অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ সত্ত্বেও ঘাটতি কাটছে না যুক্তরাষ্ট্রের

বণিক বার্তা ডেস্ক

সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ সত্ত্বেও ঘাটতি কাটিয়ে ওঠেনি যুক্তরাষ্ট্র। উচ্চসুদ প্রদান ও নিম্নকর সংগ্রহের কারণে দেশটির জাতীয় ব্যয়ে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। একদিকে শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার মতো খাতগুলোয় মহামারী-পরবর্তী সময়ে সরকারের ব্যয় বেড়েছে, বিপরীতে মূল্যস্ফীতির জেরে কমেছে কর ও করবহির্ভূত আয়। ঘাটতির ঊর্ধ্বগতি ফেডারেল রিজার্ভের পরবর্তী সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট।

২০২০ ও ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মহামারী মোকাবেলার কারণে ব্যয় বাড়িয়েছে। ফলে ২০২২ সালে ঘাটতি ৩ ট্রিলিয়ন থেকে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ঘাটতি মহামারীপূর্ব অবস্থায় ফেরত যাওয়ার বদলে পুনরায় ঊর্ধ্বমুখী গতি লাভ করে। বাজেট বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, চলতি অর্থবছরে ঘাটতি ২ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে। 

অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে চলছে ঘাটতির পরিমাণ। বিশেষ করে যখন অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের লক্ষণ স্পষ্ট হচ্ছে। ফলে মুদ্রানীতি জন্ম দিয়েছে সমালোচনা। জুনে বাইডেন প্রশাসন ঋণসীমা বিষয়ক নীতি অনুমোদন করে। কিন্তু বর্তমান ঘাটতি বাইডেন প্রশাসনের জন্য নেতিবাচক সংযুক্তি হিসেবে থেকে যাচ্ছে। ২০১৭ সালে রিপাবলিকানরা প্রায় ৩ ট্রিলিয়নের বেশি কর কমানোর নীতি অনুমোদন করেছিল। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় তা বাড়তি চাপ হিসেবেই থাকবে। ফেডারেল বাজেট কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্ক গোল্ডওয়েন বলেছেন, ‘‌২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ঘাটতির পরিমাণ দ্বিগুণে উন্নীত হবে, যা পরবর্তী সময়ে ফেডের নীতিমালাকে প্রভাবিত করতে পারে। যদিও আমি প্রত্যাশা করি তেমনটা যেন না হয়।’

সাধারণত অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ হতে থাকলে ঘাটতি সংকুচিত হতে শুরু করে। কারণ ব্যবসা ও ভোক্তারা করের ক্ষেত্রে আরো বেশি ব্যয় করতে থাকে। সরকারেরও খুব বেশি ব্যয় করার প্রয়োজন পড়ে না চাকরি হারানো ব্যক্তিদের পেছনে। বিপরীত দিকে অর্থনীতি সংকুচিত হতে থাকলে বাড়তে থাকে ঘাটতি। কিন্তু বর্তমান সময়ে তা ঘটছে না। ওবামা প্রশাসনের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ জ্যাসন ফারম্যান দাবি করেছেন, বর্তমান ঘাটতি কেবল বৈশ্বিক মন্দার সময়গুলোর তুলনায় সামান্য নিচে রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক অচলাবস্থা কিংবা করোনাভাইরাসের সময়ে ঘাটতি দেখা গেছে। এখনকার ঘাটতির পরিমাণ সেসব সময়ের সঙ্গে তুলনীয়।

২০২২ সালের আগস্টের পর থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত সরকার ৬ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, বিপরীতে হাতে এসেছে ৪ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। অনেকটা নাটকীয়ভাবেই বেড়েছে ঘাটতির পরিমাণ। কভিড-১৯ চলে গেলেও ব্যয়ের সূচক ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। গত বছরে পুঁজিবাজার সংকোচনের মধ্যে পড়েছিল। ২০২১ সালে ক্রিপ্টোকারেন্সির দৌরাত্ম্য ও সুদহার বৃদ্ধির কারণে আবাসন খাতের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা সরকারের জন্য বিপুল কর নিয়ে এসেছে। কিন্তু শিগগিরই উল্লেখযোগ্য পতন ঘটে কর খাতে। মূল্যস্ফীতির কারণেও অনেক আমেরিকানদের জন্য করের বাধ্যবাধকতা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে প্রভাব পড়েছে সরকারের তহবিলে।

এদিকে বিভিন্ন ব্যয় খাত সামনে এসেছে সরকারের জন্য। সামাজিক নিরাপত্তাবিষয়ক ব্যয় বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির এ সময়ে সরকার আরো বেশি ব্যয় করছে শিক্ষা, দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য খাতে। ২০২২ সালে ইনফ্লাশন রিডাকশন অ্যাক্ট অনুযায়ী কিংবা অবকাঠামো আইনের মতো আইনের হাত ধরেও সরকারের তহবিল থেকে খসেছে বিপুল অর্থ। ফলে সার্বিকভাবে বেড়েছে সরকারের আয় ও ব্যয়ের ব্যবধান। 

আর্জেন্টিনায় ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় সরকার নাগরিকদের ওপর অর্থ বাইরে নেয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করে দেয়। অন্যান্য দেশও মুদ্রা বিনিময়ের সময় বিশেষভাবে মাথায় রাখে ঘাটতির বিষয়ে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে লক্ষণগুলো দৃশ্যমান হয়নি। ওবামা প্রশাসনের সময়ে ঘাটতির সংকট সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অর্থনীতিবিদরা সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন, উচ্চঘাটতি দিন শেষে উচ্চ সুদহারের দিকে ঠেলে দেয়। তার প্রভাব পড়তে পারে বেসরকারি বিনিয়োগ, ঋণ গ্রহণ, মর্টগেজের ওপর। অন্যদিকে, ঘাটতি বেশি হলে পরবর্তী অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা নীতিনির্ধারকদের জন্য আরো বেশি কঠিন হয়ে পড়বে।

তবে বিষয়টিকে রাজনৈতিক হিসেবে দেখছেন হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র মাইকেল কিকুকাওয়া। ঘাটতি থেকে উত্তরণের জন্য ধনাঢ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর কর বাড়ানোর ইশারা দেন তিনি। রিপাবলিকানদের সমালোচনা করে তিনি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‌বাইডেন প্রশাসন ঘাটতি কমানোর দিকে জোর দিয়েছে এবং তা সমাধান করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন