ব্যানবেইসের গবেষণা

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

শফিকুল ইসলাম

দেশে বেসরকারি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন ডিভাইস সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ৮৫ শতাংশ সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া রয়েছে। ৪০ শতাংশের বেশি বেসরকারি কলেজ ও মাদ্রাসায় ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ নেই। ৪০ শতাংশ বেসরকারি কলেজ ও ৫৩ শতাংশ মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের সুযোগ-সুবিধা নেই। 

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ‘‌স্টাডি অন স্টাটাস অব হায়ার সেকেন্ডারি টিচার্স ক্যাপাসিটি ইন ইউজিং আইসিটি ফর লার্নিং’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা যায়, বেসরকারি কলেজে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ, পেনড্রাইভ ও স্মার্টফোন ৫০ শতাংশ, মাইক্রোফোন ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ, ইন্টারেক্টিভ হোয়াইট বোর্ড ব্যবহার করে ২১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ডিভিডি ও সিডি ব্যবহার করে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষকদের মধ্যে অনলাইন মাধ্যম যেমন জুম, গুগল মিট, ফেসবুক লাইভ এবং প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইট ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে বেসরকারি কলেজগুলো। 

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে সবচেয়ে এগিয়ে সরকারি কলেজগুলো। ডেস্কটপ, ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে ৮৫ দশমিক ৭ শতাংশ সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পেনড্রাইভ ব্যবহার করে ৭১ দশমিক ৪ শতাংশ, স্মার্টফোন ও মাইক্রোফোন ৬১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ইন্টারেক্টিভ হোয়াইট বোর্ড ব্যবহার করে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। 

সরকারি-বেসরকারি কলেজের বাইরে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে সবচেয়ে পিছিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা। এসব মাদ্রাসায় ডেস্কটপ, ল্যাপটপ ব্যবহার করে ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ। পেনড্রাইভ ও স্মার্টফোন ব্যবহার করে ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সরকারি কলেজে কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে ৮১ শতাংশ, ডিজিটাল ল্যাব ৭৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট রয়েছে ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ। বেসরকারি কলেজে কম্পিউটার ল্যাব ৭৮ শতাংশ, ডিজিটাল ল্যাব ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ। 

২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত ময়মনসিংহের ভালুকা ত্রিশাল মৈত্রী ডিগ্রি কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই হাজার। সেখানে আইসিটি ল্যাব থাকলেও কম্পিউটারের সংখ্যা মাত্র ১৭। এইচএসসি পর্যায়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক। কলেজে এইচএসসি পর্যায়ে প্রথম বর্ষে ন্যূনতম দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ক্লাস করেন। ১৭টি কম্পিউটার দিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে হাতেকলমে ব্যবহারিক ক্লাস সম্পন্ন করা যায় না বলে বেশির ভাগ ক্লাসই ম্যানুয়ালি করা হয়। 

এ কলেজের আইসিটি শিক্ষক প্রভাষক জুলহাস উদ্দিন বলেন, ‘‌আমাদের ল্যাবে ল্যাপটপ মাত্র ১৭টি। আরো বড় রুম ও ল্যাপটপ দরকার। বিদ্যুৎ থাকে না। বিকল্প বিদ্যুৎ হলে আরো ভালো হয়। ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেও তা খুবই ধীরগতির। গ্রামের কলেজে আমরা নানা সংকটের মুখে পাঠদান পরিচালনা করি।’ 

শিক্ষাবিদরা বলছেন, প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য ‘‌রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়নের মূল শিরোনাম ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ। কিন্তু আইসিটির বিকাশ এবং শিক্ষায় এর ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে শিখন-শেখানো পদ্ধতির কার্যকর পরিবর্তনের জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পিছিয়ে রয়েছে। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের অপূর্ণতা। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক, বিশিষ্ট কম্পিউটার বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌আমরা যে ডিজিটাল বা স্মার্ট বাংলাদেশ বলি এটি একটি স্লোগান। তথ্যপ্রযুক্তির যে জয়জয়কার সেটা বুঝতে হলে আমরা যদি ভারতের দিকে তাকাই যে তারা কী করেছে, তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে তারা কত ডলার আয় করেছে আর আমরা কত ডলার আয় করেছি। এখান থেকে বোঝা যাবে আমাদের অবস্থান। ভারত কিন্তু বলছে না ওরা ডিজিটাল ইন্ডিয়া। তারা বিশ্ব বাণিজ্য থেকে যা আয় করেছে বাংলাদেশ তার ধারেকাছেও নেই। ভারতের সঙ্গে তুলনা করতে হবে আমরা ডিজিটালি কতটা অগ্রসর হলাম। স্লোগান, চিৎকার দিয়ে কোনো কাজ হবে না। আমরা আসলে সেই অবস্থানে নেই।’  

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌ট্রেনার সংকট রয়েছে। আমরা ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। বেসরকারি পর্যায়ে আমরা ট্রেনিং দিচ্ছি। আগে চিত্র আরো খারাপ ছিল। এখন প্রতিনিয়ত বাড়ছে। একজন শিক্ষককে তৈরি না করলে সে আইসিটি ব্যবহারে অভ্যস্ত হবেন না। এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন