এনএসইউর মিডিয়া কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম

যেকোনো সময়ের চেয়ে মিডিয়া গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদা বেশি

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে মিডিয়া কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীরা ছবি: নুসরাত নাহার নাজনীন

কখনো কখনো মিডিয়ার অতি ব্যবহারজনিত বা অতি তথ্যজনিত ক্লান্তি বা অবসাদ পেয়ে বসলে আমরা হয়তো ভাবি সব ধরনের ডিভাইস থেকে একটু দূরে থাকতে হবে। কিন্তু কতক্ষণইবা পারি নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে! মানব জীবনের সঙ্গে মিডিয়া বা প্রযুক্তির এ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকাকে দার্শনিক ডোনা হার‍্যাওয়ে বলেছেন সাইবর্গ, যা সাইবারনেটিক (মেশিন) এবং অর্গানিজমের (মানুষ) সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। সে হিসেবে আমরা সবাই সাইবর্গ। যেখানে বলা হয়, মানুষ প্রযুক্তি তৈরি করে, সেই প্রযুক্তিই আবার মানুষকে তৈরি করে। 

যেমন ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও অন্য দেশের বিভিন্ন উদযাপন যেমন বিশ্ব মা দিবস, বিশ্ব বাবা দিবস, বন্ধু দিবস, নাথিং ডে মানে ‘কিছু না’ দিবস, বিশ্ব ঘুম দিবস, ব্যাকরণ দিবস বা গ্র্যামার ডেসহ আরো কত কী দিবস বা ঘটনা বাধ্য করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের অনুভূতি ব্যক্ত করতে। প্রশ্ন হলো আপনি কি প্রযুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে চান, নাকি আপনি প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান? এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর একজন ‘‌মিডিয়ায় সাক্ষর’ ব্যক্তিই ভালোভাবে দিতে পারেন। তবে বেশি বেশি মিডিয়া বা ডিভাইস ব্যবহার করলেই কেউ একজন ‘‌মিডিয়ায় সাক্ষর’ হয়ে ওঠে না। ‘‌মিডিয়া সাক্ষর’ বা ‘‌মিডিয়া লিটারেট’ হতে হলে কোনো ব্যক্তিকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে মিডিয়ার বিভিন্ন প্রত্যয়, তত্ত্বসহ এর প্রায়োগিক দিক সম্পর্কে জানতে হয়, যার মধ্য দিয়ে সে যেমন ফ্যাক্টচেকিংয়ের মাধ্যমে ফেক নিউজ থেকে সত্য নিউজকে আলাদা করতে পারবে, তেমনি মিডিয়া প্রযোজনা থেকে এর ব্যবহারিক অভিজ্ঞতাসহ পরিবেশনের রাজনীতিকেও বুঝতে পারবে। 

বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তির বিপ্লবের এ যুগে মিডিয়া ও যোগাযোগ শিল্প অত্যন্ত গতিশীল ও উদ্ভাবনশীল ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ খাতের প্রসার ও প্রাসঙ্গিকতা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে ৩০টিরও বেশি পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডিয়া, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় পড়ার সুযোগ রয়েছে। গত এক দশকে দেশে মিডিয়া সেক্টর বিকাশ লাভ করেছে। দেশে সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল, কমিউনিটি রেডিও, রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলা, ইংরেজি জাতীয় দৈনিক, অনলাইন পোর্টাল, ম্যাগাজিন, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক। সরকারি হিসাবমতে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে ৪৫টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, ২৮টি এফএম, ৩২টি কমিউনিটি রেডিও স্টেশন, ১ হাজার ২৪৮টি দৈনিক পত্রিকা ও শতাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল ছিল। এ সংখ্যা এখন আরো বেড়েছে। এছাড়া ক্রিয়েটিভ সেক্টরে অসংখ্য বিজ্ঞাপনী সংস্থা, ফিল্ম ও মিডিয়া প্রডাকশন হাউজ রয়েছে। সনাতন এ গণমাধ্যমের পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যমের আগমনে মিডিয়া গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদা বেড়েছে যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। 

অনেকে মনে করেন নিউ মিডিয়া আগমনের ফলে প্রথাগত মিডিয়া হুমকির মুখে, আবার কেউ মনে করেন নিউ মিডিয়া এবং এআইয়ের  যুগে প্রথাগত মিডিয়াও ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং অবারিত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে প্রথাগত মিডিয়া যেমন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এখনো তাদের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রেখেছে। একই সঙ্গে নিউ মিডিয়া যেমন ডিজিটাল প্লাটফর্ম, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন জার্নালিজম নতুন দিগন্ত তৈরি করেছে। সিনথেটিক মিডিয়া, জেনারেটিভ এআই, ফ্যাক্টচেকিং, ডাটা জার্নালিজম, ব্র্যান্ডিং, ডিজিটাল ক্লোনিং অথবা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের ওপর দক্ষতা অর্জন এখন সময়ের দাবি। 

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে মিডিয়া শিল্পের সংমিশ্রণ নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করেছে। যেমন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, এআই-ভিত্তিক কনটেন্ট নির্মাণ, সম্পাদনা ইত্যাদি। এছাড়া অ্যালগরিদমিক রিপোর্টিং, ডাটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং অ্যানালিটিক্স, ইন্টারঅ্যাকটিভ স্টোরিটেলিং, অটোমেটেড কনটেন্ট জেনারেশন, ইউ এক্স/ইউ আই ডিজাইন, ট্রেন্ড অ্যানালাইসিস, ডিজিটাল ফিল্মমেকিং, গ্র্যাফিকস ডিজাইন ও অ্যানিমেশনের ক্ষেত্রগুলোতে চাকরির জন্য প্রয়োজন হয় প্রযুক্তির ভাষা ও যোগাযোগে দক্ষতা, ডাটা বিশ্লেষণী এবং সৃজনশীল লেখালেখির দক্ষতা। এসব দক্ষতা অর্জন করলে চাকরি একজন মিডিয়া গ্র্যাজুয়েটকে খুঁজে নিতে বাধ্য। 

চতুর্থ শিল্প বিল্পবের এ যুগে চাকরির বাজারে টিকে থাকতে একজন গ্র্যাজুয়েটকে ক্রিটিক্যাল থিংকিং, যোগাযোগের দক্ষতা, মিডিয়া প্রোডাকশন, ডাটা বিশ্লেষণ ও সর্বোপরি গবেষণার দক্ষতা অর্জনে মিডিয়া শিক্ষার বিকল্প নেই। 

নতুন যুগের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া, কমিউনিকেশন এবং জার্নালিজম (এমসিজে) প্রোগ্রাম শুরু করে। যেখানে শিক্ষার্থীরা সমসাময়িক মিডিয়া প্রযুক্তি, তথ্য বিশ্লেষণ, যোগাযোগের কৌশলের ওপর হাতেকলমে প্রশিক্ষণ পায়। এ প্রোগ্রাম শিক্ষার্থীদের মিডিয়া শিল্পের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলো বুঝতে সাহায্য করে এবং তাদের ভবিষ্যতের কর্মজীবনের জন্য গড়ে তোলা হয়। এখানে শিক্ষা প্রদানের জন্য রয়েছে দেশী-বিদেশী অভিজ্ঞ শিক্ষক, যাদের প্রত্যেকেরই বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রয়েছে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি। এনএসইউর এমসিজে প্রোগ্রামে মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে শিক্ষা বৃত্তির পাশাপাশি প্রথম আলো-এনএসইউ মেধা বৃত্তি। ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে প্রতি বছর দুজন শিক্ষার্থীকে চার বছরের জন্য এ বৃত্তি দেয়া হয়।

ড. মো. হারিছুর রহমান

সহযোগী অধ্যাপক, মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম প্রোগ্রাম

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন