ইউআইইউর গবেষণা ইনস্টিটিউট

ইউআইইউকে গবেষণাবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে চাই

অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া, উপাচার্য, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)

অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া নবনিযুক্ত উপাচার্য, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে বিএসসি ও এমএসসি সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি জাপানের টোহোকু ইউনিভার্সিটি থেকে এমএস ও পিএইচডি করেন। তিনি দীর্ঘ ২০ বছর বুয়েটের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম

প্রতিষ্ঠার পর গত দুই দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন কী?

দুই দশক দেখতে দেখতেই চলে গেছে। ২০০৩ সালে মাত্র ৭৬ শিক্ষার্থী নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা। মাত্র দুই-তিনটি বিভাগ ছিল। সেখান থেকে এখন চারটি অনুষদ। অনেক বিভাগ আছে, প্রোগ্রাম চলছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন আট হাজারের কাছাকাছি। আমাদের মূল অর্জন গবেষণার ক্ষেত্রে। শিক্ষকরা পাঠদানের পাশাপাশি গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে যদি বলি, কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ এবং এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজে তাদের অনেক বড় অর্জন রয়েছে। বিশেষ করে মঙ্গল গ্রহের মিশনভিত্তিক ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় পরপর দুবার এশিয়ায়  চ্যাম্পিয়ন হওয়া এবং বিশ্বে তাদের যে অর্জন তা আমাদের জন্য অবিস্মরণীয়। তাছাড়া আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। সেসব প্রতিষ্ঠানে তাদের যে অর্জন সেগুলোকেও আমরা আমাদের বড় অর্জন বলে মনে করি। এছাড়া কিউ-এস ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ভালো করেছে। বাংলাদেশের মোট ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় কিউএস র‍্যাংকিংয়ে স্থান পেয়েছে। তার মধ্যে ইউআইইউর অবস্থান অত্যন্ত ভালো। কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাংকিং ২০২৪-এ পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ইউআইইউর অবস্থান পঞ্চম। শুধু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তৃতীয়। টাইমস হায়ার এডুকেশন ইমপ্যাক্ট র‍্যাংকিং ২০২৩-এ ইউআইইউর অবস্থান দ্বিতীয়। মাত্র ২০ বছরেই নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির পরই আমাদের অবস্থান। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। 

প্রতিষ্ঠার পর ইউআইইউ থেকে কয়েক হাজার গ্র্যাজুয়েট বের হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে তাদের অবস্থান কেমন?

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। তারা গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, ইন্টেলসহ বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানিতে দেশে-বিদেশে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। দেশের বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন অনেক শিক্ষার্থী। 

শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে?

আমাদের এখানে প্রায় ২৬টি ক্লাব-ফোরাম রয়েছে। শিক্ষার্থীরা মোটামুটি সবাই কোনো না কোনোভাবে এ ক্লাব বা ফোরামের মাধ্যমে সহশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। তারা শীতের সময় শীতার্তদের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানুষের পাশে থাকা ও সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরা নিজেরা গান, নাচ, কবিতা, বক্তৃতাসহ বিভিন্ন পারফর্ম করে। 

উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয় গবেষণাকে। এক্ষেত্রে ইউআইইউর নীতিগত অবস্থান কী?

আমাদের লক্ষ্য প্রাইভেট এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মিলে গবেষণায় আমরা এক নম্বর হতে চাই। এটা আমাদের লক্ষ্য। সেই চিন্তা করে ২০১৯ সাল থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টি প্রতি বছর ৩ কোটি টাকা খরচ করতে সম্মতি দিয়েছে। এটা সরঞ্জাম কেনার জন্য নয়। শুধু গবেষণা, গবেষণাপত্র, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে গবেষণা প্রকাশের ফি এবং গবেষণা পরিচালনার জন্য। ফলে আমাদের জন্য এটা একটা বড় সহযোগিতা হয়েছে। অন্যদিকে আমাদের শিক্ষকরা যে গবেষণা করবেন তাদের কোর্স লোড সর্বনিম্ন। কারণ যিনি গবেষণা করবেন তাকে যিনি গবেষণা করবেন না, তার সমান ক্লাস, পরীক্ষার চাপ দেয়া যাবে না। গবেষণার জন্য তার আলাদা সময়ের প্রয়োজন পড়বে। সেই বিবেচনাটুকুও বিশ্ববিদ্যালয় করছে। গবেষণা করা এবং গবেষণাপত্র প্রকাশের জন্য যে টাকার প্রয়োজন, সেটি আমরা দিয়ে থাকি। তাছাড়া একজন শিক্ষক যদি একটি গবেষণা করে থাকেন, সেটি যখন মানসম্পন্ন জার্নালে প্রকাশ হয় তখন ওই শিক্ষককে আলাদা সম্মানীও দেয়া হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও গবেষণার খরচ ইনসেনটিভ হিসেবে দেয়া হয়। যাতে তারা গবেষণায় উৎসাহ পায়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ২০১৯ সালের পর থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বহু গুণ বেড়েছে। আমরা চাই ভবিষ্যতে এটি একটি গবেষণাবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে উঠুক। 

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইউজিসি পিএইচডির অনুমোদন দেয়নি। এটি গবেষণার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছেন কি?

বিশ্বের যেকোনো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালে দেখবেন সেখানে মাস্টার্স বা পিএইচডি শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির অনুমোদন দেয়া আছে কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কোনোটিতেই সেটি নেই। এক্ষেত্রে ইউজিসি এবং সরকারের কাছে আমার অনুরোধ দয়া করে হাত-পায়ের বাঁধনগুলো খুলে দিন। এখন যে গুণগত মানের কথা বলা হচ্ছে, তা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে যতটুকু প্রযোজ্য, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও ততটুকুই প্রযোজ্য। এখানে অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যারা ভালো মানের পিএইচডি গবেষণা করার সক্ষমতা রয়েছে। আমি নিজেও একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সেখানে (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) বসে যদি আমি পিএইচডি দিতে পারি, তাহলে এখানে (প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়) বসে কেন পারব না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি সুযোগ দেয়া হয়, বাঁধনগুলো যদি খুলে দেয়া হয়, তাহলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও গুণগত মানসম্পন্ন পিএইচডি হবে বলে আমি মনে করি।

ইউআইইউর নবনিযুক্ত উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এবং গবেষণার মানোন্নয়নে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভালো শিক্ষার্থী যেমন আসে, তেমনি এখানে কিছু দুর্বল শিক্ষার্থীও আসে। এখানে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অকৃতকার্য হচ্ছে তাদের জন্য ফ্রিতে টিউটোরিয়ালের ব্যবস্থা করব। এবং যারা এখানে ভালো শিক্ষার্থী তাদের জন্য পার্টটাইম টিচিংয়ের ব্যবস্থা করব। যাদের সিজিপিএ ভালো, তাদের দিয়ে তুলনামূলক যারা দুর্বল তাদের ক্যাম্পাসের মধ্যেই পড়ানোর ব্যবস্থা করব। তাহলে দুটো সুবিধা। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের মধ্যেই একটা আয়ের সুযোগ পাবে একই সঙ্গে দুর্বল শিক্ষার্থীরা যেসব বিষয় শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ করতে সংকোচ বোধ করে তারা সিনিয়রদের কাছে শিখতে পারবেন। আরেকটা উদ্যোগ নিচ্ছি, যারা ভালো ছাত্রছাত্রী তাদের ইন্ডাস্ট্রিবান্ধব করে কিছু টুলস শেখাব। যেটা কর্মক্ষেত্রে তাদের প্রয়োজন হবে। আমরা আসলে কারিকুলামের মধ্যে থেকে সবকিছু শেখাতে পারি না। কারণ নিয়মিত যে স্ট্রাকচার সেটির বাইরে যেতে গেলে আমাদের জন্য কিছু সমস্যা আছে। তৃতীয় পরিকল্পনা হলো গবেষণা। আন্ডারগ্রেডে যাতে শিক্ষার্থীরা এক-দুটি গবেষণা পাবলিকেশন করতে পারে সেটি আমি চেষ্টা করব। এতে করে শিক্ষার্থীদের বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গবেষণা বা পিএইচডিতে সহজে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন