসআই প্রায় সময়ই শূন্য থেকে দুইয়ের মধ্যে রয়েছে বলে দাবি করেছে বিটিএমএ। পেট্রোবাংলাকে দেয়া সংগঠনটির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, সাভার, আশুলিয়া, মাওনাসহ দেশের বিভিন্ন শিল্প এলাকায় বিটিএমএর তালিকাভুক্ত মিলগুলোয় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এ পরিস্থিতি। এতে মিলগুলো চালু রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কয়েক দিন ধরে গ্যাস সরবরাহ প্রায় নেই বললেই চলে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে মিলগুলো আর কতদিন চালু রাখা সম্ভব হবে তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা শঙ্কা প্রকাশ করেন।

দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩ হাজার ৮০০ থেকে প্রায় চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ)। দুটি এলএনজি টার্মিনাল চালু থাকলে স্থানীয়সহ জাতীয় গ্রিডে তিন হাজার এমএমসিএফের কিছু বেশি গ্যাস সরবরাহ থাকে। বর্তমানে সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি বন্ধ থাকায় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহরয়েছে ২ হাজার ৬০০ এমএমসিএফের কিছু বেশি। এর মধ্যে এলএনজি সরবরাহ হচ্ছে ৬০৬ মিলিয়ন ঘনফুট (৫ জুনের তথ্যানুযায়ী)। 

রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি সচিব মো. নূরুল আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত সামিট গ্রুপের টার্মিনালটি মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এটি মেরামত করতে সিঙ্গাপুর নিতে হবে কিনা তা আজকালের মধ্যে জানা যাবে।’

দেশে এ মুহূর্তে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল আছে দুটি। কক্সবাজারের মহেশখালীতে স্থাপিত টার্মিনাল দুটির মধ্যে একটি স্থাপন করেছে সামিট গ্রুপ। আরেকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জি। জ্বালানি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দুটি টার্মিনালের প্রতিটির ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার। আর এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশনে টার্মিনাল দুটির সম্মিলিত দৈনিক সক্ষমতা ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবারই এলএনজি টার্মিনালের বড় ধরনের কোনো ক্ষতির ঘটনা ঘটল। তবে এর আগে দুর্যোগসংশ্লিষ্ট কারণে টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছিল। গত বছরের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় মোখার সময়ও সামিট ও এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনাল দুটি থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয় পেট্রোবাংলাকে। জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তখন চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দেয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন