ন্যাশনাল ব্যাংক নতুন পর্ষদের ঘোষণা

বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা মূলধন নেয়া হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

তারল্য সংকটে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিচ্ছেন গ্রাহকরা। এতে বিরাজমান সংকট আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় ব্যাংকটির পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ বলেছে, প্রাথমিকভাবে শেয়ারহোল্ডার বা বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংকের মূলধনে ১ হাজার কোটি টাকা জোগান দেয়া হবে। আরো ৩ হাজার কোটি টাকার আমানত সংগ্রহে বিশেষ কর্মসূচি নেয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন নতুন চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। 

ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গতকাল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। পুনর্গঠিত পর্ষদের পরিচালকদের পরিচয় করিয়ে দিতেই এর আয়োজন করা হয়েছিল। তবে নতুন পরিচালকরা কে কোন কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে পর্ষদে স্থান পেয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাব তারা দিতে পারেননি। প্রতিনিধি পরিচালকরা উল্টো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক আছে বলে নতুন চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানসহ পরিচালকরা দ্রুত সংবাদ সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে খলিলুর রহমান বলেন, ‘‌প্রাথমিকভাবে শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে ব্যাংকে ১ হাজার কোটি টাকা মূলধন জোগান দেয়া হবে। পরবর্তী সময় বিভিন্নভাবে আরো ৩ হাজার কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করব। এ আমানত সংগ্রহ হবে প্রচারণা ও প্রকল্পের মাধ্যমে। এতে ন্যাশনাল ব্যাংকের চলমান তারল্য সংকট নিরসন হবে।’

ন্যাশনাল ব্যাংক ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, ‘‌আমরা একীভূত হতে রাজি নই। বাংলাদেশ ব্যাংককেও এ কথা জানিয়েছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাতে রাজি হয়েছে। তবে শর্ত দিয়েছে যে, এক বছরের মধ্যে ব্যাংককে দুর্বল অবস্থা থেকে ভালো করতে হবে। ফলে এখন আমরা একীভূত করার অবস্থা থেকে মুক্ত।’

নতুন চেয়ারম্যান বলেন, ‘‌অতীতে এ ব্যাংকে লুটপাট হলেও এখন থেকে আর এক পয়সাও লুটপাট হবে না। যারা টাকা নিয়েছেন, তাদের তা ফেরত দিতে হবে। আশা করছি, এক বছরের মধ্যে আমরা ব্যাংকটিকে আগের অবস্থায় নিতে পারব।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানান, ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পরিচালকরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকার মূলধন জোগান দেবেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তারা আরো ৩ হাজার কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করবেন। এমন প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই তাদের পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রোববার ন্যাশনাল ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেয়া হয়। ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয় উদ্যোক্তা পরিচালক খলিলুর রহমানকে। আর পর্ষদ থেকে বাদ পড়েন সিকদার পরিবারের সদস্য পারভীন হক সিকদারসহ তিন স্বতন্ত্র পরিচালক। নতুন করে বেসরকারি এ ব্যাংকের পর্ষদে সাতজনকে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান ছাড়াও ব্যাংকটির নতুন পর্ষদের অন্য পরিচালকরা হলেন উদ্যোক্তা পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রতিনিধি পরিচালক লে. জে. মো. সফিকুর রহমান (অব.), মোহাম্মদ রিয়াজুল করিম, এরশাদ মাহমুদ, এহসানুল করিম, অধ্যাপক এ কে এম তফাজ্জল হক এবং স্বতন্ত্র পরিচালক অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দীন নিজামী, ড. রত্না দত্ত ও এবিএম জহুরুল হুদা।

এর আগে গত বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে সাত সদস্যের পর্ষদ গঠন করে দেয়া হয়। পর্ষদ ভেঙে দেয়ায় প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে ছিটকে যান। একই সঙ্গে জয়নুল হক সিকদারের ছেলে রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার ব্যাংকটির পরিচালক পদ হারান। ওই পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে কেবল পারভীন হক সিকদার ব্যাংকটির নতুন পর্ষদে স্থান পান। তিনি জয়নুল হক সিকদারের কন্যা। 

সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ঋণ অনুমোদন করা, পরিচালনা পর্ষদের ক্ষমতার অপব্যবহার, পরিচালক নির্বাচনে জটিলতা সৃষ্টি, আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকায় ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হলো। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আদেশে উল্লেখ করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন