সকালে ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ যদি কেউ দেখে তার মুখ বাঁকা হয়ে গেছে তাহলে আতঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক। এমন হলে প্রথমেই মনে হয় বোধ হয় স্ট্রোক হয়েছে। কিন্তু না। স্ট্রোক হলে মুখসহ সম্পূর্ণ শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে যায়। কিন্তু কারো যদি শুধু মুখ বাঁকা বা অবশ হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে তার ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস হয়েছে।
ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস কী: আমাদের মস্তিষ্ক থেকে একটি নার্ভ বা স্নায়ু বের হয়ে কানের পাশ দিয়ে পাঁচ আঙুলের শাখার মতো মুখের দিকে ছড়িয়ে গেছে। এটাকে সপ্তম ক্রেনিয়াল নার্ভ বা ফেসিয়াল নার্ভ বলে। এ নার্ভের কারণে মুখের মাংসপেশির নড়াচড়া স্বাভাবিক থাকে। কোনো কারণে এ নার্ভ প্যারালাইজড বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হলে মুখের পেশি অবশ হয়ে যায়, মুখ বেঁকে যায়। এ অবস্থাকে ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস বা ‘বেলস পলসি’ বলে।
কাদের বেশি হয়: যেকোনো বয়সের মানুষেরই ফেসিয়াল প্যারালাইসিস হতে পারে। একজন শিশু জন্মের সময় ফেসিয়াল প্যারালাইসিস নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। এছাড়া গর্ভকালে নারীদের, যাদের ফুসফুসের সমস্যা আছে তাদের, পরিবারের কেউ আগে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে ওই পরিবারের বাকি সদস্যদের ফেসিয়াল প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
কেন হয়: হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস ও হার্পিস জোস্টার ভাইরাসের সংক্রমণ এ রোগের প্রধান কারণ। এছাড়া:
মুখের পেশি যে স্নায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় সেই স্নায়ু ফুলে যাওয়া বা সংকুচিত হয়ে যাওয়া
স্ট্রোকের কারণে
দীর্ঘদিনব্যাপী ঠাণ্ডা লেগে থাকা
মাথা, ঘাড় বা গলায় টিউমার হওয়া
মুখে কোনো আঘাত পাওয়া
কানের কোনো অপারেশন করালে পরবর্তী সময়ে ফেসিয়াল নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
মানসিক আঘাত পাওয়া
ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ
এসব কারণেও ফেসিয়াল প্যারালাইসিস হয়।
উপসর্গ
ফেসিয়াল প্যারালাইসিস হলে—
মুখের যেকোনো এক পাশ অবশ হয়ে বাঁকা হয়ে যায়।
মুখের যে পাশ বাঁকা হয়ে যায় ওই পাশের চোখ বন্ধ করতে সমস্যা হয়।
চোখ জ্বালা করে।
মাথার এক পাশে ব্যথা হয়।
মুখে ও কানে তীব্র ব্যথা হয়।
খাবার খেতে ও কথা বলতে কষ্ট হয়।
মুখ দিয়ে লালা ঝরে।
কুলি করার সময় মুখের এক পাশ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।
চিকিৎসা: ফেসিয়াল প্যারালাইসিসে আক্রান্ত রোগীর বয়স, রোগের কারণ ও লক্ষণ বিবেচনা করে রোগের চিকিৎসা করা হয়। নার্ভ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা পরীক্ষা করার জন্য ইলেকট্রোমায়োগ্রাফি ও এমআরআই করতে হয়। কর্টিকোস্টেরয়েড ও অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের পাশাপাশি দিনে ২-৩ বার ফিজিওথেরাপি (ব্যায়াম) দিলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।
ফেসিয়াল প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হলে ভয় পাবেন না। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা হলে এ রোগ পুরোপুরি সেরে যায়।
লেখক: স্ট্রোক নিউরোলজিস্ট, অধ্যাপক, নিউরোমেডিসিন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
ইনচার্জ, ল্যাবএইড স্ট্রোক সেন্টার