এনভায়রনমেন্টাল ক্লাব

দূষণ নিয়ে গবেষণা-ইন্টার্নশিপের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ক্যাপস

ইয়াহইয়া নকিব

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বায়ুমান যাচাই কার্যক্রমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছবি: ক্যাপস

প্রফেশনাল ক্যারিয়ার এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণে কাজের সুযোগ থাকায় পরিবেশবিজ্ঞান এখন গোটা বিশ্বেই একটি জনপ্রিয় সাবজেক্ট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও এ বিষয়ে গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশের ১৫টির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশবিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে হাতে-কলমে শেখার সুযোগ এখনো সেভাবে সম্প্রসারিত হয়নি। আর দূষণ নিয়ে গবেষণা বা ইন্টার্নশিপ করার জন্য পর্যাপ্ত ল্যাব সরঞ্জামও নেই অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এক নজির স্থাপন করেছে বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘‌সেন্টার ফর অ্যাটমসফেরিক পলিউশন স্টাডিজ’, সংক্ষেপে যাকে ‘ক্যাপস’ বলা হয়।

 এখানে দেশের ১২-১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবেশ দূষণবিষয়ক গবেষণা ও ইন্টার্নশিপ করার জন্য আসছেন নিয়মিত। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েট, চুয়েট, বিইউপি ও নর্থ সাউথের মতো প্রথম সারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, এনজিও কর্মীরাও গবেষণা করতে আসেন এ সেন্টারে। কারণ এখানে দূষণ পরিমাপের জন্য রয়েছে আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। তাই পরিবেশবিজ্ঞানের বাইরেও দূষণ নিয়ে যেকোনো কাজের প্রধান আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছে ক্যাপস। ভিন্ন কোনো বিকল্প না থাকায় নির্ভরতার স্থান হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগেনি শিক্ষার্থীদের কাজের মাধ্যমে গড়ে ওঠা এ সেন্টারের। ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টারটি চালু হয়। প্রথমে ঢাকার ধানমন্ডি ক্যাম্পাসে ছোট পরিসরে কার্যক্রম শুরু হলেও এখন কাজের পরিধি বিশ্বব্যাপী।

কয়েক বছর ধরে ঢাকা পৃথিবীর শীর্ষ দূষিত নগরীর স্থান দখল করছে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে দূষণের মাত্রা নিয়ে কাজ কমই হচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইকিউ এয়ার এ বিষয়ে কাজ করলেও এলাকাভিত্তিক দূষণের মাত্রা জানা যাচ্ছিল না। এমন এক প্রেক্ষাপটে ক্যাপস তার যাত্রা শুরু করে। 

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বায়ুদূষণের মাত্রা পরিমাপ করতে শুরু করে ক্যাপস। প্রথমদিকে শুধু স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ গবেষণায় সম্পৃক্ত থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য ক্যাম্পাস থেকেও শিক্ষার্থীরা গবেষণা করতে আসেন এ সেন্টারে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী যন্ত্রপাতি কেনার পরিমাণ বাড়ায় ক্যাপস। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ পরিমাপ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বিশ্লেষণ নিয়ে গবেষণা করা যায় এ ধরনের সব যন্ত্রপাতি রয়েছে এখানে। আর বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীরা এ সেন্টারে গবেষণা করতে আসায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও সহায়তা করে আসছেন তাদের। এভাবেই ছোট পরিসরে শুরু করে এখন দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেও কাজ করছেন এখানকার গবেষকরা। দূষণের মাত্রা নিয়ে তাদের গবেষণার ফলাফল নিয়ে দেশী গণমাধ্যমসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। 

তাই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশী সংস্থার সঙ্গে কাজের সুযোগ তৈরি হয় ক্যাপসের। এরই মধ্যে বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের মাত্রা জানার জন্য তাদের সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর। যৌথভাবে কাজ করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ ও বারসিকের মতো দেশের বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও তাদের সঙ্গে কাজের আগ্রহ দেখাচ্ছে। এমনকি ক্যাপসের সঙ্গে কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক, ইউকে এইড, মার্কিন ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট, ইউরোপীয় ক্লাইমেট ফাউন্ডেশন এবং বিদেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কাছ করছে।

ক্যাপসে ইন্টার্নশিপ বা গবেষণা শেষে অনেকেই পরিবেশ নিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে কাজ করছেন। এখানে একসময় কাজ করতেন তানভীরুল ইসলাম। অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি জানান, ঢাকার বায়ুর মান ও বায়ুদূষণের ফলে রিকশাচালকদের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ছে তা নিয়ে ক্যাপসের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। সে সময় বায়ুমান সরঞ্জামসহ মাঠের কাজের অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন প্রফেশনালদের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরবর্তী সময়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে আগের অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লেগেছে। আর ইন্টারভিউ দেয়ার ক্ষেত্রেও এসব অভিজ্ঞতা তাকে এগিয়ে দিয়েছিল। আব্দুল্লাহ আল নাঈম স্ট্যামফোর্ডের সাবেক শিক্ষার্থী। ক্যাপসের সঙ্গে কাজ শেষে স্নাতকোত্তর করছেন নেদারল্যান্ডসে। ক্যাপসের সঙ্গে কাজ করে এভাবে অনেকেই দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন।

ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাজের মাধ্যমেই আবর্তিত হচ্ছে সার্বিক কার্যক্রম। গবেষণার মাধ্যমে পরিবেশগত সমস্যার সমাধান বের করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দূষণ কমিয়ে আনার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। পরিবেশ নিয়ে কাজ করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবেষণা সংস্থা, ইনস্টিটিউটগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে সমন্বিতভাবে নিত্যনতুন গবেষণার দ্বার উন্মোচন করা। এছাড়া একটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের মাঝে বায়ু ও শব্দদূষণ গবেষণায় প্রসার ঘটানো ক্যাপসের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অন্যতম।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন