অধ্যাপক সেলিনা নার্গিস। কোষাধ্যক্ষ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি)। আইইউবিএটিতে নার্সিং বিভাগে পড়াশোনা, সুযোগ-সুবিধাসহ নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম
নার্সিং বিভাগ চালুর পেছনের গল্প জানতে চাই
দেশের শহর, মফস্বল ও বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনো তরুণদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিবিড়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে আইইউবিএটি। ১৯৯১ সালে দেশের প্রতিটি গ্রাম থেকে অন্তত একজন করে পেশাদার স্নাতক তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এম আলিমউল্যা মিয়ান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবিএটি প্রতিষ্ঠা করেন। স্বপ্নদর্শী এক মানব ছিলেন আইইউবিএটির প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ভেবেছিলেন কৃষি, ব্যবসা ও প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্য খাতেও উন্নতি করতে হবে। দক্ষ নার্স তৈরি করতে পারলে তারা সেবাদানের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পারবে। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে ২০০৫ সালে আইইউবিএটি নার্সিং প্রোগ্রামের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে।
দেশের বিভিন্ন নার্সিং কলেজ/ইনস্টিটিউটে বিএসসি ইন নার্সিং ডিগ্রি নেয়া যায়। কিন্তু একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আইইউবিএটির নার্সিংয়ের বিশেষত্ব কী?
বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল অনুমোদিত আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কারিকুলাম ও সিলেবাস অনুসরণ করা হয় বলে দেশে-বিদেশে চাকরি কিংবা উচ্চশিক্ষা নিতে কোনো সমস্যা হয় না। দেশী ও বিদেশী অভিজ্ঞ ও মেধাবী শিক্ষকমণ্ডলী দ্বারা পরিচালিত এবং দেশী শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ‘ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং মেন্টরস’ দ্বারা প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসের জন্য রয়েছে কোর্সভিত্তিক বিশেষায়িত হাসপাতাল। আইইউবিএটির কলেজ অব নার্সিংয়ের সিনিয়র উপদেষ্টা কানাডিয়ান ডা. ক্যারেন লন্ড। তার হাত ধরেই নার্সিং কারিকুলাম প্রণয়ন হয়। শিক্ষকদের মানোন্নয়নে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন তিনি। ক্যারেন লন্ডসহ অন্যান্য কানাডিয়ান শিক্ষকরা অনলাইনে কোর্সভিত্তিক নার্সিং শিক্ষকদের মেন্টরশিপ দিয়ে থাকেন, এতে ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের শিক্ষাদান প্রক্রিয়ার মানোন্নয়ন হচ্ছে। এছাড়া তিনি প্রতি সোমবারে বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে একটি অনলাইন মিটিং করে, যেখানে একাডেমিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করছেন। এ বিভাগের প্রতি তারা কীভাবে আকৃষ্ট হলেন?
আইইউবিএটিতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নার্সিং কারিকুলাম ও সিলেবাস অনুসরণ করা হয়। কমনওয়েলথ সদস্যভুক্ত যেকোনো দেশে আইইউবিএটির শিক্ষার্থীদের ক্রেডিট স্থানান্তরের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ১১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আইইউবিএটির সমঝোতা চুক্তি রয়েছে। এ সমঝোতা চুক্তির ফলে গবেষণা কার্যক্রম এবং স্বল্পমেয়াদি শিক্ষার্থী-ক্যাম্প পরিচালনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষক বিনিময় করা হয়।
তাদের জন্য বিশেষ কোনো সুবিধা রয়েছে কী?
যেহেতু আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো হয়, তাই আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো যেমন নেপাল, ভুটান থেকে প্রতি বছর অনেক শিক্ষার্থী আইইউবিএটিতে নার্সিং পড়তে আসে। প্রতি বছর আইইউবিএটিতে সর্বোচ্চ ৪২ জন (বিদেশী শিক্ষার্থী কোটা) শিক্ষার্থী নার্সিং কোর্সে ভর্তি হতে পারে। শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক ফলাফলের ভিত্তিতে ১০ শতাংশ থেকে শতভাগ স্কলারশিপ প্রদান করা হয়। তবে কোনো শিক্ষার্থী স্কলারশিপ পেলে বিনা খরচে আইইউবিএটিতে পড়ার সুযোগ পায় এবং তাদের জন্য ফ্রি হোস্টেল সুবিধাও রয়েছে।
বিভাগটির বয়স এখন প্রায় দুই দশক। গ্র্যাজুয়েটরা কর্মক্ষেত্রে কেমন করছেন?
দেশী ও বিদেশী প্রতিষ্ঠানে সফলতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে আইইউবিএটির নার্সিং স্নাতকরা। দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব হাসপাতাল, ক্লিনিক, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার সেন্টারসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানেই আইইউবিএটির নার্সরা চাকরি করছে। আইইউবিএটির নার্সিং স্নাতকদের এমনভাবে তৈরি করা হয়, তারা ইংরেজি ভাষা জ্ঞান ও কম্পিউটার ব্যবহারে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করে। এছাড়া একজন দক্ষ নার্সের যেসব দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকা দরকার তা আমাদের প্রত্যেক গ্রাজুয়েটেরই রয়েছে। আমাদের নার্সিং প্রোগ্রাম চার বছরের হওয়ার কারণে গ্র্যাজুয়েটদের সনদ চার বছরের সমমান হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। আইইউবিএটি থেকে নার্সিং ডিগ্রি নিয়ে বিদেশেও চাকরি করছে আমাদের অনেক গ্র্যাজুয়েট। বিগত বছরে আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, নেপালসহ অনেক দেশেই আইইউবিএটির নার্সিং গ্র্যাজুয়েটরা সুনামের সঙ্গে চাকরি করে যাচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশের অনেক নাম করা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রিও নিচ্ছে। গত বছর আইইউবিএটির নার্সিং গ্র্যাজুয়েট মোহাম্মদ আলী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন গবেষণা শিক্ষা বৃত্তি পেয়েছে। আইইউবিএটি থেকে নার্সিং ডিগ্রি অর্জন করা বিদেশী শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ দেশে সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
মেডিকেল কলেজ, নার্সি কলেজ/ইনস্টিটিউটে বিএসসি ইন নার্সিং ডিগ্রি দেয়, কিন্তু হাসপাতালসংশ্লিষ্টতা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নার্সিংয়ে পড়াশোনা ও পাঠদান চ্যালেঞ্জিং মনে করেন কি?
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সারা বিশ্বেই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা দুটো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক। অন্যান্য বিষয়ের মতোই আইইউবিএটি নার্সিংয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাসের পাঠদানের পাশাপাশি ব্যবহারিক ক্লাসেও জোর দিয়ে থাকি। রয়েছে আধুনিক ল্যাব। এছাড়া শিক্ষার্থীরা যাতে হাসপাতালে গিয়ে সরাসরি রোগী দেখে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন, ল্যাব সম্পর্কে ধারণা নেয়ার জন্য বিভিন্ন স্বনামধন্য হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা চুক্তি রয়েছে। এ হাসপাতালে আমাদের শিক্ষার্থীরা মাঠ পর্যায়ে কাজ এবং ইন্টার্নশিপও করতে পারে। অনেক সময় হাসপাতালগুলো নিজে থেকেই ইন্টার্নের জন্য শিক্ষার্থী চেয়ে থাকে।