তানজিদ ও রিশাদের ব্যাটে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

চট্টগ্রামে গতকাল ১৮ বলে ৪৮ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন রিশাদ হোসেন ছবি: বিসিবি

চট্টগ্রামে সিরিজ নিষ্পত্তির তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে শ্রীলংকাকে ২৩৫ রানে অলআউট করে বাংলাদেশের দারুণ এক অবস্থান গড়ে দেন বোলাররা। যদিও ব্যাটিং ব্যর্থতায় তা বিফলেই যেতে বসেছিল। তখনই দলের ত্রাতা হয়ে এলেন তানজিদ হাসান তামিম ও রিশাদ হোসেন। সৌম্য সরকার আহত হয়ে মাঠ ছাড়লে তার জায়গায় ‘কনকাশন সাব’ হিসেবে খেলতে নামা তানজিদ ৮১ বলে ৮৪ রান এবং শেষদিকে রিশাদ ১৮ বলে ৪৮ রানের টর্নেডো বইয়ে দেয়া ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন। ৪ উইকেটের এ জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটাও ২-১-এ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গতকাল বিপর্যয়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে লড়েন লংকান ব্যাটার জেনিথ লিয়ানাগে। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে তিনি দলকে এনে দেন ২৩৫ রানের পুঁজি। যদিও তানজিদের অনবদ্য ইনিংস আর রিশাদের ম্যাজিকে বিফলেই যায় লিয়ানাগের সেঞ্চুরি। ৪ উইকেট ও ৫৮ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। 

২৩৬ রানের টার্গেটে নেমে তানজিদের ব্যাটে ভালো সূচনার পরও একটা পর্যায়ে ১৭৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন চরম অনিশ্চয়তায়, তখন ব্যাটে ম্যাজিক দেখালেন ২১ বছরের তরুণ রিশাদ। সিলেটে তৃতীয় টি২০তে ৩০ বলে ৭ ছক্কায় ৫৩ রান করা এ স্পিনিং অলরাউন্ডার গতকাল ওয়ানডে ম্যাচে সুযোগ পেয়েই ১৮ বলে ৫টি চার ও ৪ ছক্কায় ৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে বাজিমাত করেন। তার মনকাড়া ইনিংসটি সব উৎকণ্ঠা দূর করে বাংলাদেশকে সিরিজ জয়ের আনন্দে ভাসায়।

৩৭তম ওভারে স্পিনার হাসারাঙ্গা ডি সিলভার বলে মেহেদী হাসান মিরাজ ছক্কা মারতে গিয়ে সীমানার কাছে ধরা পড়লেন। তার জায়গায় নেমেই প্রথম বলে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে দুর্দান্ত আগমনীর জানান দেন রিশাদ। ওই ওভারে তার ব্যাট থেকে এল ১৬ রান। এক ওভার বিরতি দিয়ে আবার বোলিংয়ে এলেন হাসারাঙ্গা। সেই ৪০তম ওভার থেকে দুই ছক্কা ও তিন বাউন্ডারিতে রিশাদ নিলেন ২৪ রান! ফলে ৬৬ বলে ২৭ রানের সমীকরণটা নেমে আসে ৬০ বলে ৩! থিকসানার করা ৪১তম ওভারে মুশফিকুর রহিমের বাউন্ডারিতে জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের। 

এর আগে তানজিদ ৮১ বলে ৯টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৮৪ রান করে বাংলাদেশের জয়ের ভিতটা গড়ে দেন। কনকাশন সাব হিসেবে এটাই সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। আগের সর্বোচ্চ ৮০ রান করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান মার্নুস লাবুশেন। 

শ্রীলংকার ইনিংসের শেষদিকে ফিল্ডিং করার সময় আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন সৌম্য। টিম ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম জানান, বাউন্ডারি বাঁচানোর সময় জোরে পড়ে যান সৌম্য, এ সময় তিনি বিলবোর্ডের সঙ্গে ধাক্কা খান। এ ঘটনার সময় তার মাথায় ও ঘাড়ে আঘাত লাগে। তিনি পরে মাথাব্যথা ও দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যার কথা জানান। তিনি বাম হাঁটুতেও ব্যথা পান। সৌম্য ছাড়াও অদ্ভুতুড়ে এ দিনে আহত হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছে জাকের আলী অনিককে। কোটার শেষ ওভার করতে এসে পায়ের চোটে মাঠ ছাড়েন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। 

একাধিক খেলোয়াড় চোটে পড়লেও জয়বঞ্চিত করা যায়নি টাইগারদের। জয়ের পর ম্যাচসেরার পুরস্কার নিয়ে রিশাদ বলেন, ‘ম্যাচটি শেষ করতে পেরে ও জয় পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। শুরুতে আমি কিছুটা নার্ভাস ছিলাম, তবে পরে ব্যাট-বলের সংযোগ ঘটাতে পারছিলাম বেশ ভালোভাবেই। মুশফিক আমাকে বলেছেন, আমার জোনের মধ্যে হলে আমি যেন বেশ জোরালোভাবে বল মারি। সব কৃতজ্ঞতা আল্লাহর প্রতি।’

দশবারের চেষ্টায় এ নিয়ে দ্বিতীয়বার শ্রীলংকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। ২০২১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচের সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা। লংকানরা জিতেছে ছয়টি সিরিজ। 

এবার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে মুখোমুখি হবে দুই দল। ২২ মার্চ সিলেটে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। ৩০ মার্চ এই চট্টগ্রামে শুরু হবে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

শ্রীলংকা: ৫০ ওভারে ২৩৫/১০ (লিয়ানাগে ১০১, আসালঙ্কা ৩৭; তাসকিন ৩/৪২, মিরাজ ২/৩৮, মুস্তাফিজ ২/৩৯)। বাংলাদেশ: ৪০.২ ওভারে ২৩৭/৬ (তানজিদ ৮৪, রিশাদ ৪৮*, মুশফিক ৩৭*; লাহিরু কুমারা ৪/৪৮, হাসারাঙ্গা ২/৬৪)। ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: রিশাদ হোসেন (বাংলাদেশ)। সিরিজ: বাংলাদেশ ২-১-এ জয়ী। প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ: নাজমুল হোসেন শান্ত (বাংলাদেশ)।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন