পদ্মা সেতুর প্রভাবে দেশের নৌপথ অনেকটাই জৌলুস হারিয়েছে। নৌপথের সুদিন ফেরাতে নতুন নতুন নৌপথ সৃষ্টি, ফেরি সার্ভিস চালুসহ নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যিক যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের বিকাশেও ভূমিকা রাখছে দেশের নৌপথ। নৌ যোগাযোগের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আল ফাতাহ মামুন
গত এক দশকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অর্জন সম্পর্কে জানতে চাই।
গত এক দশকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃক বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৩ হাজার ৭০০ কিলোমিটার নতুন নৌপথ খনন করা হয়েছে। তাছাড়া নিয়মিত প্রতি বছর ছয় হাজার কিলোমিটার নৌপথ সংরক্ষণ ও ড্রেজিং সম্পন্ন করা হয়। ড্রেজিং সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩৮টি ড্রেজারসহ ২৩টি নদী সংরক্ষণ সহায়ক জলযান সংগ্রহ করা হয়েছে। নৌপথে আধুনিক ও বেশি সক্ষমতাসম্পন্ন নৌযান সংযোজন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করায় নৌদুর্ঘটনা প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। অভ্যন্তরীণ নৌপথে নতুন ১৬টি নদীবন্দর স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি বন্দর কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে। নৌপথে যাত্রী ও মালামাল সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রায় ৫০০টি নতুন পন্টুন স্থাপনসহ ২০ হাজার নৌসহায়ক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। নৌদুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজে দুটি উদ্ধারকারী জাহাজ সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্য অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নৌপথে যাত্রী ও মালপত্র পরিবহন ব্যবস্থা আরো সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও জনবান্ধব হয়েছে।
পদ্মা সেতুর প্রভাবে দেশের নৌ যোগাযোগের চাহিদা কমেছে। আগামীতে নৌ যোগাযোগের জৌলুস ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বিশেষ কোনো উদ্যোগ আছে কি?
নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গত ১ জানুয়ারি ধাওয়াপাড়া, জৌকড়া (রাজবাড়ী)-নাজিরগঞ্জ (সুজানগর, পাবনা) রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার জন্য এরই মধ্যে গত ৯ সেপ্টেম্বর ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর রৌমারী-চিলমারী (কুড়িগ্রাম) ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়েছে। সদ্য চালু ফেরি রুটের সুফল ভোগ করছেন উত্তরবঙ্গে পণ্য পরিবহনসংশ্লিষ্টরা। চাহিদা মোতাবেক এ রুটে ফেরির সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এছাড়া বামনা-বদনখালী (বরগুনা); বগীবাজার-চালিতাতলী (বরগুনা) জেলা; চট্টগ্রাম সন্দ্বীপ; রাঙ্গাবালী উপজেলার আগুনমুখা নদীতে পানপট্টি-কোড়ালিয়া রুটে সি-ট্রাক কাম ফেরি সার্ভিস চালু করার জন্য সমীক্ষা কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা ভোলা লালমোহন উপজেলার নাজিরপুর থেকে পটুয়াখালীর বাউফলের কালাইয়া এবং চেয়ারম্যানঘাট-হাতিয়া-মনপুরা তজুমদ্দীন রুটে ফেরি সার্ভিস করার কথাও ভাবছি। এজন্যও সমীক্ষাসহ অন্যান্য প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। এসব রুটে ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখব। আশা করি, যাত্রী চাহিদার আলোকে নতুন নতুন ফেরি সার্ভিস চালু করার মাধ্যমে আগামীতে নৌ যোগাযোগের জৌলুস ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
নৌ যোগাযোগের জৌলুস ফিরিয়ে আনতে আমাদের অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) তত্ত্বাবধানে ‘৩৫ জলযান নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় নৌপথে পর্যটকদের জন্য তিনটি ক্রুজ শিপ, ১২টি আধুনিক ফেরি, আটটি উন্নতমানের সি-ট্রাক, চারটি উপকূলীয় যাত্রীবাহী জাহাজসহ বিভিন্ন ধরনের মোট ৩৫টি নৌযান নির্মাণাধীন রয়েছে। এগুলো বহরে যুক্ত হলে নৌপথে উন্নত সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
এছাড়া নৌ যোগাযোগের জৌলুস ফিরিয়ে আনার জন্য বিআইডব্লিউটিসির নৌযান ‘এমভি মধুমতী’"অংশীদারত্বের ভিত্তিতে রিভার ক্রুজ পরিচালনা করার লক্ষ্যে পাওয়ার বিটস লিমিটেডের সঙ্গে বিআইডব্লিউটিসির গত ১২ সেপ্টেম্বর দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে। এ চুক্তির ভিত্তিতে নৌযানটি ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদীতে এরই মধ্যে নৌযানটি গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে রিভার ক্রুজ পরিচালনা শুরু করেছে। যা ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যম, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
আমরা নৌপথে বিআইডব্লিউটিসির পরিচালিত বিভিন্ন সার্ভিস নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালনার জন্য বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে সমন্বয় করে সব মৌসুমে প্রয়োজনীয় ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নৌ-রুটের নাব্যতা এবং ঘাট পন্টুনের সঠিক স্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ অব্যাহত রাখছি।
প্রধান প্রধান ছয়টি নৌপথের চারটিই বাংলাদেশের নৌসীমানায় রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের নৌপথে ভারতের নির্ভরতা বাড়ছে। বাংলাদেশ এ সুবিধা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছে কি? এ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
বাংলাদেশ-ভারত অভ্যন্তরীণ নৌপথ অতিক্রমণ ও বাণিজ্য প্রটোকলের (PIWT&T) আওতায় বর্তমানে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৭০টি। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত নৌসচিব পর্যায়ের সভার সিদ্ধান্তের আলোকে চিলমারী (বাংলাদেশ)-ধুবরী (ভারত) নৌপথে ভুটানের স্টোন চিপস পরিবহন চলমান রয়েছে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত চিলমারী-ধুবড়ী নৌপথে ১৯১টি ট্রিপের মাধ্যমে ভুটানের ৩৬ হাজার মেট্রিক টন পাথর এবং ভারত থেকে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন কয়লা ও সমপরিমাণ Sponge আয়রন, করিমগঞ্জ-জকিগঞ্জ নৌপথে তিনটি ট্রিপের মাধ্যমে ৮৮৪ মেট্রিক টন পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করা হয়েছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ থেকে ২৫৮ মেট্রিক টন ওয়েস্ট কটন ভারতের ধুবরীতে রফতানি করা হয়েছে। বিদ্যমান প্রটোকলের আওতায় আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশ ও ভারতীয় নৌযানের বর্তমান অনুপাত ৯২:০৮। PIWT&T-এর আওতায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশী নৌযান ব্যবহার করে ৪ হাজার ১৫৬টি ট্রিপের মাধ্যমে ৩৮ লাখ ১৯ হাজার ৪৪৯ মেট্রিক টন এবং ভারতীয় নৌযান ব্যবহার করে ১৭১টি ট্রিপের মাধ্যমে ৩ লাখ ১০ হাজার ২১৩ মেট্রিক টনসহ মোট ৪১ লাখ ২৯ হাজার ৬৬২ মেট্রিক টন পণ্য পরিবাহিত হয়েছে। তাছাড়া ভারতের পর্যটন, যোগাযোগ অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ভারতীয় ও ইউরোপীয় পর্যটকরা নৌপথে বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন। সর্বোপরি ভারত-বাংলাদেশের নৌ যোগাযোগ সুবিধা নিয়ে নৌপথে নিত্যপণ্য আমদানি এবং দেশের পণ্য রফতানি অনেকাংশে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশের নৌ যোগাযোগের মাধ্যমে বাণিজ্য ও পর্যটন ক্ষেত্র বৃদ্ধির জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
বেশ ঘটা করে উদ্বোধনের এক সপ্তাহের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় সদরঘাট পানি শোধনাগার। এটা কি নতুন করে চালু করার কোনো পরিকল্পনা আছে?
ঢাকা সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা ওয়াসার সুয়ারেজ পানি বিশুদ্ধ করে বুড়িগঙ্গা নদীতে ধারণ করার লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে সদরঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের পানির স্রোত তীব্র হওয়ায় স্বল্প পরিসরে পাইলট প্রকল্প চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে পানির স্রোতের তীব্রতা এবং আনুষঙ্গিক বিষয় বিবেচনায় এনে অধিক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন শোধনাগার প্রকল্প গ্রহণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
পদ্মা সেতুর প্রভাবে যাত্রী কমলেও পোস্তগোলার দিকে সদরঘাটের অবকাঠামো বড় হচ্ছে। এটা কি নতুন করে ভাবার অবকাশ আছে বলে মনে করেন?
পদ্মা সেতু চালুর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীবাহী লঞ্চে কিছু যাত্রী কমলেও নৌ যোগাযোগের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে মালপত্র পরিবহন ব্যবস্থা যথাযথভাবে চালু রয়েছে। বরং উপকূলীয় এলাকায় নৌ যোগাযোগ আরো বিস্তৃত হচ্ছে। ভোলা-বেতুয়া, চরফ্যাশন-ভোলা মজুচৌধুরীরহাট, ভাসানচর, ভোলা, পটুয়াখালী, কাজীরহাট, চট্টগ্রাম, ফেনী, সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা চিলমারী, কুড়িগ্রাম, রৌমারী, বালাসী, সিরাজগঞ্জে নদীবন্দর, ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমান সরকার নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে এতটাই গুরুত্ব দিয়েছে যে লো হাইট ব্রিজ প্রয়োজনে ভেঙে উঁচু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নদীপথ ব্যবহার করে মালপত্র ওঠানামার সুবিধার্থে সব ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা হয়েছে। বড় বড় জাহাজ নির্মাণ শিল্প গড়ে উঠেছে। সার্বিকভাবে নৌপথে সারা দেশের যাত্রীর পাশাপাশি সাশ্রয়ী মূল্যে মালামাল পরিবহনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পোস্তগোলাসহ পানগাঁওয়ে অভ্যন্তরীণ কার্গো টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে।
নৌপথ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধির টার্গেট বাস্তবায়ন হয়েছে কতটুকু?
অভ্যন্তরীণ নৌপথের নাব্যতা উন্নয়নে ৩ হাজার ৭০০ কিলোমিটার নৌপথ নতুনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে এটা ১০ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করার প্রকল্প চলমান রয়েছে। ফলে আগের ৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটার নৌপথ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে নৌপথের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। তাছাড়া প্রতি বছর নিয়মিতভাবে অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
ঢাকার চারপাশের বৃত্তাকার নৌপথ চালু করলেও বারবার বন্ধ হয়ে যায়। কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে কি?
সারা দেশের অভ্যন্তরীণ নদীর তীরভূমি দখল-দূষণমুক্ত রাখার লক্ষ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে প্রায় ৩০০ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা ভূমিতে সাত হাজার সীমানা পিলার স্থাপন, ১০ হাজার বৃক্ষরোপণ, ৪০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, ছয়টি জেটি, কি-ওয়াল এবং তিনটি ইকোপার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। নদী দূষণ রোধকল্পে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদী থেকে বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা শহরের চারদিকে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে তুরাগ নদী থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়া টঙ্গী থেকে নৌপথে যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যে স্পিডবোট সার্ভিস চালু হয়েছে।|ঢাকার চারদিকে পণ্যবাহী নৌযানের মাধ্যমে ইট, বালি, সিমেন্ট, পাথর এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পরিবাহিত হচ্ছে। চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে তা আরো বৃদ্ধি পাবে।
দেশের নদ-নদীর তালিকা প্রকাশ করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন (এনআরসিসি)। এ নিয়ে বেশ বিতর্ক হচ্ছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
এনআরসিসির তালিকায় অসামঞ্জস্য থাকতে পারে। দেশে নদ-নদীর সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি হবে। নদী রক্ষা কমিশনের গবেষণাকাজের এরিয়া হয়তো এ নদ-নদীগুলো নিয়ে ছিল। নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে সংরক্ষিত আছে। আমরা ভিন্ন একটি প্রজেক্ট নিয়েছি—সারা দেশের নদ-নদী উদ্ধার ও নাব্যতা বৃদ্ধি নিয়ে। এ কাজ সমাপ্ত হলে আমরা নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা পেয়ে যাব। অবশ্যই দেশে নদ-নদীর সংখ্যা আরো বেশি হবে। শুধু সুন্দরবনেই নদী আছে ২১৮টি। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তালিকায় কয়টি নদী আছে তাদের জিজ্ঞাসা করে দেখুন। এটা নদীর প্রকৃত সংখ্যা না-ও হতে পারে। আমরা বাংলাদেশের পুরনোসহ সব নদী ম্যাপ ধরে উদ্ধারের কাজ শুরু করেছি। এটা আমরা করব মৌজার ম্যাপ ধরে।
৫০০ নদ-নদীর সীমানা নির্ধারণের একটি প্রকল্পও একনেকে পাস হওয়ার অপেক্ষায় আছে। এ নিয়ে কিছু বলুন।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় দেশের নৌপথ সংরক্ষণের কাজ করে। এখন যদি নৌপথই না থাকে তাহলে সংরক্ষণ করব কী? আমার মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএর রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী নদী চিহ্নিত করাও আমাদের কাজ। সে অনুযায়ী দেশের ৫০০ নদ-নদী চিহ্নিত করার একটি প্রকল্প নিয়েছি। সিএস ম্যাপ অনুযায়ী প্রত্যেক উপজেলার ম্যাপগুলো যুক্ত করে নদীর সীমানা চিহ্নিত করা হবে। যদি নদীর জায়গায় কোনো বাড়িঘর থাকে তা ভেঙে দিয়ে খনন করা হবে। সেটা যা-ই থাকুক না কেন নদী খনন করতেই হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মানুষের শরীরের শিরা-উপশিরা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, দেশের জন্য নদীও সে রকম গুরুত্বপূর্ণ। রক্তপ্রবাহ বন্ধ হলে যেমন মানুষ বাঁচে না, তেমনি নদী ভরাট হয়ে গেলে দেশও মরুভূমি হয়ে যাবে।
এনআরসিসি নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আইনের খসড়া তৈরি করেছে। সংস্থাটি নদী দখল ও দূষণ রোধে বিচারিক ক্ষমতা চাইছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
নদী রক্ষা কমিশনের বিচারিক বা নির্বাহী ক্ষমতা চাওয়ার আইনত কোনো সুযোগ নেই। এনআরসিসি একটি কমিশন। নির্বাহী কিংবা জুডিশিয়াল কোনো ক্ষমতা চাওয়ার এখতিয়ার তার নেই। নদী রক্ষা কমিশনের কাজ হলো দেশের নদ-নদী রক্ষায় সুপারিশ করবে। সে সুপারিশ অনুযায়ী মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য সংস্থা অ্যাকশন (পদক্ষেপ) নেবে। অ্যাকশনে যাওয়ার জন্য কমিশন গঠন করা হয়নি, আইনত সে সুযোগও নেই।