আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব

মেহেরপুরে আম-লিচু উৎপাদন কমার আশঙ্কা চাষীদের

মাহাবুব আলম, মেহেরপুর

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নানা প্রভাব মোকাবেলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। বর্ষা মৌসুমে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। বর্ষা আসছে দেরিতে, যাচ্ছেও দেরিতে। দেশে তাপপ্রবাহের হার দিন দিন বাড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে মৌসুমি ফল উৎপাদনে। চলতি মৌসুমে টানা তাপপ্রবাহে মেহেরপুরে আম ও লিচুর অধিকাংশ গুটিই ঝরে গেছে। অন্য বছরের তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষীরা।

বাগান মালিকরা বলছেন, অন্য বছরের তুলনায় এমনিতেই মুকুল এসেছে কম। যতটুকু আম ও লিচুর গুটি মৌসুমের শুরুতে দেখা যায়, তাও আবার তাপপ্রবাহে ঝরে পড়েছে। গাছে স্প্রে ও সেচ দিয়েও সুফল মিলছে না। চলতি মৌসুমে ফলন বির্পযয়ের কারণে দেশীয় এ দুটি ফলের দাম বেড়ে যাবে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, বাগানে নিয়মিত সেচ ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

মেহেরপুর কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় চলতি মৌসুমে আমের বাগান রয়েছে ২ হাজার ৩২৩ হেক্টর। লিচুর বাগান রয়েছে ৭১২ হেক্টরে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন বাড়িতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আম-লিচুর বাগান। মেহেরপুরের হিমসাগর, ল্যাংড়া, বোম্বাই, ফজলিসহ গুটি জাতের আমের সুখ্যাতি রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত আম রফতানি করা হয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। অন্যদিকে বোম্বাই, চায়না ও গুটিসহ বিভিন্ন জাতের লিচুরও চাষ হয় এ জেলায়। তবে বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব পড়েছে আম ও লিচুর উৎপাদনে।

আম ও লিচুচাষী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার পাঁচ বিঘা আমের বাগান রয়েছে। দেড় বিঘা জমিতে লিচু বাগান আছে। আমবাগানের বেশির ভাগ গাছেই আম আসেনি। অল্প কিছু আম ধরলেও তাপপ্রবাহে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বোরো মৌসুম হওয়ায় ধানের জমিতে সেচ দেয়ার পর বাগানগুলোয় পানি দিতে চাচ্ছেন না সেচ পাম্প মালিকরা। যদিও অল্প সেচ দেয়ার সুযোগ হচ্ছে। কিন্তু তাপপ্রবাহের কারণে তা কাজে আসছে না। লিচুর অবস্থাও করুণ। পর্যাপ্ত লিচু এলেও গুটি থাকছে না গাছে। ঝরে পড়ছে, আবার কোনো কোনো গাছে শুকিয়ে যাচ্ছে লিচু। গত বছরেও মানুষ অল্প দামে আম ও লিচু খেতে পেরেছে। কিন্তু চলতি মৌসুমে ফলন বিপর্যয়ের কারণে এ দুটি ফলের দাম বাড়তে পারে।’

গাংনী উপজেলার আম ও লিচু ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রতি মৌসুমে আমি ১৫ বিঘা আমবাগান ক্রয় করি। সেটা মকুল আসার আগেই। সেচ, সার ও স্প্রে করার পর দেখি মুকুল আসেনি। লোকসানের মুখে পড়েছি এবার। এছাড়া লিচুর বাগান ক্রয় করা ছিল প্রায় পাঁচ বিঘা। সেখানে কিছু ফল এলেও অতিরিক্ত তাপে গুটি ঝরে পড়ছে। আবার কিছু বাগানে গাছেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে লিচু।’

এ ব্যাপারে মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মেহেরপুর ফল উৎপাদনের দিক দিয়ে উন্নত জেলা। অনেক আগে থেকে এখানে আম, লিচু, কাঁঠাল ও কলা চাষ ভালো হয়। এ বছর জেলায় ২ হাজার ৩২৩ হেক্টর আম ও ৭১২ হেক্টর লিচুর বাগান রয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে প্রথম দিকে প্রায় ৩০ শতাংশ গাছে আমের মুকুল আসেনি। হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি এক বছর ধরে আবার অন্য বছর ধরে না। হয়তো এ কারণে এবার ভালো মকুল আসেনি। তবে লিচু কিছুটা ভালো হলেও গুটি ঝরে যাচ্ছে। গাছে এখন যে ফল আছে, সেটা টিকিয়ে রাখার জন্য চাষীদের ঘন ঘন স্প্রে, নিয়মিত সেচসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’ 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন