সাক্ষাৎকার

যেখানে কমিউনিটি আছে সেখানেই একজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দরকার

অধ্যাপক ড. মোবারক হোসেন খান। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল রিলেশনস বিভাগের চেয়ারপারসন। তার হাত ধরেই এ বিভাগে চালু হয় দেশের প্রথম জনসংখ্যা বিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ের সমন্বয়ে স্নাতক প্রোগ্রাম ‘‌পপুলেশন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ সায়েন্সেস’। সম্প্রতি এ বিষয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির পপুলেশন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ সায়েন্সেস প্রোগ্রামের লক্ষ্য কী?

মূল লক্ষ্য এমন কিছু গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা যারা রোগ প্রতিরোধের জন্য কাজ করবে, একটি সমাজকে কীভাবে হেলদি সোসাইটি করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করবে। ডেভেলপমেন্ট নির্ভর করে একটি দেশের মানুষ কতটা স্বাস্থ্যবান। দেশের মানুষ যদি নানা রোগে আক্রান্ত থাকে তাহলে উন্নয়ন করলেও তা টেকসই নয়। এমডিজি, এসডিজিতে যতগুলো লক্ষ্য ছিল তার সঙ্গে জনস্বাস্থ্যের ভূমিকা রয়েছে। অসুস্থ হওয়ার পর যে চিকিৎসা দেয়া হয় সেটাকে কিউরেশন বলে এবং তার আগের কাজগুলো প্রিভেনশন। প্রিভেনশনের গুরুত্ব অনেক বেশি। একটি কথা আছে প্রিভেনশনে যদি টাকা খরচ করেন তাহলে ১৬ টাকার সমপরিমাণ ফেরত আসে। হাজার টাকায় লিভার সিরোসিসের তিনটি টিকা দেয়া যায় কিন্তু যখন লিভার সিরোসিস রোগ হয় তখন লাখ লাখ টাকা খরচ হয়। এখানেই প্রিভেনশন বা প্রতিরোধের গুরুত্ব। আমাদের সমাজে অনেক রোগই প্রতিরোধ করা সম্ভব। এতে ডিজিজ বার্ডেন কমে আসবে। লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।

প্রোগ্রামের বিশেষত্ব কী?

জনসংখ্যা বিজ্ঞান জনস্বাস্থ্য দুটি বিষয়কে সমন্বয় করে প্রোগ্রামটি সাজানো হয়েছে, যা দেশে আর কোথাও নেই। একজন শিক্ষার্থী দুটি ফিল্ডের জন্যই গড়ে ওঠে। আমরা কোয়ালিটি ধরে রাখি। কোয়ালিটির সঙ্গে আপস করি না। শিক্ষার্থী ভর্তির সময় চেষ্টা করি প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে নেয়ার। দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করাও আমাদের বিশেষত্ব। অ্যাফোর্ডেবল টিউশন ফি এখানে। এমনভাবে টিউশন ফি রাখা হয় যেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও পড়তে পারে।

কী কী কোর্স পড়ানো হয়?

এটি একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি সাবজেক্ট। ১২৩ ক্রেডিটে মোট ৪১টি কোর্স পড়ানো হয়। প্রথম বছর কিছু মৌলিক কোর্স রয়েছে। দ্বিতীয় বছরে পপুলেশন সায়েন্স, পাবলিক হেলথ, এনভায়রনমেন্টএই তিনটি কোর কোর্স পড়ানো হয়। অর্থাৎ যেগুলো সব বিষয়ের সঙ্গেই জড়িত। দ্বিতীয় বর্ষ শেষে শিক্ষার্থীদের মেজর অনুযায়ী কোর্স নেয়া হয়। পপুলেশন সায়েন্স, পাবলিক হেলথ, এনভায়রনমেন্ট তিনটি বিষয়ে মেজর করার সুযোগ রয়েছে।

কী কী যোগ্যতা দরকার?

বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায়ে প্রশাসন যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা শিক্ষার্থীরাই পপুলেশন অ্যান্ড পাবলিক হেথল সায়েন্সেস প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবে। কিন্তু মিনিমাম জিপিএ থাকতে হবে। আবার যখন পরীক্ষার্থী বেশি হয় তখন সিলেকশন প্রক্রিয়া একটু কঠিন করা হয়।

বাংলাদেশে বিষয়ে গ্র্যাজুয়েটদের প্রয়োজনীয়তা কেমন?

প্রয়োজন সব জায়গায়ই। পাবলিক হেলথের মেইন ফোকাসই হলো কমিউনিটি হেলথ। একটি নির্দিষ্ট এরিয়া নিয়েই ভাবা হয়। যেমন ঢাকা সিটি কীভাবে হেলদি সিটি করা যায়, একটি গ্রামের জনসাধারণকে কীভাবে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যায়। একটি কমিউনিটিতে কত মানুষ, কত রকমের সমস্যা, সবার সমস্যাকে দূর করতে পাবলিক হেলথের প্রয়োজন। মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে কেন যেতে চায়? সামাজিক নিরাপত্তার জন্যই। আমাদের দেশেও এগুলো করতে পাবলিক হেলথের দরকার। বিংশ শতাব্দীতে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের গড় বয়স ৩০ বছর বেড়ে গিয়েছিল। তারা গবেষণা করে দেখেছে এই ৩০ বছরের মধ্যে ২৫ বছর অগ্রগতিতে পাবলিক হেলথের ভূমিকা ছিল। আর পাঁচ বছর বেড়েছিল চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য। মেডিকেল সায়েন্স শুধু তার জন্যই দরকার যে অসুস্থ আর পাবলিক হেলথ প্রত্যেক মানুষের জন্য দরকার। বাংলাদেশে কাজগুলো করার জন্যই প্রত্যেক স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্যাক্টরিতে একজন পাবলিক হেলথ অফিসার দরকার। যেখানে কমিউনিটি আছে সেখানেই একজন পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ দরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন