ড্রাই আই বা শুষ্ক চোখ

শুষ্ক চোখের রোগের সঠিক চিকিৎসা না হলে দৃষ্টিশক্তি ব্যাঘাত হতে পারে

ডা. জামসেদ ফরিদী (জামি)

চোখের ড্রাই আই সমস্যা যা শুষ্ক চোখের রোগ (ডিইডি) নামেও পরিচিত। এটি একটি সাধারণ চোখের সমস্যা। যখন চোখ পর্যাপ্ত চোখের পানি তৈরি করে না বা চোখের পানি যখন খুব দ্রুত বাষ্পীভূত হয় তখন এ সমস্যা তৈরি হয়। চোখের স্বাস্থ্য এবং তৈলাক্ততা বজায় রাখার জন্য চোখের পানি অপরিহার্য। যখন চোখের পানির ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, তখন এটি বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি করে এবং চোখের পৃষ্ঠের সম্ভাব্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

শুষ্ক চোখের সমস্যার কিছু মূল দিক নিচে দেয়া হলো: 

লক্ষণ

সাধারণত শুষ্ক চোখের সমস্যার লক্ষণগুলো হচ্ছে-

 চোখের শুষ্কতা

 চোখ জ্বালাপোড়া করা

 চোখ খচখচ করা

 চোখের লাল ভাব

 চোখ দিয়ে অতিরিক্ত পানি পড়া (শুষ্কতার প্রতিফলন প্রতিক্রিয়া)

 ঝাপসা দৃষ্টি

 আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা

কারণ 

শুষ্ক চোখের সমস্যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে—

বার্ধক্য: বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চোখের পানি তৈরির ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে এবং চোখের পানির ঘনত্বের পরিবর্তন হয়। 

লিঙ্গ: নারীরা সাধারণত বেশি আক্রান্ত হয়, বিশেষ করে মেনোপজের পরে। কারণ তখন কিছু হরমোনের সমস্যা তৈরি হয়, ফলে চোখের পানি তৈরির ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং চোখের পানির ঘনত্বরও পরিবর্তন হয়। 

পরিবেশগত কারণ: ধুলা ময়লা, ধোঁয়া, শুষ্ক বাতাস বা এয়ার কন্ডিশনারে অতিরিক্ত সময় অবস্থান করলে চোখের পানির ঘনত্বের পরিবর্তন হয়, ফলে চোখের পানি দ্রুত বাষ্পীভূত হয়।

অন্যান্য শারীরিক সমস্যা: আর্থ্রাইটিস, সজোগ্রেন সিনড্রোম এবং ডায়াবেটিসের মতো শারীরিক সমস্যার কারণে চোখের পানি তৈরির ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং চোখের পানির ঘনত্বরও পরিবর্তন হয়।

ওষুধ: কিছু ওষুধ, যেমন অ্যান্টিহিস্টামিন এবং ডিকনজেস্ট্যান্ট চোখের পানির উৎপাদন কমাতে পারে।

রোগ নির্ণয়

একজন চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ কিছু চক্ষু পরীক্ষার মাধ্যমে শুষ্ক চোখের রোগ নির্ণয় করতে পারেন। এর মধ্যে চোখের পানির পরিমাণ এবং গুণমান মূল্যায়ন, কর্নিয়া এবং কনজেক্টিভার সুস্থতার পরীক্ষা, রোগীর লক্ষণ এবং চিকিৎসা ইতিহাস বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।  চোখে ড্রাই আই সমস্যা থাকলে অবশ্যই চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। 

চিকিৎসা

শুষ্ক চোখের রোগের চিকিৎসার লক্ষ্য হচ্ছে লক্ষণগুলো হ্রাস করা, চোখের পানির উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং চোখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা।

সাধারণ চিকিৎসা 

কৃত্রিম চোখের পানি: চোখের শুষ্কতা দূর করতে লুব্রিকেটিং চোখের ড্রপ বা কৃত্রিম চোখের পানি ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রেসক্রিপশন ওষুধ: আপনার চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ আপনার চোখের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে চোখের পানির উৎপাদন বৃদ্ধি বা ইনফেকশন কমাতে ওষুধ প্রেসকাইব করবেন।

কুসুম গরম পানির সেঁক: চোখের পাতার তেলগ্রন্থির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করার জন্য চোখে কুসুম গরম পানির সেঁক প্রয়োগ করা যেতে পারে।

লাইফস্টাইল পরিবর্তন: আপনার চোখ যাতে শুষ্ক না হয় সে জন্য ধোঁয়া বা শুষ্ক বাতাস, এয়ারকন্ডিশনারে অনেকক্ষণ অবস্থান, বাইরে ধুলার ভেতরে অবস্থান করা এমন পরিবেশগত কারণগুলো এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।

উন্নত চিকিৎসা

গুরুতর ক্ষেত্রে, যখন প্রচলিত চিকিৎসা ব্যর্থ হয়, তখন আপনার চোখের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে আপনার চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ আপনার জন্য উন্নত থেরাপি বিবেচনা করতে পারেন, যেমন পাঙ্কটাল প্লাগ (টিয়ার ড্রেনেজ ব্লক করার জন্য), ইনফেকশন কমানোর ওষুধ বা তেলগ্রন্থির কার্যকারিতা উন্নত করার পদ্ধতি ও ওষুধ।

শুষ্ক চোখের রোগের উপসর্গ দেখা দেয়া ব্যক্তিদের জন্য সঠিক রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার জন্য চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো চোখের যত্ন নেয়া অপরিহার্য। শুষ্ক চোখের রোগের সঠিক চিকিৎসা না করা হলে চোখে দীর্ঘস্থায়ী অস্বস্তি তৈরি করে, দৃষ্টিশক্তি ব্যাঘাত হতে পারে এবং কর্নিয়ার গুরুতর ক্ষতি করতে পারে। 

লেখক: আবাসিক সার্জন, শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, গোপালগঞ্জ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন