সংবাদ সম্মেলনে ভোক্তা

মূল্যস্ফীতি কমানোর খুব বেশি উদ্যোগ প্রস্তাবিত বাজেটে নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি: বণিক বার্তা

করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো, সার্বজনীন পেনশন চালু, সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, স্থানীয় শিল্প সুরক্ষার মতো অনেকগুলো ইতিবাচক দিক থাকলেও প্রস্তাবিত বাজেট ভোক্তাবান্ধব হয়নি বলে মন্তব্য করেছে ভলান্টারি কনজুমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটি (ভোক্তা)।

ভোক্তার নির্বাহী পরিচালক খলিলুর রহমান সজল বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর খুব বেশি উদ্যোগ প্রস্তাবিত বাজেটে নেই। মাসের পর মাস মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশেরও বেশি, ডলারের দামও ক্রমাগত বাড়ছে। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বললেও সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ ও সংকট উত্তরণের ব্যবস্থা খুবই কম গুরুত্ব পেয়েছে। যা আমাদের দারুণভাবে হতাশ করেছে।

আরো বলেন, দুই লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট মূল্যস্ফীতিকে আরো উস্কে দেবে এবং ভোক্তা সাধারণের ওপর দৈনন্দিন জীবনযাপনে চাপ বাড়াবে।

প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে জানাতে আজ মঙ্গলবার (৬ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে খলিলুর রহমান বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের মতো ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও ঘাটতির বড় অংশ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেয়া হলে তা মূল্যস্ফীতিকে আরো বাড়িয়ে দিবে। আর বাজেট ঘাটতির টাকা ব্যাংক থেকে নিলে সেই টাকা বিনিয়োগের বাইরে চলে যাবে। ব্যাংকের টাকা ব্যবসায় বিনিয়োগ হলে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং দেশের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করব, সরকার এ বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেবে।

কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে বলা হয়, গত অর্থবছর পর্যন্ত কালো টাকা সাদা করার বিভিন্ন সুযোগ বাজেটে ছিল। এবার প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। এছাড়া একদিকে বলা হচ্ছে বার্ষিক আয় সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত, অন্যদিকে বলা হচ্ছে যাদের রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা যাদের আছে, তাদের দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। এটা পারস্পরিক সাংঘর্ষিক। এতে করে করযোগ্য আয় সীমার নিচে যাদের আয় তাদের ওপর একটি অতিরিক্ত চাপ পড়বে।

সরকারি ব্যয় বাড়ানোর বিষয়ে বলা হয়, চলমান সংকটের মধ্যে সরকারি ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ১৫ শতাংশ। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটকালে এই ব্যয় বৃদ্ধি যৌক্তিক নয়। দেশের রফতানি হার ও রেমিট্যান্সের পরিমাণ বৃদ্ধি, পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

নির্বাহী পরিচালক বলেন, পড়ালেখার অন্যতম অনুষঙ্গ কলমের ওপর কর আরোপ ভোক্তার জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সিলিন্ডার তৈরির দুটি কাঁচামাল ইস্পাতের পাত ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির ক্ষেত্রে কর ছাড় সুবিধা তুলে নেয়া হয়েছে এবং এলপিজি সিলিন্ডারের ভ্যাট সাত শতাংশ করায় গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়বে। কর প্রদানে নিট সম্পদের সীমা বাড়ানোর মাধ্যমে ধনীদের বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। সারচার্জের সীমা না বাড়িয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের স্বস্তি দেয়ার জন্য কর ব্যবস্থায় বিশেষ ছাড় দেয়া যেতো।

এ সময় প্রস্তাবিত বাজেটে ৯ দফা সুপারিশ প্রস্তাব করে ভোক্তা। দাবিগুলো হলো- বাজার সিন্ডিকেট মোকাবেলায় রূপরেখা তৈরি করে বাজেট প্রস্তাবনায় সংযোজন করতে হবে। মূল্যস্ফীতি কমানোর বিষয়ে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দিতে হবে। করযোগ্য আয় না থাকার পরও ন্যূনতম দুই হাজার টাকা আয়কর দেয়ার বৈষম্যমূলক বিধান প্রত্যাহার করতে হবে। পড়ালেখার অন্যতম অনুষঙ্গ কলমের ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহার করতে হবে। চলমান ডলার সংকট থেকে উত্তরণের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দিতে হবে।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না রাখার বিষয়টি স্পষ্ট না করা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। তাই বাজেটে বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটে সরকারি ব্যয় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। এই ব্যয়ের প্রাক্কলন আরো কমিয়ে আনতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডারের দাম যাতে না বাড়ে সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। করদাতার সারচার্জ আরোপযোগ্য নিট সম্পদের সীমা না বাড়িয়ে তিন কোটি টাকা রাখতে হবে।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ভোক্তার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর, ভাইস-চেয়ারম্যান সানোয়ার হোসেন নওরোজ, পরিচালক (অর্থ) লুৎফর রহমান লিটন প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন