স্লিপড ডিস্ক

বিশ্বে এক হাজার প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ৫-২০ জন স্লিপড ডিস্কে আক্রান্ত

ডা. মো. আতিকুর রহমান

মানুষের মেরুদণ্ড ছোট ছোট ৩৩টি হাড় বা কশেরুকা দ্বারা গঠিত। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ভার্টিব্রা। দুটি ভার্টিব্রার মাঝখানে থাকে ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক। আঘাত বা ক্ষয়ের কারণে ডিস্ক যখন তার নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে সরে গিয়ে কোনো দিকে বের হয়ে আসে, তখন তাকে প্রলাপসড বা স্লিপড ডিস্ক বলে।

রোগের প্রাদুর্ভাব

বিশ্বে বছরে প্রতি ১০০০ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে হার্নিয়েটেড ডিস্কের সমস্যায় আক্রান্ত হন -২০ জন। ৩০-৫০ বছরের মানুষ সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়। পুরুষ নারী রোগীর অনুপাত : ১।

যে অংশে হয়

          কোমরের নিচের দিকে মেরুদণ্ডের লাম্বার ভার্টিব্রাতে বেশি হয় যাকে পিএলআইডি বলে।

          ঘাড়েও হয়ে থাকে, যাকে সারভাইক্যাল             ডিস্ক প্রলাপস বলে।

 ডিস্ক প্রলাপসের কারণ

          মেরুদণ্ডে আঘাত।

          বেশি ভারী ওজন উত্তোলন করা। যেমন: কুলি, দিনমজুর, জিমে ভারী ওজন উত্তোলন।

          একটানা দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে কাজ করতে হয় -এমন পেশা যেমন: ড্রাইভিং, অফিস জব, ব্যাংকের চাকরি, কম্পিউটার অপারেটর ইত্যাদি।

          ওবেসিটি বা শারীরিক স্থূলতা।

           ধূমপান করা।

           জেনেটিক কিছু রোগ যেগুলো দ্রুত মেরুদণ্ডের হাড় ডিস্ক ক্ষয় করে।

           বার্ধক্যজনিত কারণে ডিস্কের ক্ষয়।

           প্রলাপসড ডিস্কের জটিলতাসমূহ

           ডিস্ক সরে গিয়ে যখন এর পেছনে দুই পাশে থাকা স্পাইনাল নার্ভ রুট বা সরাসরি স্পাইনাল কর্ডকে চাপ দেয় তখন নানা লক্ষণ জটিলতা দেখা দেয়।

প্রলাপসড ডিস্কে শারীরিক লক্ষণ

          প্রধান লক্ষণ কোমর ব্যথা। ব্যথা কোমর থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত চলে যেতে পারে।

          পায়ে পায়ের পাতায় ব্যথা।

          পা অবশ অবশ লাগা, ধীরে ধীরে মাংসপেশি শুকিয়ে চিকন হয়ে যাওয়া।

          পায়ের মাংসপেশি বা রগ টেনে ধরা। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে না পারা।

          পায়খানা-প্রস্রাবের ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়া, যেমন প্রস্রাব আটকে যাওয়া বা ঝরে পড়া। সেক্সুয়াল সমস্যা।

          ঘাড়ে ব্যথা যা হাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। হাতে ঝিনঝিন জ্বালাপোড়া করা এবং হাতের মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়া শক্তি কমে যাওয়া।

রোগ শনাক্ত

এমন লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। ডাক্তাররা হিস্ট্রি নিয়ে, এক্সামিনেশন করে নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষা যেমন এক্স-রে, স্পাইনের এমআরআই ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করে থাকে।

চিকিৎসা

          যাদের ডিস্ক আংশিক বের হয়েছে বা স্বল্প মাঝারি মাত্রার পিএলআইডির ব্যথা রয়েছে, শুরুতে তারা কোমরের বেল্ট ব্যবহার করলে, নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নিলে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ব্যথার ওষুধ প্রয়োগ করলে কম ব্যথা অনুভব করবেন।

          যাদের ডিস্ক বেশি পরিমাণে বের হয়ে গেছে, মাংসপেশি শুকিয়ে যাচ্ছে, হাতে-পায়ে শক্তি কমে যাচ্ছে, প্রস্রাব-পায়খানায় সমস্যা হচ্ছে তাদের অপারেশনই মূল চিকিৎসা।

প্রতিরোধে করণীয়

          বেশিক্ষণ সামনে ঝুঁকে কাজ করা ঠিক নয়। ঝুঁকে কাজ করলেও কোমরে বেল্ট পরা।

          ভারী কোনো কিছু একা একা নিচ থেকে না তোলার চেষ্টা করা উচিত।

          চলাফেরায় বিছানা থেকে ওঠার সময় পিঠ কোমরে সাপোর্ট দিতে হবে।

          সবসময় মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসতে হবে।

          নিয়মিত ব্যায়াম করা।

          ওজন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

          এক হাতে কোনো ভারী জিনিস বহন নয়।

          শক্ত বিছানায় ঘুমানোর অভ্যাস করা, কোনো ফোম ব্যবহার নয়।

          দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা নয়। প্রয়োজনে কিছুক্ষণ পর পর স্থান পরিবর্তন করা।

          বিছানা থেকে ওঠার সময় এক পাশে কাত হয়ে ওঠা।

          হাইহিলের জুতা বা স্যান্ডেল ব্যবহার না করা।

          ধূমপান থেকে বিরত থাকা।

 

লেখক: রেসিডেন্ট-এমডি (নিউরোলজি), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হসপিটাল

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন