ঘূর্ণিঝড় রেমাল

মহাবিপৎসংকেতেও খোলা ছিল উপকূলীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

আবহাওয়া অধিদপ্তর আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিল গতকাল বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সকালেই উপকূলীয় জেলাগুলোয় ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারি করা হয়। পাশাপাশি উপকূলবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশও দেয়া হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাধারণত উপকূলীয় জেলাগুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়। তবে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পূর্বাভাস এবং মহাবিপৎসংকেত জারি থাকলেও উপকূলীয় অধিকাংশ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ক্লাস পরীক্ষা চলমান ছিল।

ঘূর্ণিঝড়ে যেসব জেলায় ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারি রয়েছে তাদের মধ্যে একটি বরিশাল। সকাল থেকেই জেলার সর্বত্র দমকা হাওয়া ভারি বৃষ্টিপাত ছিল। তবে এসবের মাঝেই জেলার শিক্ষার্থীদের যেতে হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

বরিশাল নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ভাটার খাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাফিয়া বলে, ‘সকালে বৃষ্টির মধ্যে ভিজে স্কুলে গিয়েছি। আমরা ক্লাসে ছয় শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলাম।

বরিশাল সরকারি আলেকান্দা কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া বলেন, ‘কলেজ খোলা তাই এসেছি। তবে কোনো ক্লাসেই উপস্থিতি তেমন না থাকায় দ্রুতই ছুটি হয়ে গেছে। এই দুর্যোগের মধ্যে কর্তৃপক্ষ স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখতে পারত। তাহলে আমাদের দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হতো না।

সরকারি আলেকান্দা কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদ রেজা বলেন, ‘কলেজ বন্ধের সরকারি কোনো নির্দেশনা না থাকায় খোলা রাখা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পূর্বাভাস থাকলেও গতকাল ঝালকাঠি জেলার ১৭৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে শিক্ষার্থী অভিভাবকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তাদের দাবি, ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে এসে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এমনকি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারের মধ্যে পরীক্ষা দিতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের।

ঝালকাঠি শহরের উদ্বোধন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, ‘গতকাল দশম শ্রেণীর প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা ছিল। ১০৬ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। বেলা ১টা পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে কোনো সমস্যা হয়নি। যদি পরীক্ষা শেষে আবহাওয়া খারাপ হতো তাহলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আশ্রয় দেয়ার ব্যবস্থা ছিল।

ব্যাপারে ঝালকাঠি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুনীল চন্দ্র সেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পরীক্ষা বন্ধের বিষয়ে আমাদের কাছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা ছিল না। যদিও ঝালকাঠির আবহাওয়া খুব একটা খারাপ ছিল না। ভালোভাবেই পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তবে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধানদের বলেছি, যদি আবহাওয়া খুব খারাপ হয় তবে আপনারা পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে পারবেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ছিল উপকূলের আরেক জেলা সাতক্ষীরায়ও। শহরের পারকুখরালী সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসের মধ্যেও স্কুল খোলা রেখে প্রশাসন চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।

ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমিন করিমী জানান, দুর্যোগের বিষয়টা বুঝতে েরে বেলা দেড়টার দিকে সব বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দুর্যোগ পরিস্থিতিতে উপকূলীয় জেলাগুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ব্যবহার এবং শ্রেণী কার্যক্রমের বিষয়ে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় যেসব অবকাঠামো রয়েছে, সেগুলো ব্যবহারের সিদ্ধান্ত  নেবে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেখানে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দুর্যোগকালীন পরবর্তী অবস্থায় সে প্রতিষ্ঠানগুলোয় পাঠদান কার্যক্রম জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ীই হবে।

প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন বরিশাল প্রতিনিধি এম মিরাজ হোসেন, ঝালকাঠি প্রতিনিধি অলোক কুমার সাহা সাতক্ষীরা প্রতিনিধি গোলাম সরোয়ার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন