ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে পরীক্ষা
বর্জন অব্যাহত রেখেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। ঈদ
ও নববর্ষের ছুটি শেষে বুধবার (১৭ এপ্রিল) থেকে একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরেছে বুয়েট। পূর্ব
নির্ধারিত রুটিন অনুযায়ী এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়টির ২১ ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিল।
তবে এ পরীক্ষায় প্রায় ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থীই অংশগ্রহণ করেননি।
বুয়েট ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জানান, মোট ১ হাজার ২৭৯ জন শিক্ষার্থী
থাকলেও মাত্র ৮ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। আর অনুপস্থিত ছিল ১ হাজার ২৭১
জন। অর্থাৎ ৯৯.৩৭ শতাংশ পরীক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। শিক্ষার্থীরা বলছেন,
ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে চলমান প্রতিবাদের অংশ হিসেবেই তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ
করেননি।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সোমবার (১৫ এপ্রিল) বুয়েট
ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) পদ থেকে অধ্যাপক মিজানুর রহমানকে অব্যাহতি
দেয়া হয়েছে। পদটিতে নতুন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল আমিন
সিদ্দিককে।
বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. ফোরকান উদ্দিনের সই করা অফিস আদেশে
বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিককে
কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ছাত্রকল্যাণ
পরিদপ্তরের পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ দেয়া হলো। তিনি অতিরিক্ত
এ দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়মানুযায়ী ভাতা ও সুযোগ-সুবিধাদি পাবেন।
আদেশে বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমানকে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত
অধ্যাপক আল আমিন সিদ্দিকের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এর আগে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর ২০১৯ সালে ক্যাম্পাসে
ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে গত ২৮
মার্চ গভীর রাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। পরবর্তীতে
এর প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন এবং পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে
ছয় দফা দাবি জানান। সেই ছয় দফার মধ্যে ছাত্রলীগ নেতাদের সমাবেশের আয়োজক হিসেবে আলোচিত
ইমতিয়াজ রাব্বিকে বহিষ্কারসহ ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালককে অব্যাহতি দেয়ার দাবিও
ছিল। ৩ এপ্রিল পর্যন্ত টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন ও অবস্থান কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীরা
আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। ৪ এপ্রিল থেকে ১৩ দিনের ঈদের ছুটি শুরু হয়।
আন্দোলনের জেরে ইমতিয়াজ রাব্বিকে হল থেকে বহিষ্কার করা হলেও হাইকোর্টে
রিট করে তিনি হলে সিট ফিরে পেয়েছেন। বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বৈধতা চ্যালেঞ্জ
করে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন রাব্বি। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি
বন্ধ ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করেন।
তবে হাইকোর্টের রায়ের পরও ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে অনড় অবস্থানে রয়েছেন
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে
আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ছাত্র রাজনীতির
বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত চেয়ে গণস্বাক্ষর অভিযানও আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের
১৮ ব্যাচের (ইন্টারভাল-১৮) শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে গত ৩ এপ্রিল আয়োজিত এ গণস্বাক্ষর
কর্মসূচিতে ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা
জানান, বুয়েটের মাইক্রোসফট টিমস ফর্মের মাধ্যমে তারা এ কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন। শুধু
বর্তমান বুয়েট শিক্ষার্থীরা ফর্মটি পূরণ করতে পেরেছেন এবং এক আইডি দিয়ে একবারের বেশি
তা পূরণের সুযোগ রাখা হয়নি।
আয়োজকদের তথ্য অনুযায়ী, বুয়েটে বর্তমান শিক্ষার্থী রয়েছেন ৫ হাজার
৮৩২ জন। কর্মসূচির স্বচ্ছতা নিশ্চিতের পর গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু হয়। এতে ৫ হাজার
৭৩৯ শিক্ষার্থী অর্থাৎ ৯৮ শতাংশ ফর্ম পূরণ করে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে
নিজেদের অবস্থান জানান।