জামালপুরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে ইউনাইটেড ট্রাস্ট

ইউনাইটেড ট্রাস্টের অফিস

জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার মালঞ্চ এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবতার সেবায় নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ইউনাইটেড ট্রাস্ট। আধুনিক শিক্ষা ও ইসলামিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে ইউনাইটেড ট্রাস্ট নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। শিক্ষা খাতের পাশাপাশি এই  ট্রাস্টের অধীনে স্বাস্থ্য, সমাজসেবা, দারিদ্র্য বিমোচনসহ নানা কার্যক্রম চালু হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।  

শিক্ষা: জামালপুরের মেলান্দহের মালঞ্চ এলাকায় এই ট্রাস্টের অধীনে গড়ে উঠেছে এমএ রশীদ মেমোরিয়াল একাডেমি। এ একাডেমিতে নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৪২০ জন ক্ষুদে শিক্ষার্থী আধুনিক ও সৃজনশীল শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠছে। এমএ রশীদ মেমোরিয়াল একাডেমি ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি কার্যক্রম শুরু করে। এখানে রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য দৃষ্টিনন্দন শ্রেণীকক্ষ, সুবিশাল লাইব্রেরি ও কম্পিউটার ল্যাব।

জেলায় শিক্ষার আলো ছড়াতে ইউনাইটেড ট্রাস্টের সহযোগিতায় মালঞ্চ এলাকায় দুটি মাদ্রাসা ও দুটি উচ্চবিদ্যালয় তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছে। মাদ্রাসা দুটির মধ্যে একটি হলো আল-আমিন জমিরিয়া মহিলা ফাজিল (স্নাতক) মাদ্রাসা। এ মাদ্রাসায় বর্তমানে ৯৪৪ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে দৃষ্টিনন্দন পাঁচতলা একটি ছাত্রী নিবাস। এছাড়া ইউনাইটেড ট্রাস্টের সহযোগিতায় মালঞ্চ এলাকায় উচ্চশিক্ষার জন্য আরো একটি মাদ্রাসা পরিচালিত হচ্ছে। বিশাল এলাকা নিয়ে স্থাপিত এ মাদ্রাসার নাম মালঞ্চ আল-আমিন জমিরিয়া কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসা। মাদ্রাসাটিতে বর্তমানে ৮৭০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। অন্যদিকে ইউনাইটেড ট্রাস্টের সহযোগিতায় মালঞ্চ আব্দুল গফুর উচ্চবিদ্যালয় ও বালুআটা এমএ রশীদ উচ্চবিদ্যালয়টিও তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিদ্যালয় দুটিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৮৯ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।

স্বাস্থ্যসেবা: শিক্ষার পাশাপাশি এলাকায় নানা সেবামূলক কর্মকাণ্ড করে চলেছে ইউনাইটেড ট্রাস্ট। এ ট্রাস্টের অধীনে মালঞ্চে হতদরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে স্থাপিত হয়েছে আলহাজ এমএ রশীদ মা, শিশু ও চক্ষু হাসপাতাল।

মেলান্দহের মালঞ্চ এলাকায় জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ মহাসড়কের পাশে এ হাসপাতাল অবস্থিত। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দরিদ্র রোগীরা নাম মাত্র ফি দিয়ে এ হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারছেন। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত রোগী ছুটে আসেন এ হাসপাতালে। অত্যাধুনিক ও উন্নত প্যাথলজিক্যাল ল্যাব সমৃদ্ধ এ হাসপাতালে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে রোগীদের স্বল্প খরচে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়। 

মেলান্দহ উপজেলার ফুলকোঁচা এলাকা থেকে চোখের চিকিৎসা করাতে আসা আব্দুস সামাদ (৭৫) এ হাসপাতালের উন্নত চিকিৎসাসেবা পেয়ে বেশ খুশি। তিনি জানান, আগে চোখের চিকিৎসা করাতে তিনি ছুটে যেতেন সদর উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে। ওই সব ক্লিনিকে অর্থের পাশাপাশি সময়ও ব্যয় হতো অনেক বেশি। গ্রাম পর্যায়ে হাতের নাগালে এমন একটি হাসপাতাল পেয়ে তিনি বেশ খুশি।

হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা ইসলামপুর উপজেলার পচাবহলা গ্রামের শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন (৬৫), একই উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের হাড়গিলা গ্রামের আশরাফ আলী (৫০), মেলান্দহ উপজেলার পাঁচরপাড়া গ্রামের গোলেছা বেগম (৬৫), একই উপজেলার রেখিরপাড়া গ্রামের রহিমা খাতুন (৪৩), জামালপুর সদর উপজেলার হাটচন্দ্র গ্রামের জিয়াউল (৫০) জানান হাসপাতালের উন্নত চিকিৎসাসেবায় তারা সন্তুষ্ট ও উপকৃত। সম্প্রতি রোগীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এ হাসপাতালকে আরো সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এমএ রশীদ প্রবীণ নিবাস: বৃদ্ধ বয়সে অনেক পরিবারেই বাবা-মায়েরা গুরুত্ব হারান। নানা কারণে তাদের জীবন দুঃখে ভরে ওঠে। অনেক সন্তান তাদের মা-বাবার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। আর দরিদ্র পরিবারে এসবের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংকট আরো জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে। এমন বৃদ্ধ মা-বাবার কষ্টের কথা বিবেচেনা করে ইউনাইটেড ট্রাস্ট মেলান্দহের মালঞ্চতে গড়ে তুলেছে নয়নাভিরাম, পরিচ্ছন্ন, নানা আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন একটি প্রবীণ নিবাস। বর্তমানে এ প্রবীণ নিবাসে ৮০ জন প্রবীণ বাস করছেন। 

প্রবীণ নিবাসের সুপারিনটেনডেন্ট আলহাজ মো. আবুবকর সিদ্দিক বলেন, ‘‌এ প্রবীণ নিবাসে আশ্রয় পাওয়া নারী-পুরুষরা তাদের পরিবারের সম্মতি নিয়েই এখানে থাকছেন।’ প্রবীণ নিবাসে বসবাসরত জামালপুর পৌর শহর কম্পপুর এলাকার মো. নওশের আলী (৭০), মেলান্দহের বাঘাডোবা এলাকার আব্দুল হাই (৬৫), একই উপজেলার গোজামানিকা এলাকার মোজ্জামেল হোসেন (৭০), পূর্ব মালঞ্চ গ্রামের জমিলা বেগম (৬৫), মাহফুজা (৭৫), তেঘুরিয়া গ্রামের আহাতুন (৮০), সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের খোদেজা বেগম (৮০) জানান, প্রবীণ নিবাসে তাদের যত্ন নেয়া হয়। নিয়মিতভাবে তাদের খাবার ও ওষুধ দেয়া হয়। প্রবীণ নিবাসে প্রবীণরা পরিবারের কষ্ট ভুলে আনন্দঘন পরিবেশে অন্যদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পেরে বেশ খুশি বলে জানান। প্রবীণদের মাঝে উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি নিয়মিতভাবে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করানো হয়।  এছাড়া প্রবীণ নিবাসের এক পাশে রয়েছে পিতা-মাতাহীন অনাথ অসহায় এতিমদের লালন-পালন করার জন্য একটি এতিমখানা। এ এতিমখানায় অবস্থানকারী এতিমদের উন্নত লেখাপড়ার পাশাপাশি নানা ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে, যাতে তারা আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে উঠতে পারে।

দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা: দুস্থ ও হতদরিদ্র বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য ইউনাইটেড ট্রাস্ট বিনাসুদে ঋণ বিতরণ, গরু-ছাগলসহ নানা সুবিধার ব্যবস্থাও করে থাকেন। ট্রাস্ট অভ্যন্তরীণ বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের (হস্তশিল্প, কাটিং ও সেলাই, গবাদিপশু পালন) মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য স্থানীয়দের উৎসাহিত করছে, যার মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় এক হাজার যুবক ও যুবনারী নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন