![](https://bonikbarta.net/uploads/news_image/news_385248_1.jpg?t=1718628422)
ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর থেকে সবচেয়ে সুবিধাজনক সময়ে রয়েছে রাশিয়া। রসদের অভাবে ইউক্রেনীয় সেনারা আত্মরক্ষার সংগ্রাম করছে। অন্যদিকে হামলা আরো জোরদার করেছে রুশ সেনারা। সব মিলিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে এ মুহূর্তে কোণঠাসা ইউক্রেন। এ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার মধ্যেই যেন শান্তির বার্তা দিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অবশ্য তাতে নানা ‘যদি ও কিন্তু’ রয়েছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে রুশ প্রশাসন এটা স্পষ্ট করেছে যে ‘সমঝোতামূলক যুদ্ধবিরতির’ মধ্য দিয়ে ইউক্রেনে আক্রমণের লাগাম টানতে প্রস্তুত ক্রেমলিন। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে মস্কো যখন সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়ে কেন যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গ তুলেছে পুতিন প্রশাসন?
যুদ্ধক্ষেত্রে বরাবরই কূটনীতির ব্যবহার করে আসছে ক্রেমলিন। ২০১৫ সালে সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করেছে রাশিয়া। আলোচনার মধ্যেই বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোয় বোমা ফেলেছে রুশ যুদ্ধবিমান। একই বছরে ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসেছিল ক্রেমলিন। ওই সময় রুশ সেনা ও তাদের ভাড়াটে বাহিনীগুলো ইউক্রেনের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর দেবালতেজেভে নির্বিচারে হামলা চালিয়েছিল। ফলে মস্কোর যুদ্ধবিরতির আলোচনা তুললেও এ বিষয়ে ইউক্রেনের সতর্ক হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন পশ্চিমা বিশ্লেষকরা।
তবে আরো দুটি কারণে যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গ তুলতে পারেন পুতিন। জুনে ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা সুইজারল্যান্ডে শান্তি আলোচনায় বসছে। তার আগেই পুতিন হয়তো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বার্তা দিতে চেয়েছেন রাশিয়াও শান্তির বিপক্ষে নয়। দ্বিতীয়ত, পুতিন পশ্চিমাদের বার্তা দিলেন বর্তমান যুদ্ধে ইউক্রেন যে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তারা চাইলে এটা এখনই বন্ধ করা সম্ভব। এছাড়া যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গ তোলার অন্যতম কারণ হতে পারে রাশিয়ার ওপর ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চাপ।
রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি কার্যকর এবং ইউক্রেনে যুদ্ধ থামাতে রাজি পুতিন। তবে রুশ সেনারা ইউক্রেনের যে পরিমাণ ভূখণ্ড দখল করেছে তা মেনে নিতে হবে। চারটি রুশ সূত্রের বরাতে এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্ররা প্রতিক্রিয়া না দেখালে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রত্যয়ী পুতিন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই চারজনের একজন বলেছেন, ‘পুতিন যতক্ষণ প্রয়োজন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারেন। তিনি যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত, যুদ্ধ স্থগিত করতেও প্রস্তুত।’
রয়টার্সের এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর বেলারুশ সফররত পুতিনকে জিজ্ঞেস করা হয় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে। এ সময় তিনি বলেন, ‘শান্তি আলোচনা শুরু হওয়া উচিত। আলোচনা হতে হবে রণক্ষেত্রের এবং যুদ্ধ শুরুর প্রথম সপ্তাহে যে প্রচেষ্টা হয়েছিল যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছনোর, সে পরিকল্পনার আলোকে। কোনো একটি পক্ষের চাওয়ার ভিত্তিতে নয়।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভও রয়টার্সকে বলেছেন, তার দেশ একটি প্রলম্বিত যুদ্ধ চায় না। ক্রেমলিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দুটি সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেনে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ জায়গা দখল করেছে, তা রুশ জনগণের কাছে নিজের ইমেজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য যথেষ্ট এবং এ ভূখণ্ড নিয়ে পুতিন কোনো কথাই শুনবেন না।
সাম্প্রতিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তার ওপর সাম্প্রতিক অতীত বিশেষ করে সিরিয়া ও ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কূটনীতি আমলে নিলে দেখা যায় শান্তি আলোচনাকে এক কোনায় রেখে সামরিক সাফল্যের দিকেই মনোযোগ দিয়েছে মস্কো। খবর সিএনএন।