ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস

গ্র্যাজুয়েটদের ভাবনায় আইবি

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস (আইবি) বিষয়ে স্নাতক শেষ করে কর্মজীবনে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে কর্মরত রয়েছেন অনেকেই। কেউবা কাজ করছেন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে, আবার কেউ বিদেশে নিচ্ছেন স্নাতকোত্তরের পাঠ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবি বিভাগের তিন গ্র্যাজুয়েটের একাডেমিক ও পেশাজীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা শুনেছেন আনিসুর রহমান

আইবি ডিগ্রি নেয়ার জন্য তৃতীয় ভাষার সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক

শেখ আব্দুল্লাহ: অ্যাসোসিয়েট পার্টনার

হিউম্যান রিসোর্স বিভাগ, অ্যামাজন

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল বজলুল হক স্যার, রাকিব স্যার, সুবোদ স্যার, সুবর্ণ স্যার, শাহীন স্যারসহ ভীষণ জনপ্রিয় শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের সান্নিধ্যে আসার। বিভাগ আমাকে যে  নৈতিকতা আর নিয়মানুবর্তিতা শিখিয়েছে তা বর্তমান কর্মক্ষেত্রে যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলে বোঝাতে পারব না। অ্যামাজনে শৃঙ্খলার বিকল্প নেই। সুবোধ স্যার একবার বলেছিলেন, থিংক ডিফারেন্টলি ফর ইয়োর প্রবলেমস/সলিউশনস। কথা কর্মক্ষেত্রে অনেকভাবেই আমি কাজে লাগাই। সবসময় শুধু সমাধান খুঁজি না। মাঝে মাঝে উত্তরের জন্য সঠিক প্রশ্নও জরুরি। সঠিক প্রশ্ন আমাকে সঠিক উত্তর খুঁজতে ভীষণভাবে সহায়তা করে। রকম অসংখ্য শিক্ষাই এখন আমার কর্মজীবনে ব্যাপকভাবে কাজে লাগছে। ডিপার্টমেন্ট একদম প্রথম বর্ষ থেকেই আমাদের গড়ে তোলে কেস স্টাডি সমাধান করিয়ে। আইবির শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ স্টাডিও পড়তে হয়। আমাদের সম্মান ডিগ্রি নেয়ার জন্য তৃতীয় ভাষার সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক, অন্যথায় আমাদের সার্টিফিকেট দেয়া হয় না। তাই আমি বাংলা, ইংরেজি, হিন্দির পাশাপাশি ফ্রেঞ্চ জানি। কারণ আমাকে ফ্রেঞ্চ শিখতে হয়েছিল আমার ডিগ্রি সম্পন্ন করার জন্য। এখানেই অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট আর আইবির পার্থক্য। এছাড়া আমরা গতানুগতিক কারিকুলামের বাইরে গিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আলাদা কর্মশালা বা প্রজেক্ট করি বা করতে হয়। প্রথম বর্ষেই আমাদের মাইক্রোসফট এক্সেল শেখানো হয়। এক্সেল যে কর্মক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা করপোরেট দুনিয়ার সবাই খুব ভালো করেই জানেন।

অধিকসংখ্যক বিষয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা

তন্ময় চক্রবর্তী: স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী

টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ইল্মেনাও, জার্মানি

‘‌ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বর্তমান বিশ্বে উচ্চশিক্ষায় একটি বহুল পঠিত ও কর্মক্ষেত্রে সমাদৃত একটি বিষয়। এতে বিশ্বের নানা প্রান্তের বিজনেস স্কুলগুলোতে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বা এ সম্পর্কিত বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগও রয়েছে অনেক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবির স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীদের ব্যবসায় প্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কম্পিউটার সায়েন্স, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতি, নেগোসিয়েশন ও ডিপ্লোমেসি, গণিত, পরিসংখ্যান, ব্যবসায়সংক্রান্ত আইন ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণ ও পরিচালনার উচ্চতর বিষয়গুলো পড়ানো হয়। এতে ব্যবসায় প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায় সম্পর্কিত প্রায় সব বিষয়ে পর্যাপ্ত স্টাডি-ক্রেডিট থাকায় আইবির শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক অধিকসংখ্যক বিষয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার আবেদনের সুযোগ পায় বা যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে ওঠে। কার্যকর উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির কৌশলগত ব্যবহারে টেক কোম্পানিগুলো অতীতে প্রতিষ্ঠিত সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে পেছনে ফেলে এখন ব্যবসার জগতে আইকনিক হয়ে উঠেছে। আইবির শিক্ষার্থীদেরও এমন উদ্ভাবনী ব্যবসার পরিকল্পনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মানসিকতা থাকা উচিত, যা ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। নিজের আগ্রহের বিষয়ে দেশে ও বিদেশে নানা ধরনের প্রতিষ্ঠানে কী কী পদে চাকরির সুযোগ আছে আর সেসবের জন্য কী ধরনের যোগ্যতা ও দক্ষতা চাওয়া হচ্ছে সেসব জেনে সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে ছাত্রাবস্থায়ই।

শুধু পাঠ্যপুস্তকেই এ বিভাগের শিক্ষা সীমাবদ্ধ নয়

টি এম তানজিমুল হক: সিনিয়র টেরিটরি ম্যানেজার

ইউনিলিভার বাংলাদেশ

‘‌বিজনেস কমিউনিকেশনের মতো আরো বেশকিছু কোর্সে শেখা জিনিস আজও প্রাত্যহিক জীবনে কাজে লাগছে। শুধু পাঠ্যপুস্তকেই এ বিভাগের শিক্ষা সীমাবদ্ধ ছিল না। বিজনেস কেস কম্পিটিশন এবং ফ্যাক্টরি ভিজিটের মতো কার্যক্রম এক ভিন্ন মাত্রার অভিজ্ঞতা যোগ করে। আইবির বেশকিছু অয়োজনে সংশ্লিষ্ট থেকে নেতৃত্ব দেয়া, শেখা ও চর্চার বড় সুযোগ হয়েছিল। পেশাগত জীবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছরের প্রতিটি কোর্সের বাস্তবিক প্রয়োগ দেখার সুযোগ হচ্ছে। সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা এ বিভাগ আমাকে দিয়েছে। সামগ্রিক এ শিক্ষা আজ যেভাবে কাজে লাগছে, ভবিষ্যতেও এর ব্যতিক্রম হবে না। প্রযুক্তির  প্রসার এবং মুক্তবাজার অর্থনীতির চর্চার মাধ্যমে বেশকিছু বহুজাতিক কোম্পানি যেমন দেশে এসেছে কিংবা আসার পথেই আছে, পাশাপাশি  বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে। আইবি থেকে আমার বেশকিছু পরিচিত সহপাঠী, সিনিয়র ও জুনিয়র এমন বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত, যেখানে বাংলাদেশের বাইরের মার্কেট নিয়ে তারা সরাসরি কাজ করছেন এবং নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এছাড়া আইবির শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই বেশকিছু সফল উদ্যোক্তা দেখতে পেয়েছি আমরা। আইবির শিক্ষার্থীদের সবেচেয়ে বড় সুযোগ কেবল ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সম্পর্কিত চাকরি কিংবা কর্মক্ষেত্র নয়। বরং নতুন কিছুকে বোঝা ও শেখার যে চর্চা এ ডিপার্টমেন্টে হয়, তা সব ছাত্রছাত্রীকে মোটামুটি সব ধরনের কাজের জন্যই প্রস্তুত করে তোলে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন