জরায়ুমুখ ক্যান্সার

৩০-৫৫ বছর বয়সী নারীদের বেশি হয়

অধ্যাপক ডা. সাহানা পারভীন

প্রাণঘাতী জরায়ুমুখ ক্যান্সার নিয়ে আমাদের দেশে যথেষ্ট অসচেতনতা রয়েছে। বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদেহের যেকোনো অঙ্গ নিয়ে কথা বলাই যেখানে ট্যাবু, সেখানে প্রধানতম অঙ্গটি নিয়ে পর্যালোচনা করা তো রীতিমতো অস্বস্তিকর। এ সংস্কার আর সংকোচের শিকার হয়ে একসময় ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হন আমাদের নারীরা। তবে এখন সময় পাল্টেছে। মানুষ দিন দিন সচেতন হয়ে উঠছে। সুন্দর জীবনযাপনের নিশ্চয়তায় আমাদের নারীরাও এগিয়ে আসছেন। 

যে বয়সী নারীদের জরায়ুমুখ ক্যান্সার বেশি হয়

জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রাপ্তবয়স্ক হলে হয় বলে কেউ কেউ মনে করতে পারেন। কিন্তু ব্যাপারটি মোটেই তা নয়। এ ক্যান্সার হতে পারে যেকোনো বয়সেই। তবে সাধারণত ৩০-৫৫ বছর বয়সী নারীদের বেশি হয়ে থাকে।

জরায়ুমুখ ক্যান্সারের লক্ষণগুলো

সঙ্গমকালে রক্তপাত হওয়া ও অসহনীয় ব্যথা।

দুটি মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলের মধ্যবর্তী সময়ে কিংবা মেনোপজ হয়ে যাওয়ার পরও যোনি থেকে রক্তপাত হওয়া।

তলপেটে ধারাবাহিক যন্ত্রণা।

যোনি থেকে এমন কিছু বের হওয়া যা স্বাভাবিক নয়।

ঘন ঘন মূত্রত্যাগ।

জরায়ুমুখ ক্যান্সারের কারণ

জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসকে (এইচপিভি)। তবে কিছু কারণ রয়েছে যেগুলো এ রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যেমন— 

অনিরাপদ যৌনমিলন ও একাধিক যৌনসঙ্গী 

বাল্যবিবাহ

অল্প বয়সে সন্তান ধারণ

ঘন ঘন সন্তান হওয়া

অপরিচ্ছন্নতা

দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন

প্রতিরোধে করণীয়

জরায়ুমুখ ক্যান্সার থেকে বাঁচার জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং করা জরুরি। নিয়মিত স্ক্রিনিং করা হলে প্রথম দিকেই এ ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়, ফলে সহজে চিকিৎসা করাও সম্ভব হয়। কিন্তু বেশি দেরি হয়ে গেলে দেহের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে, তখন মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী হয়ে যায়।

এ ক্যান্সার শনাক্তের জন্য সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হচ্ছে প্যাপস্মেয়ার টেস্ট। ২০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিটি নারীকে প্রতি তিন বছরে অন্তত একবার এ টেস্টটি করানো দরকার। এছাড়া অনিরাপদ যৌনমিলন, বাল্যবিবাহ, অল্প বয়সে সন্তানধারণ, অধিক সন্তান জন্মদান প্রভৃতি থেকে বিরত থাকা জরুরি। ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে পরিহার করতে হবে। 

বর্তমানে আমাদের দেশেই বিশ্বমানের ক্যান্সার চিকিৎসা হয়ে থাকে। ফলে কোনো অসংগতি দেখা দিলে সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত সংশ্লিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।  

লেখক: সিনিয়র কনসালট্যান্ট

গাইনি অনকোলজি, ল্যাবএইড ক্যানসার হসপিটাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন