এনএসইউর মিডিয়া কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম

গণমাধ্যমে চাকরি এখন আকর্ষণীয় পেশা

অধ্যাপক ড. এসকে তৌফিক এম হক

অধ্যাপক ড. এসকে তৌফিক এম হক। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সোশিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের পরিচালক। পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সোশিওলজি বিভাগের অধীনে পরিচালিত হয় এনএসইউর চার বছর মেয়াদি স্নাতক প্রোগ্রাম ‘‌মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম’। সম্প্রতি অধ্যাপক হক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় ক্যারিয়ার ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম

কাজের পরিবেশ ও পেশা হিসেবে দেশের গণমাধ্যম কতটুকু বিকশিত হয়েছে?

১৯৯০ সালের পর বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বিকাশ আশাব্যঞ্জক। বিশেষ করে বেসরকারি গণমাধ্যম। সংখ্যার দিক বিবেচনায় এটি চোখে পড়ার মতো। কোয়ালিটি কিংবা পেশাদারত্ব নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে বাংলাদেশে বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছে মিডিয়া খাতে। গুণগত মানেও উন্নতি হয়েছে। কিন্তু পেশাদারত্বের জায়গায় আরো অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এ খাতে আকৃষ্ট করতে হলে আরো প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ প্রয়োজন। গ্র্যাজুয়েশন শেষে পেশাদারত্বের সঙ্গে কোন কাজটি করতে পারবে এমন ভাবনা আমি শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখতে পেয়েছি। 

তাহলে গণমাধ্যম কি এখনো প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়নি? 

আমার মনে হয় প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে একটি বড় সমস্যা রয়ে গেছে। যারাই গণমাধ্যমকে একটি ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে বেছে নিয়েছেন তারা কেউ কেউ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন। বড় ব্যবসায়ীরা গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কিন্তু তাদের অন্যান্য ব্যবসা যেমন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন ঠিক একইভাবে মিডিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের তাগাদা অনেকের মধ্যে ছিল না। যে কারণে দক্ষ জনশক্তিও ওইভাবে গড়ে ওঠেনি। মেধাবীদের এখানে আকৃষ্ট করার মতো যথেষ্ট শক্তি সঞ্চয় করেনি এখনো। কিছুটা সেন্সরশিপের ব্যাপার রয়েছে এবং বিগত দশকে সেটা কিছুটা বেড়েছে। যারা স্বাধীনভাবে লেখালেখি করতে চায় তাদের কাজের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। 

গণমাধ্যম চাকরির ক্ষেত্র হিসেবে কেমন? 

এটি খুবই আকর্ষণীয় পেশা। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এ বিষয়ে পড়াশোনায় অনেক আগ্রহ রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় ডিগ্রি নেয়ার পর কর্মক্ষেত্রে তার প্রথম বেতন কত হবে, কতদিন পর বেতন কত বাড়বে, ওপরে ওঠার ধাপ কী কী এসব ক্যারিয়ার প্ল্যান নিয়েও ভাবেন শিক্ষার্থী অভিভাবকরা। তবে এখানে ঝুঁকি ও ক্রিয়েটিভিটি দুইয়ের সমন্বয়েই কাজ করতে হয়। দক্ষতা থাকলে চাকরির অভাব হয় না। প্রতি বছরই নতুন নতুন হাউজে কাজের সুযোগ থাকে। কেউ নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিতে পারলে তাকে বাড়তি বেতন দিয়েও ধরে রাখতে চায়, আবার অন্য হাউজগুলোও তাকে চাকরির অফার করে। যারা নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিতে পারে তাদের জন্য হতে পারে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পেশা। 

একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে সাংবাদিকতায় গ্র্যাজুয়েটদের কী কী দক্ষতা থাকা দরকার?

যারা মিডিয়ায় কাজ করেন তাদের অনেকেরই হয়তো এ বিষয়ে একাডেমিক ডিগ্রি নেই। আবার যারা ফিল্ম নিয়ে পড়াশোনা করছেন তারা যে খুব ভালো ফিল্ম ডিরেক্টর হয়েছেন এমন উদাহরণও কম। বেশির ভাগই অন্য সেক্টর থেকে এসে ভালো করেছেন। এটি আসলে একটি সৃষ্টিশীল জগৎ। প্রথম শর্ত হলো একজন শিক্ষার্থীকে ক্রিয়েটিভ হতে হবে, যা ক্লাসরুম থেকে হওয়া সম্ভব নয়। এটি জন্মগতভাবে অথবা চর্চার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে। 

কথা বলা কিংবা লেখা উপস্থাপনে ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। সহপাঠ কার্যক্রমের মাধ্যমেও এগুলোর উন্নয়ন হতে পারে। এজন্য আমাদের প্রচুর এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস রয়েছে। সমসাময়িক বিষয় ও প্রযুক্তি জ্ঞানে সে কতটুকু আপডেট সে বিষয়ও বিবেচ্য। সমাজকে বোঝার দক্ষতাও থাকতে হবে।

একাডেমিয়া ও ইন্ডাস্ট্রির কোলাবোরেশন কতটা জরুরি?

মিডিয়া কমিউনিকেশনে পড়ে এ সেক্টরে আসলেই যে মিডিয়া সেক্টরে বিকাশ ঘটবে সেটা আমি মনে করি না। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়ার মধ্যে একটি কোলাবোরেশন থাকা দরকার। পৃথিবীর অন্য সব দেশেই রয়েছে। কেউ কেউ যৌথভাবে সার্টিফিকেট কোর্স ও ডিপ্লোমা কোর্স পরিচালনা করছে। ক্লাসরুম থেকে অনেক কিছু শেখার আছে যেগুলো ইন্ডাস্ট্রি থেকে আসতে পারে। এজন্য ক্লাসরুমকে নিউজরুমে নিয়ে যাওয়া আবার নিউজরুমকে ক্লাসরুমে নিয়ে যাওয়ার ব্যবহারিক কাজটি আমরা নিয়মিত করছি। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন