সাক্ষাৎকার

আইবি গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির বাজারে ইউনিক চাহিদা আছে

অধ্যাপক ড. সুবোধ দেব নাথ

ড. সুবোধ দেব নাথ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অধ্যাপক। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস (আইবি) বিভাগে পড়াশোনা, বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ারের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম

সাধারণত দুই দেশের মধ্যে পণ্য বা সেবা বিনিময়কেই আন্তর্জাতিক ব্যবসা বোঝায়। কিন্তু বৃহৎ পরিসরে আন্তর্জাতিক ব্যবসা আসলে কী?

নরমালি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ইজ ক্রস বর্ডার ট্রেড অ্যান্ড প্রডাকশন। কম্পারেটিভ ও অ্যাবসলুট অ্যাডভান্টেজ থিওরির দিক থেকে দেখলে  ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসে কেউই যাবে না যদি লাভ না হয়। একটি প্রডাক্ট আমেরিকায় কখন বিক্রি করব যখন তাদের থেকে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করা যাবে। এ পণ্য তারাও উৎপাদন করে, কিন্তু আমার যে ম্যানপাওয়ার বা ফ্যাক্টর অব প্রডাকশন যেটা দিয়ে যদি তুলনামূলক কম দামে ওই দেশে বিক্রি করতে পারি তখনই আসলে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের সার্থকতা। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের উদ্ভব হতো না যদি না কম্পিটিটিভ অ্যাডভান্সমেন্ট পাওয়া না যেত। এখানে এক্সচেঞ্জ রেট কেমন, সাপ্লাই চেন কেমন এ রকম অনেক বিষয় জড়িত। আপনি যে প্রডাক্টটি রফতানি করবেন তার কাঁচামাল কোন সোর্স থেকে আসবে এবং এর কম্পিটিটিভনেস আছে কিনা এ রকম অনেক বিষয় আছে। আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় আমাদের চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। 

একজন শিক্ষার্থী কেন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগে পড়বে?

এ বিষয়ে গ্র্যাজুয়েটদের ইউনিক চাহিদা আছে চাকরির বাজারে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, ডব্লিউটিও, বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন রিসার্চার নেয়। ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনগুলো একটি সেক্টর। এর বাইরে ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিভাগ, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট বিভাগে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদা রয়েছে। আমাদের দেশে অনেক সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে যেখানে গ্র্যাজুয়েটদের সাবজেক্ট নলেজ কাজে লাগাতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের এডিতে চাকরির সুযোগ রয়েছে। ফরেন ক্যাডারও এটার সঙ্গে সম্পর্কিত। ট্রেড নেগোসিয়েশন অ্যান্ড ডিপ্লোমেসিতেও আইবি গ্র্যাজুয়েট দরকার। ফরেন মিশনগুলো শুধু পাসপোর্ট নবায়ন করবে, নাগরিকদের তথ্য হালনাগাদ করবে এটাই কাজ নয়। বিজনেস, ট্রেডকে কীভাবে প্রমোট করা যায় সেটা নিয়েও কাজ করতে হয়। যেমন আমাদের আরএমজি সেক্টরকে প্রমোট করতে গেলে শুধু ইউরোপ কিংবা নর্থ আমেরিকার মতো ট্র্যাডিশনাল মার্কেট নয়, অস্ট্রেলিয়া, জাপানের নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেট  ধরতে তারা সুন্দরভাবে নেগোসিয়েশন করতে পারবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন বাজার সৃষ্টিতে কাজ করতে পারে। চাকরির বাজারে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের অনেক সেক্টর রয়েছে।

আইবিতে কী কী কোর্স পড়ানো হয়?

এ বিভাগে এমন কিছু কোর্স আছে যেগুলো বিজনেসের কোর কোর্সের বাইরে আলাদা কোর্স আকারে বিস্তারিত পড়ানো হয়। যেমন বিজনেস স্ট্যাটিসটিকস, বিজনেস কমিউনিকেশন, আইটি অ্যাপ্লিকেশন ইন বিজনেস, বিজনেস ল, ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং, অপারেশন ম্যানেজমেন্ট, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ল অ্যান্ড এথিকস, অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট, ইনকাম অ্যান্ড করপোরেট ট্যাক্সেশন, ট্রেড কম্পিটিটিভনেস, ডব্লিউটিও এগ্রিমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট, ম্যানেজিং গ্লোবাল ইনোভেশন, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, লজিস্টিকস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন, এক্সপোর্ট ইমপোর্ট প্রসিডিউর অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন, গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিক ম্যানেজমেন্ট, বাংলাদেশ ইন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ইত্যাদি। 

বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ কেমন?

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসে গ্র্যাজুয়েটদের জন্য উচ্চশিক্ষার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের গ্র্যাজুয়েট যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ম্যামপিস, পেনসিলভানিয়া রাইট স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব হুয়াওয়েতেও একজন শিক্ষার্থী রয়েছেন যিনি ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসে পিএইচডি করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ডেনমার্ক, জার্মানিতেও আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন। ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা শেষে আরেক শিক্ষার্থী তিন বছরের মধ্যে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সিও পেয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ইউনিভার্সিটিতে আমাদের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লিডসে আমাদের একজন গ্র্যাজুয়েট সরাসরি পিএইচডির সুযোগ পেয়েছেন। ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলেও একজন শিক্ষার্থী অফার লেটার পেয়েছেন। আমি দেখতে পাচ্ছি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোসহ নর্থ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন। তার মানে হলো গুরুত্বপূর্ণ সব দেশেই আইবিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। তবে আমেরিকায় ফান্ডিং বেশি। ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল অব বিজনেসের সঙ্গে আমাদের বিভাগের একটি সমঝোতা স্বাক্ষর (এমওইউ) হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ও ক্লাইমেট ইস্যু নিয়ে আমরা যৌথভাবে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেব। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন