ক্যাম্পাসে গানের দল

‘‌সবাই গাইবে নিজের সুরে কার-বা দেশ, কীই-বা দাম’

মেহেদী মামুন

গান গাইছেন অবান্তর ব্যান্ডের শিল্পী নূর-ই-নাজনীন, সঙ্গে ব্যান্ড অবান্তর ছবি: অবান্তর

সংস্কৃতির রাজধানীখ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সবুজ ও নৈসর্গিক দৃশ্যের পাশাপাশি আরেকটি বিষয় চোখে পড়ার মতো। সেটি হলো এর মুক্ত সংস্কৃতির চর্চা। সন্ধ্যা কিংবা মধ্যরাত হোক এখানে চোখে পড়বে কয়েকজন শিক্ষার্থী গেয়ে চলছেন। তাদের এসব নিয়মিত আড্ডা হয়ে ওঠে গানের সঙ্গে প্রাণের আড্ডা। সময় পেলেই অন্য শিক্ষার্থীরাও উপভোগ করেন এ আড্ডা। জাকসু ভবন, পুরনো ট্রান্সপোর্ট চত্বর, বটতলা এবং মুরাদ চত্বরে এক কাপ চায়ের সঙ্গে এসব আড্ডা অনেকেই পরবর্তী জীবনে মিস করেন। তবে এসব আড্ডা আরো চাঙ্গা হয়ে ওঠে যখন এগুলোয় থাকেন অবান্তর-এর মতো ব্যান্ডের সদস্যরা। 

এই ব্যান্ডের বর্তমান প্রধান ও প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য নূর-ই-নাজনীন। নাজনীন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। ব্যান্ড প্রতিষ্ঠার শুরুটা কেমন ছিল জানতে চাইলে বলেন, ‘২০১৫ সালে সারা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা চলার সময় বিভিন্ন ঘটনা তাকে ভাবিয়ে তোলে। এ সময় নাজনীনসহ আরো কয়েকজন মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ব্যান্ড “‍অবান্তর”।’  

এ ব্যান্ডের বেশ কয়েকটি গান থাকলেও ‘বেণীমাধব’ ও ‘ঘোর’ জনপ্রিয় গানগুলোর দুটি। বেণীমাধব গানের কিছু ভাবনা নাজনীন নিয়েছেন হুমায়ুন আহমেদ, কবি জয় গোস্বামী ও কবি শঙ্খ ঘোষ থেকে। তার সঙ্গে নাজনীনের কিছু কথার সমন্বয়ে কথা ও সুর করেছেন তিনি। আগুন পাখির গান শীর্ষক একটি মিক্সড অ্যালবামে অবান্তর’র গান ‘ঘোর’ রিলিজ হয়েছে। সব স্ট্রিমিং প্লাটফর্মে এর ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। 

নামকরণ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন ফিলিস্তিনে যুদ্ধ চলছে। সেখানে নারী-শিশুরা মারা যাচ্ছে। এ নিয়ে কথা বললে কিছু মানুষ আছে যারা বলবে নিজেরা খেয়েপরে বাঁচতে পারি না সেখানে ফিলিস্তিনের চিন্তা তো অবান্তর বা অপ্রাসঙ্গিক। কারো কাছে একটি কুকুরের চিন্তা করা অবান্তর। শীতকালে গাছের পাতা ঝরে পড়ার বিষয় আবার কারো কাছে অবান্তর। অবান্তর এসব বিষয় নিয়ে কাজ করি বিধায় ব্যান্ডের নাম ‘অবান্তর’।

প্রতিষ্ঠার সময় কয়েকজন নিয়ে প্রতিষ্ঠা হলেও এখন গানের দলে নাজনীন ছাড়া আরো রয়েছেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান মোহাম্মদ আসিফ, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের মুনতাসির অর্পণ। এছাড়া ক্যাম্পাসের বাইরের দু-একজনও তাদের সঙ্গে রয়েছেন। 

ব্যান্ডের সদস্য হাসান মোহাম্মদ আসিফ বলেন, ‘আমরা একটি সুন্দর পৃথিবী চাই। যুদ্ধ-বিগ্রহ চাই না। সবার জন্য মুক্ত পৃথিবীর ধারণা থেকে আমরা বলি আমাদের গান যে কেউ যেকোনো সুরে গাইতে পারেন যেমনটা রবীন্দ্রনাথ করেছেন। এমনকি সামনে রিলিজ হবে এমন একটি গানে আমরা রেখেছি “‍‌তোমার আমার এই পৃথিবীর একটা স্বপ্ন একটা গান/সবাই গাইবে নিজের সুরে কার-বা দেশ, কীই-বা দাম”।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন