জলবায়ু পরিবর্তন

তীব্র তাপপ্রবাহে পশ্চিম আফ্রিকার মালিতে শত শত মৃত্যু

বণিক বার্তা অনলাইন

ছবি : রয়টার্স

পশ্চিম আফ্রিকার মালিতে গত মাসে তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর থাকার কারণে একটি হাসপাতালে চরম গরমে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। খবর বিবিসি।

আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল এবং পশ্চিম আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ মার্চের শেষের দিকে এবং এপ্রিলের শুরুতে তীব্র তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হয়েছিল। এতে মালি এবং বুরকিনা ফাসোর দক্ষিণাঞ্চল বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

বিজ্ঞানীদের দাবি, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর মতো মানবসৃষ্ট কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে ১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে। 

তবে দক্ষিণ আফ্রিকার খরা নিয়ে আরেকটি গবেষণা জলবায়ুর পরিবর্তে এ ঘটনায় এল নিনোকে দায়ী করেছে। 

এপ্রিলের শুরুতে মালির রাজধানী বামাকোতে গ্যাব্রিয়েল ট্যুর হাসপাতালে ১০২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মৃতদের প্রায় অর্ধেকই ছিলেন ষাটোর্ধ্ব। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এ মৃত্যুর অন্যতম কারণ ছিল অধিক তাপমাত্রা। গবেষকদের মতে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পশ্চিম আফ্রিকায় এই পাঁচ দিনে তাপপ্রবাহ অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। 

ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন গ্রুপের বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী কয়লা, তেল ও গ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার, বন উজাড়ের মতো কার্যকলাপ ছাড়া তাপমাত্রার এতটা বৃদ্ধি সম্ভব হতো না। অর্থাৎ এটি মানবসৃষ্ট কারণে ঘটেছে।  .

গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মালি এবং বুরকিনা ফাসোতে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি ছিল। রাতে গরম ছিল আরো বেশি। গড়ে প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বুদ্ধি পেয়েছিল রাতে। এছাড়া সামগ্রিকভাবে পাঁচ দিনের সময়কালে অঞ্চলটি জুড়ে তাপমাত্রা ১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।

বুরকিনা ফাসোর রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট ক্লাইমেট সেন্টারের জলবায়ু বিজ্ঞানী কিসভেনসিদা গুইগমা বলেন, ‘কারো কারো জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপপ্রবাহ ১.৪ বা ১.৫ ডিগ্রি বেড়ে যাওয়া তেমন বেশি কিছু বলে মনে নাও হতে পারে, কিন্তু এ অতিরিক্ত তাপ অনেক মানুষকে জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে।’

যদিও তীব্র তাপপ্রবাহ এখনো এ অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে বিরল। তাই গবেষকরা আশা করেন যে জলবায়ু উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এরকম আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।

প্রাক শিল্প যুগের তুলনায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা এখন ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্প্রতি মালির তাপপ্রবাহের মতো ঘটনা সাধারণত প্রতি ২০০ বছরে একবার ঘটবে। এছাড়া যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর বাড়ে তবে প্রতি ২০ বছরে শক্তিশালী তাপপ্রবাহ ঘটতে পারে।

তবে মালির তাপপ্রবাহের ঘটনায় মানবসৃষ্ট কারণের পাশাপাশি বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকায় হওয়া খরার ভূমিকাও রয়েছে। কম বৃষ্টিপাতের কারণে অঞ্চলটিতে বেশ কিছু জায়গায় ফসল নষ্ট হয়েছে। খাদ্যাভাবের সম্মুখীন হয়েছে আনুমানিক ২ কোটি মানুষ। জলের ঘাটতি জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়েতে কলেরার প্রাদুর্ভাবে ভূমিকা রেখেছে। 

তবে খরার কারণগুলো বোঝার জন্য আরেক দল গবেষক তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতের ডেটা অধ্যয়ন করেছেন। তারা দেখেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই অঞ্চলে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কম বৃষ্টিপাতের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েনি। তারা এল নিনোর আবহাওয়ার ঘটনাকে তাপপ্রবাহের কারণ হিসেবে দায়ী করেছে। কারণ এল নিনো প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণ জল নিয়ে এসে অনেক জায়গায় আবহাওয়ার ধরনকে প্রভাবিত করে। এল নিনো ডিসেম্বরে শীর্ষে উঠেছিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা জুড়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছিল। 

যদিও একটি উষ্ণতর বিশ্ব প্রতি দশ বছরে একবার এ ধরনের খরা দেখতে পাবে, বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে এল নিনো খরার সম্ভাবনা দ্বিগুণ করে তোলে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষক জয়েস কিমুতাইয়ের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে গত বছরের চরম আবহাওয়ার ঘটনা জলবায়ু পরিবর্তন এবং এল নিনো উভয়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন