চর্বিতচর্বণের সিনেমা আমি চাইলেও করতে পারব না

ছবি: দীপংকর দীপনের ফেসবুক

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমার নির্মাতা দীপংকর দীপন। টেলিভিশন কাহিনীচিত্র নির্মাণের সফল এ কারিগর বড় বর্দায়ও দেখিয়েছেন নিজের নির্মাণের মুনশিয়ানা। নিজের বর্তমান কাজের ব্যস্ততা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ‘ঢাকা অ্যাটাক’খ্যাত এ নির্মাতা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অহিদ রহমান

বর্তমানে কোন সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত আছেন?

এখন তিনটি সিনেমা নিয়ে কাজ করছি।ছাত্রী সংঘ স্ক্রিপ্ট শেষ হয়েছে। প্রডাকশন ডিজাইন, কাস্টিং মহড়া চলছে। মাসের ১৭-১৯ মে কুমিল্লায় মক শুট শুরু হচ্ছে। আউটডোরটা আগেই করতে হবে। দ্বিতীয় সিনেমার গল্প লেখা শেষ। এখন চিত্রনাট্য চলছে। একজন প্রথিতযশা সাহিত্যিক চিত্রনাট্য করছেন। এটি ইউরোপ প্রবাসী একটি পরিবারের গল্প। তৃতীয়টির গল্প লেখাও হয়ে গেছে। এটা রোমান্টিক কমেডি ফানের ছবি। এখন চিত্রনাট্য করার মানুষ খুঁজছি। এর মধ্যে দুটো সিনেমা চলতি বছর, আরেকটি আগামী ফেব্রুয়ারিতে শুট হবে।

ছাত্রী সংঘ নিয়ে কাজ করার পেছনের গল্পটা জানতে চাই। কেন সিনেমার কথা ভাবলেন?

কুমিল্লায় একটি তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজ করতে এসে ১৯৩১ সালে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথা জানতে পারি। ছাত্রীদের দ্বারা একটি দল গুপ্ত ঘাতকদল হিসেবে তৈরি হয়েছিল এবং তারা অকল্পনীয় কিছু করে ফেলে। বিষয়টি প্রথম জেনে আমি অবাক হয়ে যাই। খোঁজ নিয়ে জানলাম, কুমিল্লার কিছু মানুষ ছাড়া সারা দেশের কেউ এটা জানে না, নারী বিপ্লবীদের অবাক করা সত্য ঘটনা। আর ঘটনাটির মধ্যে প্রেম, থ্রিল, ষড়যন্ত্র, রহস্য সবই আছে। তাই সিনেমাই প্রথমে শুরু করলাম।

প্রস্তুতি কত দিনের ছিল সিনেমার?

গবেষণা পর্যায়ে প্রায় আট মাস করেছি। আর শেষ চার মাস ধরে প্রি-প্রডাকশনের কাজ। সব মিলিয়ে এক বছর বলতে পারেন। সিনেমার শুট হবে ২০ দিন। সব মিলিয়ে ডিসেম্বরে এটি মুক্তি দিতে চাই।

আগের সিনেমাগুলোর কোনো অভিজ্ঞতা কি ছাত্রী সংঘে কাজে লাগাবেন?

হুম করব। কারণ আমি শেষ দুটো সিনেমা করে বুঝেছি, আমাদের মানুষ সহজ সরল ইমোশনাল গল্প খুব পছন্দ করে। যাতে একটু কমিক রিলিফ থাকতে হয়। আগের সিনেমাগুলোর কনটেন্টের কারণে সেটা পারিনি। কিন্তু এবার সেটা হবে। গল্পটি সহজ সরল অনেক বেশি মানবিক হবে।

আপনার সিনেমায় অ্যাডভেঞ্চার, অ্যাকশন বেশি দেখা যায়। এর কারণ কী?

আমি নিজে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়। ছোট বেলা থেকে অ্যাডভেঞ্চার আর গোয়েন্দা সব পড়ে শেষ করেছি। অচেনা নতুন বিষয় নিয়ে কাজ করতে আমি একটা উত্তেজনা অনুভব করি। এটা আমি খুব উপভোগ করি।

আগে যে ধরনের সিনেমা করেছেন, আগামী সিনেমাগুলো কি একই ধাঁচের?

একেবারেই না, বরং উল্টো। আমি আগেও বলেছি, ‘ঢাকা অ্যাটাক, ‘অপারেশন সুন্দরবন, ‘অন্তর্জাল একটা জার্নি। ট্রিলজিও বলতে পারেন। কিন্তু এবার একেবারে ভিন্ন পথে হাঁটছি। অনেক বেশি মানবিক আর ইমোশনাল গল্প বলছি। কিন্তু ওই যে বললামআনটোল্ড প্লট, যেটা পরের সিনেমাগুলোয় আছে। গতানুগতিক কোনো কিছু আমার কাছে পাবেন না। আসলে কারো মতো বা চর্বিতচর্বণের সিনেমা আমি চাইলেও করতে পারব না।

বাংলা সিনেমায় প্রযুক্তির ব্যবহার এখন কতটুকু?

বাংলা সিনেমা নিয়ে এক বাক্যে কিছু বলা প্রায় অসম্ভব একটি বিষয়। কারণ এখানে সিনেমার ক্রিয়েটিভ কারিগরি মানের নির্দিষ্ট কোনো স্ট্যান্ডার্ড নেই এখানে খুব ভালো সিনেমা হয়, আবার খুব জঘন্য সিনেমাও হয়। তবে যদি বলেন ভিএফএক্সের কথা, তাহলে বলব বাংলাদেশের সিনেমায় ভিএফএক্সের ব্যবহার এর সার্বিক মান সন্তোষজনক নয়। তার অনেক যৌক্তিক কারণও আছে।

সিনেমার বাজার নিয়ে আপনার কী মত?

বাংলাদেশের সিনেমার বাজার শেষ হওয়ার দিকে। দেখছেন না, ক্ষতি হবে জেনেও সবাই এখন ঈদ ছাড়া সিনেমা রিলিজ করতেই চায় না। কারণ প্রযোজকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমি আমার তিনটা বড় সিনেমাই ঈদ ছাড়া রিলিজ করেছিলাম। এখন ভারতীয় সিনেমা আসার কারণে ঈদ ছাড়া কেউ সাহস করছে না। ভারতীয় সিনেমা আসা দরকার। আসুক, কিন্তু রিলিজের সময়টা তো আমাদের জানতে হবে। ভারতে ওরা জানে, ওদের কোন সিনেমা কবে রিলিজ হবে। আমরা জানি না কোন সিনেমা আসবে, কবে আসবে। ভারতীয় সিনেমা আনুন। কিন্তু আমাদের আগে থেকে জানান। কোন সিনেমা আসছে, কবে রিলিজ হচ্ছে। তাহলেই আমরা আমাদের সিনেমা ঈদ ছাড়াও রিলিজ করতে পারব। এবার ঈদের সিনেমাগুলোর কী অবস্থা হয়েছে সবাই জানে। এবার যদি সবাই বোঝে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন