পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে চলছে সমীক্ষার কাজ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছয় নাকি আট লেন সিদ্ধান্ত মার্চে

নিজস্ব প্রতিবেদক

চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছবি: ফাইল/নিজস্ব আলোকচিত্রী

চার লেনে উন্নীত করার আট বছরের মাথায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে আরো সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কাজ শুরুর আগে করা হচ্ছে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশা। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটিকে ছয় নাকি আট লেনে উন্নীত করা হবে তা চলমান সমীক্ষা সম্পন্নের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর এ সমীক্ষার কাজ আগামী মার্চে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্মাণ-পরবর্তী ১৫ বছর যেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আর কোনো কাজ করতে না হয়, সে লক্ষ্যেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার আর তিন পার্বত্য জেলার কারণে মহাসড়কটি একই সঙ্গে দেশের প্রধান পর্যটন করিডোরও। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে ও সাসেক করিডোরে সংযুক্ত হবে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন ৩০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করে বলে ২০২০ সালে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মহাসড়কটিতে চলাচলরত যানবাহনের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্যমান চার লেনে সক্ষমতার চেয়ে বেশি যানবাহন চলাচল করায় বিভিন্ন পয়েন্টে তৈরি হচ্ছে যানজট। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে পণ্য পরিবহন। 

এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সম্প্রসারণের জন্য প্রায় এক বছর আগে গত এপ্রিলে একটি সমীক্ষার কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএমইসির নেতৃত্বে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের একটি কনসোর্টিয়াম মাঠপর্যায়ে সমীক্ষাটি পরিচালনা করছে। সওজ অধিদপ্তরের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী, মহাসড়কটি সম্প্রসারণে একটি বিস্তারিত নকশাও তৈরি করে দেবে এ কনসোর্টিয়াম। এসব কাজে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছয় লেন করা হবে, নাকি আট লেন সে সিদ্ধান্ত সমীক্ষার পর গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী। এ প্রসঙ্গে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হচ্ছে। কোনটা ফিজিবল হবে, আমরা মার্চে সমীক্ষার রিপোর্ট পাব। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় নিয়েই সবকিছু চূড়ান্ত করব। যদি প্রয়োজন হয় সার্ভিস লেন আরো দুটো বাড়িয়ে দেব। কমপক্ষে ১৫ বছর সার্ভিস দেয়, আমরা সেভাবে কাজ করব। আমাদের টার্গেট আগামী ১৫ বছর যেন সড়কটিতে আর হাত দিতে না হয় সেভাবে পরিকল্পনা করা।’

‘‌ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত নকশার ওপর মতবিনিময়’ শীর্ষক এক সভা ৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান চার লেনবিশিষ্ট মহাসড়কটি আট লেনে প্রশস্তকরণ ও উভয় পাশে সার্ভিস লেন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে পুরো মহাসড়ক আট লেন হবে না; যানবাহনের চাপের ওপর ভিত্তি করে কোথাও ছয়, আবার কোথাও আট লেন হবে। এর বাইরে উভয়পাশে নির্মাণ হবে দুটি করে সার্ভিস লেন।

সভায় জানানো হয়, নারায়ণগঞ্জের মদনপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট থেকে সিটি গেট পর্যন্ত যেসব স্থানে যানজট তৈরি হতে পারে, সেগুলোয় ওভারপাস করে দেয়া হবে। যেসব স্থানে সড়ক বাঁকা, সেগুলো সোজা করা হবে। এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটিতে অর্থায়নে অনেক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা আগ্রহও দেখিয়েছে।

তবে সম্প্রসারিত মহাসড়কটির নির্মাণ ব্যয় কত হবে, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি মহাসড়ক বিভাগের সচিব। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘নির্মাণ ব্যয় কত হবে তা সমীক্ষায় উঠে আসবে। সমীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমরা গণমাধ্যমকর্মীদের বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে দেব।’

নির্মাণ ব্যয় নিয়ে মহাসড়ক বিভাগের সচিব কোনো তথ্য না দিলেও যোগাযোগ অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামছুল হক মনে করছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সম্প্রসারণের কাজ ব্যয়বহুল হবে। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘‌মহাসড়কটি শুরুতেই এক্সপ্রেসওয়ে মানে নির্মাণের সুযোগ ছিল। কিন্তু তা না করে চার লেন করা হয়েছে। চার লেন হয়ে যাওয়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে অনেক অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। এসব অবকাঠামো উচ্ছেদ করা এখন অনেক কঠিন ও ব্যয়বহুল হবে।’

সওজ অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করতে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। এর আগে ২০১৭ সালে মহাসড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করতে খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন