পড়ার বিষয় যখন জনসংখ্যা ও জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞান

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল রিলেশনস বিভাগের সামনে পিপিএইচএস প্রোগামের শিক্ষার্থীরা ছবি: সালাহউদ্দিন পলাশ

স্বাধীনতার পরপরই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে হাসপাতালভিত্তিক রোগ প্রতিকারমূলক স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধমূলক বা প্রিভেন্টিভ মেডিসিনের যাত্রা শুরু হয়। বিভিন্ন মেডিকেলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ‘কমিউনিটি মেডিসিন’ নামে যে বিষয় পড়ে সেটিও মূলত রোগ প্রতিরোধবিষয়ক কিন্তু মেডিকেল শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। পরবর্তী সময়ে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসংখ্যা বিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক আলাদা প্রোগ্রাম চালু করে। জনসংখ্যা বিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্য বিষয়কে একত্রিত করে ‘পপুলেশন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ সায়েন্সেস’ (পিপিএইচএস) নামে স্নাতক পর্যায়ে একটি ইউনিক প্রোগ্রাম চালু করে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি। পুরনো ও নতুন আবিষ্কৃত জনসংখ্যা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সমস্যাগুলো এবং এ সমস্যার সমাধান, প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় খুঁজে বের করার প্রয়াসেই এ প্রোগ্রাম।

বিশ্বে উন্নত দেশগুলোর তুলনায় দরিদ্র, অনুন্নত ও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোয় জনসংখ্যা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সমস্যাগুলো অনেক বেশি জটিল। এর সমাধানে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি জ্ঞান ও বিভিন্ন স্টকহোল্ডারের ভূমিকার সমন্বয় প্রয়োজন। বর্তমান সময়ের প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম জলবায়ু পরিবর্তন, ঘনঘন ও বৃহৎ পরিসরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দেশের অভ্যন্তরে বা দেশের বাইরে মাইগ্রেশন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন, পরিবেশ দূষণ, বিভিন্ন রোগের মহামারী বা অতিমারীসহ অন্যান্য নতুন ও পুরনো রোগের প্রাদুর্ভাব ইত্যাদি। জনসংখ্যার অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছা ব্যবহার জীববৈচিত্র্য ও ইকোসিস্টেমের বিনাশ, দারিদ্র্য ও সামাজিক অসমতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও এর ফলে মানুষের নিজ ভূমি এবং বাসস্থান ছেড়ে রিফিউজি হিসেবে অন্যত্র চলে যাওয়া এ ধরনের সমস্যাগুলো আগে উল্লিখিত সমস্যার তালিকা আরো দীর্ঘায়িত করেছে। বেশি জটিল করে তুলেছে। এই সমস্যাগুলোর একটি অন্যটির সঙ্গে এমন ওতপ্রোতভাবে জড়িত যে শুধু একটি সমস্যার একক সমাধান সম্ভব নয়। যেমন জনসংখ্যার অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি, সামাজিক, রাজনৈতিক, পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে। কারণ এ বাড়তি জনসংখ্যা দেশের সীমিত ভূমির ওপর অত্যধিক চাপ ফেলে, মানুষ বন উজাড় করে বাসস্থান বানায়, ঘনবসতি তৈরি করে যার ফলে জীববৈচিত্র্য লোপ পায়। পরিবেশের দূষণ ঘটে, মাটি, পানি, বায়ুদূষিত হয়, খাদ্যাভাব দেখা দেয়, স্বাস্থ্যের অবনতি ও বিভিন্ন সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তৈরি হয় নানা সমস্যা। 

এই ধরনের নানামুখী ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সমস্যায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে টেকসই সমাধান খুঁজে পেতে হলে গবেষণালব্ধ জ্ঞানার্জনে কোনো একক ডিসিপ্লিনের পক্ষে সম্ভব নয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির পিপিএইচএস প্রোগ্রামটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি আঙ্গিকে তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের যে বিষয়গুলো শেখানো হয় তার মধ্যে অন্যতম রোগতত্ত্ব ও মহামারীবিদ্যা, স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান, গবেষণা পদ্ধতি, জনসংখ্যাতত্ত্ব, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশগত স্বাস্থ্য, সামাজিক ও আচরণগত বিজ্ঞান, সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগতত্ত্ব, পেশাগত স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যবিষয়ক যোগাযোগ, প্রজনন স্বাস্থ্য, নগরায়ণ, শিল্পায়ন, মাইগ্রেশন বিষয়ক কোর্স, নগর স্বাস্থ্য, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ মোকাবেলা, বৈশ্বিক জলবায়ুজনিত সমস্যা ও সমাধান, মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন এবং পরিবার পরিকল্পনা ইত্যাদি। 

গ্র্যাজুয়েশন শেষে শিক্ষার্থীদের জনসংখ্যা ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। দেশের ভেতরে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও রয়েছে কাজের সুযোগ, বিসিএস দিয়ে সরকারি ক্যাডারভুক্ত চাকরিতে যোগদান করাও যাবে। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন জনসংখ্যা, জনস্বাস্থ্য, উন্নয়ন, শিক্ষা, দারিদ্র্যবিমোচন ইত্যাদি বিষয়ক সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ রয়েছে। গবেষক বা শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা ইউনিভার্সিটিতে যোগদান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ,  ইউএনএআইডিএস, সেভ দ্য চিলড্রেন, কেয়ার, কনসার্ন, এমএসএফ ও আইএলও ইত্যাদি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাজের সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিখ্যাত ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। জনসংখ্যা, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ মোকাবেলা ইত্যাদি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কলারশিপের সুযোগ বর্তমানে অনেক বেশি।

ডা. মারজিয়া জামান সুলতানা

সিনিয়র লেকচারার, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন