জাতিসংঘের সবুজ জলবায়ু তহবিলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ টিআইবির

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের কাঠামোর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত সবুজ জলবায়ু তহবিল বা জিসিএফ। নিজেদের নীতিমালার অস্পষ্টতা ও স্বচ্ছতার সুযোগ নিয়ে বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি, আইডিবি, এডিবি ও ইবিআরডির মতো বিত্তবান আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকেই বেশি অর্থায়ন করছে জিসিএফ। এসব সংস্থা অনুদান নয়, ঋণ পাওয়ার উপযুক্ত। কিন্তু এসব সংস্থাকে ঋণ না দিয়ে দেয়া হচ্ছে অনুদান। একই সঙ্গে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের জাতীয় সংস্থাগুলোকে অনুদানের বদলে দেয়া হচ্ছে ঋণ। 

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিসিএফের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি থাকলেও জাতিসংঘের আরেক সংস্থা ইউএনডিপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অমীমাংসিত রেখে বিতর্কিতভাবে পুনরায় স্বীকৃতি প্রদান এবং সর্বোচ্চ ৩৮টি প্রকল্প সংস্থাটির পক্ষে অনুমোদন করে। এসব ঘটনা উল্লেখ করে জাতিসংঘের সবুজ জলবায়ু তহবিলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে সংস্থাটির কার্যালয়ে ‘সবুজ জলবায়ু তহবিলে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশের অভিগম্যতা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপনা করেন জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনবিষয়ক রিসার্চ ফেলো নেওয়াজুল মওলা এবং রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মো. সহিদুল ইসলাম। এতে বক্তব্য রাখেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। 

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অভিগম্যতার ক্ষেত্রে জিসিএফ শুরু থেকেই এমন শর্ত আরোপ করে রেখেছে, যা উন্নয়নশীল দেশকে প্রায় নিষিদ্ধ করার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এ তহবিলের সুফল যাদের পাওয়ার কথা, সেই সব ক্ষতিগ্রস্ত দেশের কাছে পর্যাপ্ত ও প্রত্যাশিত মাত্রায় সহায়তা পৌঁছেনি। তাছাড়া নির্ধারিত যে অর্থছাড় প্রক্রিয়া আছে, সেটিও মানছে না জিসিএফ। নির্ধারিত যে সময়ের মধ্যে প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ হস্তান্তর করার কথা, সেটিও তারা করতে পারছে না। অন্যদিকে মূলনীতি অনুযায়ী যে প্রকল্পগুলো জিসিএফ অনুমোদন করবে সেগুলো দেশের উদ্যোগে, দেশীয় প্রেক্ষিত বিবেচনা করে, দেশীয় প্রতিষ্ঠান দ্বারা বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এই কান্ট্রি ওনারশিপ নীতিমালা প্রতিপালন তো দূরের কথা বরং তা বরাবর উপেক্ষিত হয়েছে। তাছাড়া এ নীতিমালায় অস্পষ্টতা ও স্বচ্ছতার ঘাটতিও রয়েছে। এর সুযোগে আমরা দেখছি, বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি, আইডিবি, এডিবি ও ইবিআরডির মতো বিত্তবান আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকেই জিসিএফ বেশি অর্থায়ন করছে, যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য এবং তহবিল প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্যের পরিপন্থী। সর্বোপরি জিসিএফ ক্রমেই জবাবদিহিহীন হয়ে উঠছে—এমন মন্তব্য করা মোটেও অত্যুক্তি হবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘জলবায়ু সংকটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে অনুদানের পরিবর্তে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়ার নীতি কার্যকর করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে জিসিএফ বৈষম্যমূলকভাবে শুধু বেশি সহায়তা দিচ্ছে তা-ই নয়, এর সিংহভাগ দিচ্ছে অনুদান হিসেবে, অথচ উন্নয়নশীল দেশের জাতীয় সংস্থাগুলোকে ঋণ বেশি দেয়া হচ্ছে। যেখানে হওয়ার কথা ছিল ঠিক উল্টো। এসব আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রত্যক্ষভাবে সংকটাপন্ন দেশগুলোর ওপর জিসিএফ আরো ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। অনুদানভিত্তিক কার্যক্রম থেকে সরে গিয়ে ক্রমেই মুনাফাভিত্তিক কার্যক্রমের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কেননা উন্নত দেশগুলোর অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও তাদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত তহবিল সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে জিসিএফ। এ ব্যর্থতাকে ঢাকার জন্য একদিকে জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অভিগম্যতা সীমিতকরণ ও অন্যদিকে সুকৌশলে অতিরিক্ত ঋণের বোঝা আমাদের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে, যা অনৈতিক, বৈষম্যমূলক ও হতাশাব্যঞ্জক।’ 

টিআইবি আরো জানায়, বাংলাদেশের মতো দেশে অর্থায়নের ক্ষেত্রে জিসিএফ দুর্নীতি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সক্ষমতার ঘাটতির কথা বললেও ক্ষেত্রবিশেষে নিজেরাই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। বাংলাদেশে দুর্নীতি একটি সমস্যা। 

এটি আছে, এটি নিরসনে কাজও হচ্ছে। কিন্তু এ অজুহাতে অনুদানকে ঋণ হিসেবে দেয়া আর জলবায়ু তহবিল বন্ধ রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অন্যদিকে ইউএনডিপির জিসিএফ সম্পর্কিত কাজে দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এবং চলমান ছয়টি প্রকল্পে মনিটরিং চলমান থাকা অবস্থায় তাদের অ্যাক্রেডিটেশন নবায়ন করা হয়েছে। অর্থাৎ দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার অঙ্গীকার ভঙ্গ করে দুর্নীতির সহায়ক ভূমিকা পালন করছে জিসিএফ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন