বন বিভাগ ও এলাকাবাসীর আপত্তি

জাইকার টিএসডিএফ প্রকল্প নিয়ে শেষ সময়ে জটিলতা

দেবব্রত রায়, চট্টগ্রাম ব্যুরো

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গড়ে ওঠা শিপইয়ার্ডগুলোয় কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ট্রিটমেন্ট স্টোরেজ অ্যান্ড ডিসপোজাল ফ্যাসিলিটি (টিএসডিএফ) প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কাজই শুরু হয়নি। প্রকল্পটির সমীক্ষা নিয়ে জাইকা শিল্প মন্ত্রণালয় কাজ করলেও জায়গা নির্বাচন, বায়ুদূষণ বিধিমালা সংশোধন না হওয়া কভিডের কারণে মূলত কাজ শুরু হয়নি। প্রকল্পটির জন্য প্রাথমিকভাবে ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হলেও নতুন করে অধিগ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া প্রকল্প এলাকা সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক-সংলগ্ন হওয়ায় আপত্তি জানিয়েছে বন বিভাগ স্থানীয়রা। এতে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন করে শঙ্কায় পড়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা জাইকা।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শুধু শিপইয়ার্ডের বর্জ্য নয়, বরং ভারী শিল্প-কারখানার বর্জ্যও অনায়াসে ধ্বংস করা সম্ভব হতো। অনেক ভারী বর্জ্য এখানে ধ্বংস করা যায় না, সে কারণে ছাতকে সিমেন্ট কারখানায় নিয়ে গিয়ে পোড়ানো হয়। চট্টগ্রামে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) যে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের কাজ করছে, সেজন্য টিএসডিএফ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন জরুরি।

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে জাহাজ ভাঙা শিল্প খাতের বর্জ্য পরিশোধনে সীতাকুণ্ডে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণে তিন বছর সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তবে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য আড়াই বছর (২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন) মেয়াদে কাজ শুরু করে শিল্প মন্ত্রণালয়। প্রায় কোটি টাকা ব্যয়েফিজিবিলিটি স্টাডি ফর দ্য এস্টাবলিশমেন্ট অব ট্রিটমেন্ট স্টোরেজ অ্যান্ড ডিসপোজাল ফ্যাসিলিটি ফর শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড আদারস ইন চট্টগ্রাম প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পটির সমীক্ষা শেষে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডের মহাদেবপুরের মৌলভীপাড়ায় প্রায় ২০ একর জায়গায় কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (টিএসডিএফ) নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। যে প্রকল্পে বিনিয়োগ নির্মাণকাজে যুক্ত থাকবে জাইকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্পটি নিয়ে প্রায় ছয় বছর ধরে কাজ চললেও শেষ সময়ে বন বিভাগ স্থানীয়দের আপত্তির মুখে তা শুরু করা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। সারা পৃথিবীতে ট্রিটমেন্ট স্টোরেজ অ্যান্ড ডিসপোজাল ফ্যাসিলিটি নির্মাণের জন্য জাপান বিখ্যাত। দেশটির শহরগুলোর মধ্যে এমনকি অন্যান্য দেশে জাপান টিএসডিএফের মতো অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। সীতাকুণ্ডের মতো জায়গায় প্রকল্পটির কাজ করা হলে কোনো সমস্যা হবে না। এমনকি জাইকা বায়ুদূষণ বিধিমালা-২০২২- বাতাসে ডাই অক্সিজেনের মাত্রা নির্ধারণ না থাকায় প্রকল্পটির কাজ শুরু নিয়ে অনীহা জানিয়েছিল। প্রকল্পকাজে পরিবেশ বা বায়ুদূষণ নিয়ে জাপান খুবই সতর্ক।

ব্যাপারে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘টিএসডিএফ প্রকল্পটির কাজের অর্থায়ন করছে জাপানের প্রতিষ্ঠান জাইকা। হংকং কনভেনশন অনুযায়ী দেশের জাহাজ ভাঙা শিল্প রেটিফাই করা হয়েছে। ২০২৫ সালের জুন থেকে গ্রিন ইয়ার্ডভুক্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া স্ক্র্যাপ জাহাজ কিনতে পারবে না। কারণে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু প্রকল্প এলাকার জায়গা নিয়ে বন বিভাগ আপত্তি জানিয়েছে। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।

বন বিভাগ বলছে, সংরক্ষিত বনাঞ্চল বা ইকো পার্কের পাশে ধরনের বড় প্রকল্প নির্মাণে বন পরিবেশ আইনে বেশকিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের তফসিল--এর শিল্প বা প্রকল্পের অবস্থান নির্ধারণের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পরিবেশগত গুরুত্বের বিবেচনায় আইন দ্বারা সংরক্ষিত এলাকা, হেরিটেজ সাইট, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা বা অভয়ারণ্য দ্বারা সংরক্ষিত এলাকায় কোনো শিল্প স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এমনকি সরকার কর্তৃক ঘোষিত বনভূমি, অধিক গুরুত্বসম্পন্ন কৃষিজমিতে শিল্প-কারখানা স্থাপন না করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কারণে ইকো পার্কের পাশে প্রকল্পটি নির্মাণে বন বিভাগের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-বন সংরক্ষক সীতাকুণ্ড ইকো পার্কের পরিচালক মোহাম্মদ হোছাইন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সীতাকুণ্ড ইকো পার্কের পাশে শিপইয়ার্ড বা অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ নিয়ে আমরা আপত্তি জানিয়েছি। কারণ পুরনো ইকো পার্কে বন্যপ্রাণীসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশে প্রকল্পের কাজ করার কারণে শব্দদূষণ বা বায়ুদূষণ হবে। এতে সংরক্ষিত বনেরই ক্ষতি হবে। ইকো পার্কের পাশে সড়ক দিয়ে প্রকল্পের কাজ হবে এবং সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে, কারণে দীর্ঘমেয়াদের কথা চিন্তা করলে বড় ক্ষতির আশঙ্কা দেখছি। প্রকল্পটি সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক থেকে নিরাপদ দূরত্বে সমুদ্রের পাশে ভালো জায়গায় করলে বনের জন্য ভালো হবে।

তবে জাহাজ ভাঙা শিল্প মালিকদের সংগঠন বিএসবিআরএর সহকারী সচিব মো. নাজমুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘টিএসডিএফ প্রকল্পের মাধ্যমে শিপইয়ার্ডের বর্জ্য পরিশোধনের পাশাপাশি নগরীর ভারি বর্জ্য, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্ল্যাজসহ শিপইয়ার্ডে আসা বিভিন্ন বর্জ্য অনায়াসে পরিশোধন করা সম্ভব হবে। যেহেতু আগামী বছরের জুন থেকে গ্রিন ইয়ার্ড ছাড়া বিদেশীরা স্ক্র্যাপ জাহাজ বিক্রি করবে না, সে কারণে বর্জ্য শোধনাগারটি নির্মাণ জরুরি। প্রকল্পটি সীতাকুণ্ড ইকো পার্কের পার্শ্ববর্তী জায়গায় হওয়ায় বন বিভাগ আপত্তি জানিয়েছে বলে শুনেছি। তবে যত সমস্যাই হোক প্রকল্পটি চট্টগ্রামের জন্য জরুরি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন