সাক্ষাৎকার

আমাদের নার্সিং গ্র্যাজুয়েটরা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের সেবার ব্রত নিয়ে গড়ে ওঠে

শুভাশীষ দাস বালা। সহকারী অধ্যাপক ও কো-অর্ডিনেটর, কলেজ অব নার্সিং, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি)। আইইউবিএটিতে নার্সিংয়ে পড়াশোনা, পাঠ্যক্রম ও ক্যারিয়ারসহ নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে

গতানুগতিক নানা পেশার বাইরে নার্সিং পেশা সেবামূলক কাজ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বিশেষ কোনো মানসিক প্রস্তুতির দরকার রয়েছে কি?

‘দ্য লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’খ্যাত ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের নিঃস্বার্থ সেবার গল্প হয়তো আমরা অনেকেই জানি। ক্রাইমিয়ার যুদ্ধে বহু আহত সৈনিকদের সেবায় আত্মনিবেদন করে তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। হ্যারিকেন নিয়ে রাতের আঁধারে তিনি ছুটে গেছেন আহতদের দ্বারে দ্বারে। এরপর থেকেই বিশ্ব তাকে ‘দ্য লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ নামে আখ্যায়িত করে। অনেকেই এ গল্পে অনুপ্রাণিত হয়ে বড় হয়ে নার্সিংকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। নার্সিং একটা সেবামূলক পেশা। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই রয়েছে নার্সের চাহিদা। বর্তমানে ক্যারিয়ার বেছে নিতে নার্সিং পেশার জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। তবে নার্সিং পেশাটি একটি দায়িত্বের পেশা। এ পেশায় আসতে হলে মানুষকে সেবা করার মানসিকতা থাকতে হবে। নার্সিংয়ে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা মানসিক প্রস্তুতি থেকে ভবিষ্যতে উপকৃত হয়। কারণ তারা অসুস্থদের যত্ন ও সহায়তা প্রদান করবে। অন্যদের প্রতি সহমর্মিতা ও সাহায্য করার মনমানসিকতা নার্সিংয়ে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের অপরিহার্য গুণাবলি হওয়া উচিত। আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা এসব গুণাবলির পাশাপাশি নিজের অন্তর আত্মায় একজন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের সেবার ব্রত নিয়েই গড়ে ওঠে।

সেবামূলক এ পেশায় কাদের আসা উচিত বলে মনে করেন?

যারা অন্যদের প্রতি যত্নশীল, সহানুভূতিশীল এবং মানুষকে সাহায্য করার জন্য নিবেদিত, তাদের নার্সিংয়ে ক্যারিয়ার বিবেচনা করা উচিত। যারা মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে চায়, তাদের জন্য এ পেশা।

যেকোনো বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করে ডিপ্লোমা কোর্স করেও নার্সিং পেশায় আছেন অনেকে। আবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করে বিএসসি কোর্স সম্পন্ন করেও এ পেশায় আছেন। এ দুইয়ের মধ্যে একাডেমিক বা কর্মক্ষেত্রে ব্যবধান কোথায়?

একজন ডিপ্লোমা নার্স এবং একজন বিএসসি নার্সের মধ্যে একাডেমিক জ্ঞানের গভীরতার ব্যবধান রয়েছে। বিএসসি নার্সদের সাধারণত নার্সিং থিউরি এবং রিসার্সে বিস্তৃত ধারণা থাকে। তবে নার্স হিসেবে উভয়ই মানসম্পন্ন সেবা প্রদান করতে পারে। বিএসসি নার্সদের নেতৃত্ব এবং বিশেষ ভূমিকার জন্য পদোন্নতিসহ আরো অনেক সুযোগ থাকতে পারে। বিএসসি নার্সদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে শিক্ষকতা পেশায় সম্পৃক্ত হওয়া যায়। ক্রমান্বয়ে দেশে ও বিদেশে মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রয়েছে। পক্ষান্তরে, যারা ডিপ্লোমা কোর্স করে, বিএসসিদের সমমান হওয়ার জন্য তাদের ক্ষেত্রে দুই বছর মেয়াদি পোস্ট বেসিক বিএসসি কোর্স সম্পন্ন করতে হয়।

আইইউবিএটির কোর্স কারিকুলাম নিয়ে বলুন...

আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নার্সিং কারিকুলাম ও সিলেবাস অনুসরণ করা হয়। প্রতিটি বিভাগে শিক্ষার মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কন্টিনিউয়াস কোয়ালিটি ইম্প্রুভমেন্ট (সিকিউআই) প্রক্রিয়ার অধীনে নিয়মিত তত্ত্বাবধান করা হয়। আউটকাম বেজড এডুকেশনের আলোকে সব প্রোগ্রামের পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে। চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সে ছয় মাস মেয়াদি মোট আটটি সেমিস্টার রয়েছে। কোর্স চলাকালীন নার্সিং দক্ষতায় পারদর্শী হতে ল্যাবে এবং উল্লেখিত হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল প্রাকটিসের সুযোগ রয়েছে। কোর্স শেষে রয়েছে ছয় মাসের ইন্টার্নশিপ।

দেশে-বিদেশে নার্সিংয়ের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার সম্ভাবনা কেমন?

বাংলাদেশ ও বিদেশে নার্সিং ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা আশাব্যঞ্জক। বাংলাদেশে নার্সরা হাসপাতাল, ক্লিনিক ও জনস্বাস্থ্যের ভূমিকায় কাজ করতে পারে। যোগ্যতা সম্পন্ন নার্সদের শিক্ষকতা পেশায় কাজ করার সুযোগ রয়েছে। নার্সিং একটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং চাহিদাপূর্ণ পেশা। উন্নত দেশগুলোয় ভাষা দক্ষতা এবং নার্সিংয়ের লাইসেন্স পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার মাধ্যমে নার্স হিসেবে কাজ করার এবং স্থায়ী বসবাসের সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি বৃত্তি নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তো রয়েছেই। আইইউবিএটির শতভাগ নার্সিং গ্র্যাজুয়েট নার্স হিসেবে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। অনেকেই নার্সিং কলেজে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হয়েছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও চাকরির জন্য পাড়ি জমিয়েছেন অনেক গ্র্যাজুয়েট।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন